স্টাফ রিপোর্টার :
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের খালপার গ্রামে সুরমা নদীর তীর থেকে উদ্ধার হওয়া সবজি বিক্রেতা রুহেল মিয়ার লাশের খুনিদের এক মাসেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের দাবী- কিছুদিনের মধ্যেই এ খুনের আসল রহস্য উন্মোচন হবে এবং খুনিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে পুলিশ এ মামলার রহস্য উদঘাটন ও খুনিদের গ্রেফতার না করায় গত ৩০ জুলাই নিহত রুহেল মিয়ার বড় ভাই মামলার বাদী সোহেল মিয়া সিলেট র্যাব-৯ এর সদর দপ্তরে ভাই হত্যার ন্যায়বিচার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। এতে তিনি ৪ জনের নাম উল্লেখ করেন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, আমার ভাই সবজি বিক্রেতা রুহেল মিয়াকে হত্যার পূর্বে কারা তাকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে যায়। এ বিষয়টি নিয়ে গত ১০ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন মামলার বাদী সোহেল মিয়া। পরবর্তীতে তিনি খালপার ও সদরখলা গ্রামে গিয়ে ভাই হত্যার কারণ খুঁজতে গিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে ভাই হত্যার সাথে নেপথ্যে থাকা একই পরিবারের ৪ জন জড়িত থাকার প্রমাণ পান। গত ৫ জুলাই সকালে দক্ষিণ সুরমার খালপার গ্রামের অনেকেই রুহেলকে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন। কিন্তু পুলিশের তদন্তে এসবের কিছুই বেরিয়ে আসছে না। রুহেলের খুনিদের ধামাপাচা দেয়ার জন্য খালপার গ্রামের অনেকেই এখন মুখ খুলছেন না।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জের পশ্চিম হাজীপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল সোবহানের পুত্র রুহেল মিয়া (৪০) দীর্ঘদিন থেকে সিলেট শহরের সবজি বিক্রি করে আসছেন। ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে নিহত রুহেল মিয়া ছিলেন তৃতীয়। সবজি বিক্রির সুবাদে দক্ষিণ সুরমার খালপার গ্রামের এক গৃহবধূর সাথে রুহেলের পরকীয়া প্রেম শুরু হয়। প্রায় সময়ই রুহেল ওই গৃহবধূর সাথে দেখা ও মোবাইল ফোনে কথাও বলতেন। এরই জের ধরে রুহেলকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা পায়। এ ঘটনায় গত ৮ জুলাই নিহত রুহেলের বড় ভাই সোহেল মিয়া বাদি হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
মামলার বাদি সোহেল মিয়া জানান, আমার ভাই রুহেলকে ফোনে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরের অধিকাংশ জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ বিষয়ে গ্রামের অনেকেই আমাদেরকে প্রথমে বলেছিলেন। পরে তাদের মুখ রহস্যজনক কারণে বন্ধ হয়ে যায়। নারীঘটিত ঘটনার জের ধরে রুহেলকে হত্যা করার বিষয়টি এখনও গ্রামে চাউর হয়ে আছে। পরে ভাই হত্যার যথযাথ বিচারের দাবিতে সিলেট র্যাব-৯’র কাছে গত ৩০ জুলাই অভিযোগ পত্র নং-(২০৯) দাখিল করেছি। ভাই হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের নাম দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার সাথে আশিক মিয়াসহ তার ৩ ছেলে জড়িত।
মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা দক্ষিণ সুরমা থানার এসআই প্রণব রায় জানান, ওসির নির্দেশে তিনি গত ১২ জুলাই রুহেল মিয়া হত্যা মামলাটি এসআই রিপটন পুরকায়স্থের কাছে স্থানান্তর করেছেন। এখন এ মামলাটি তিনিই তদন্ত করছেন।
রুহেল হত্যা মামলাটি এখন কোন পর্যায়ে আছে মুঠোফোনে এমন খবর জানতে চাইলে মামলার বর্তমান (দ্বিতীয়) তদন্তকারী কর্মকর্তা দক্ষিণ সুরমা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপটন পুরকায়স্থ জানান, মামলাটির তদন্তের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এ খুনের আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, মামলার বাদি রুহেল মিয়ার বড় ভাই সোহেল মিয়াকে আমরাই খোঁজে বের করেছি।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন-উর-রশিদের কাছে মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, কিছুদিনের মধ্যেই এ খুনের আসল রহস্য উন্মোচন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুলাই সকাল ৯ টার দিকে মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের খালপার গ্রামে সুরমা নদীর তীর থেকে রুহেল মিয়া নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় পুলিশ উদ্ধার হওয়া লাশের কাছ থেকে একটি মোবাইলফোন পায় এবং সেটি জব্দ করা হয়। ওই মোবাইলফোন থেকে তার পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ।