মাহবুব আহমদ খান, বিয়ানীবাজার থেকে জানিয়েছেন : বিয়ানীবাজারে বন্যাদুর্গত এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ মোট ৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। বন্যার পানিতে বিদ্যালয় তলিয়ে যাওয়ায় এবং যাতায়াত রাস্তা ও মাঠ ডুবে যাওয়ায় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় উপজেলার ১৫৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৩টি সরকারি পাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া বিদ্যালয় যাতায়াত সড়ক ও মাঠ তলিয়ে গেছে আরও ২৭টির। যার কারণে ৪০টি বিদ্যালয় সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে সেগুলোতে বন্যার কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম রয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৩৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে রবিবার পর্যন্ত ৫টি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়টি মাদ্রাসাও বন্ধ রয়েছে। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে সেখানে বন্যার প্রভাবে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি একেবারে কম।
গত সোমবার থেকে কুশিয়ারা নদীর ৫টি অংশের ডাইক ভেঙ্গে তলিয়ে যায় উপজেলার বিস্তির্ণ এলাকা। এ পর্যন্ত ৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হওয়ায় তলিয়ে গেছে দুর্গত এলাকার বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট। প্রায় ১৫টি হাটবাজার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গত শনিবার সোনাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে নদী তীরবর্তী শানেশ্বর বাজার ও আশপাশ এলাকায়। দুর্গত এলাকায় গত শনিবার থেকে ত্রাণ বিতরণ করছে উপজেলা প্রশাসন। শনিবার উপজেলার দুবাগ ও মুড়িয়া ইউনিয়নসহ বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়। সরকারি ত্রাণের বিতরণের পাশাপাশি এবার বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ না হওয়ায় দুর্গত এলাকায় হাহাকার দেখা দিয়েছে।
উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুম মিয়া বলেন, বিদ্যালয়ে ভেতরে পানি ও রাস্তা ঘাট এবং মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অঘোষিত বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি নেমে গেলে যথারীতি পাঠদান শুরু হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করার খবর আমাদের কাছে রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য নিদের্শ দেয়া আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু: আসাদুজ্জামান বলেন, দুর্গত এলাকা শনিবার থেকে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। আমরা যোগাযোগ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় অনেক এলাকায় বিকল্প বাহন ব্যবহার করতে হচ্ছে। তিনি বন্যা পীড়িত এলাকারবাসীর সহযোগিতায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে প্রতিদিনই সিলেটের বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা বন্যা প্লাবিত হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে দুই উপজেলায় পানিবন্দী লোকজনের সংখ্যা প্রায় তির লক্ষাধিকের উপরে রয়েছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে দুই উপজেলার ১৮৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে দেড় শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যা প্লাবিত হওয়ায় উপজেলার প্রায় ৫১ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠ দান বন্ধ হয়ে পরেছে। এছাড়াও বালাগঞ্জের তয়রুননেচ্ছা, ওসমানীনগরের এম ইলিয়াস আলী ও রহমতপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ আরও প্রায় ৩০/৪০টি মাধ্যামিক ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যা প্লাবিত হয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্লাবিত বিদ্যালয় গুলোর কর্মরত শিক্ষকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পানি সাঁতরিয়ে বিদ্যালয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শূন্যতে থাকায় পানির মধ্যে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন শিক্ষকরা। আবার একাধিক বন্যা প্লাবিত বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষকরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ে অলিখিত ছুটি ঘোষণা করে কর্মরত সকল শিক্ষকরাও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। তবে বন্যা প্লাবিত বিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে শিক্ষকসহ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা গত এক সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করেও শিক্ষকরা কোন সৎ উত্তর পাচ্ছেন না। এছাড়া উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন মহলের দোহাই দিয়ে বন্যা প্লাবিত বিদ্যালয় গুলোর ব্যাপারে দায়সারা ভাব প্রকাশ করে নানা ছুটিসহ অযুহাতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর কর্মরত শিক্ষকরা। বন্যা প্লাবিতদের নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের এয়ন কর্মকান্ডে দুই উপজেলার শিক্ষক সমাজসহ অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক নেতা সন্তোশ চক্রবর্তীসহ দুই উপজেলার একাধিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। বালাগঞ্জ-ওসমানীনগরে ১৮৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ইতিমধ্যে শতাধিক বিদ্যালয়ের পুরোপুরিভাবে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আরও অর্ধশতাধিকের উপরে বিদ্যালয়গুলোর চতুর্দিক জলমগ্ন হয়ে হাঁটুর উপরে পানি বিদ্যমান। এ অবস্থায় দুই উপজেলার ৫১ হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। ওসমানীনগরের ভাগলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিউলি বেগম, রহমতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমাইয়া আক্তার বালাগঞ্জের মনোহরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্ষেতকি রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, তাদের কর্মরত বিদ্যালয় গুলোতে ইতিমধ্যে শ্রেণী কক্ষে পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের যোগাযোগ রাস্তাসহ চতুর্দিক তিন/চার ফুট পরিমাণ পানি বিদ্যমান রয়েছে। বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে।
উপজেলার গাভুরটিকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিতা রানী ধর, দক্ষিণ কালনিচর বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রোখিয়া বেগম, বালাগঞ্জের নলজুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসিদ আলী বলেন, আমাদের কর্মরত বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা, যোগাযোগ রাস্তাসহ চতুর দিক জলমগ্ন হয়ে হাটুঁর উপরে পানি বিদ্যমান রয়েছে। এ অবস্থায় আমরা পানি সাঁতরিয়ে বিদ্যালয়ে গেলেও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না। প্লাবিত বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে, ওসমানীনগরের ভাগলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলারাই সরুজ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাভুরটিকি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জায়পরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিজ করনসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুরিকোনা প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহজালাল, প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ কালনিচর প্রাথমিক বিদ্যালয়, লামাতাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুন্দিকলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, নুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, মজলিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোলেমান খান প্রাথমিক বিদ্যালয়, আইলাকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, খছরুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলীপুর-২ প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালাগঞ্জের মনোহরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মকবেলপুর বিদ্যালয়, মাখরচি বিদ্যালয় হামছাপুর বিদ্যায়লয়, খরছাপার বিদ্যালয়, নলজুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গৌরীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেগারকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সারশ পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তেগরিয়া, প্রাথমিক বিদ্যালয়, আতাশন প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৃত জালালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইছাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব ডেকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীনাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিত্তনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম গৌরিনাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যায়লয়,কলিগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দেড় শতাধিক বিদ্যালয় এখন বন্যায় প্লাবিত হয়ে আছে।
দুই উপজেলার দায়িত্বে থাকা বালাগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রকিব ভুঁইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি ইতিমধ্যে কতগুলো বিদ্যালয় বন্যা প্লাবিত হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনও উনার কাছে নেই জানিয়ে বলেন, বন্যা প্লাবিত বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষকার্থীরা না আসলেও কর্মরত শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে আসার জন্য বলেছি। এ সময় দুই উপজেলার শিক্ষকদের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষকরাই মহিলা ফলে মহিলা শিক্ষকরা কিভাবে পানি সাঁতরিয়ে বিদ্যালয়ে যাবে প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে এ ব্যাপারে পরবর্তী দিক নিদের্শনা দেয়া হবে।
দুই উপজেলার দায়িত্বে থাকা বালাগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে দুই উপজেলার বন্যা প্লাবিত বিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নরুল ইসলাম বলেন, আমি ছুটিতে আছি, তাই বন্যা প্লাবিত বিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে আমি অবগত নই। বিষয়টি নিয়ে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম এর সাথে কথা বলার জন্য প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু গতকাল সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ইতিমধ্যে উপেজলার অধিকাংশ এলাকা বন্যা প্লাবিত হয়ে আছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মনিটরিং সেল গঠনপূর্বক সার্বিক দিকে নজর রাখা হচ্ছে। বন্যা প্লাবিত বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের যাহাতে ক্ষতি না হয় সে জন্য প্রয়োজনে বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলেছি।
বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ সিংহ বলেন, বালাগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ প্রশাসনিক ভবনসহ গোটা উপজেলাই এখন বন্যা প্লাবিত। এ অবস্থায় বানবাসী মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার জন্য ঊর্ধ্বতন মহলে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।
জকিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : জকিগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে অকাল বন্যার কারণে মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বিরশ্রী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পানি বন্দি। উপজেলার কাজী আব্দুল খালিক উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানির কারণে ক্লাস নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শ্রেণীকক্ষে পানি ডুকে বিদ্যালয় প্লাবিত। জকিগঞ্জের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু বন্যার মাঝে পরীক্ষা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বিরশ্রী এলাকার লোকজন জানান, রাধার বাজার খাল দিয়ে নদীর পানি আসার কারণেই কাজী খালিক উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। কাজি খালিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর উদ্দীন জানান, বন্যার পানির কারণে আগামী রবি ও সোমবার পাঠদান স্থগিত থাকবে। এরপর যথারীতি ক্লাস নেয়া হবে। বন্যা পরিস্থিতিতে আসন্ন অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা নিয়ে তিনি চিন্তিত বলে জানান।
অন্যদিকে, টানা বর্ষণে ও পাহাড়ী ঢলে জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের কুশিয়ারা-সুরমা নদীতে ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে বন্যা আতংকে ভুগছে দুটি উপজেলার লোকজন। জকিগঞ্জের অনেক এলাকায় বন্যার ও বৃষ্টির পানিতে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কৃষকরা ফসল নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। গত এক সপ্তাহের টানা ভারী বর্ষনে ও পাহাড়ী ঢলে সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে হু-হু করে পানি বাড়ছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়ী বাঁধ নদীতে বিলিন হয়ে লোকালয়ে পানি আসতে পারে। মারাত্মক ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় বালু ভর্তি বস্তা ফেলে এলাকা রক্ষার চেরা করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় রাত জেগে বেড়ি বাঁধ পাহারও দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কুশিয়ারা নদীর অনেক এলাকার বেড়ি বাঁধ ঝুকিপূর্ণ। বিশেষ করে জকিগঞ্জ পৌর এলাকার কেছরী, ছয়লেন, মাইজকান্দি, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ছবড়িয়া, মানিকপুর, বাখরশাল, লালোগ্রাম সেনাপতিরচক, রারাই, সুলতানপুর ইউনিয়নের গঙ্গাজল, বক্তিপুর, ইছাপুর, সহিদাবাদ, খাদিমান, পিল্লাকন্দি, আমলশীদ, বিরশ্রী ইউপির বড়চালিয়া, পিয়াইপুর, বারজনী, উজিরপুর, খলাছড়া ইউপির লোহারমহল, সুনাপুর, পশ্চিম ও পূর্ব সুপ্রাকান্দি, বেউর। বারহাল ইউনিয়নের বারইগ্রাম, চককোনাগ্রাম, উত্তর খিলোগ্রাম, নোয়াগ্রাম, শাহগলী বাজার, বারঠাকুরী ইউপির উত্তরকুল, লাড়িগ্রাম, বিন্নাপাড়া, মুন্সিপাড়া, বলরামেরচক, মিয়াগুল, ছালেহপুর, কসকনপুর ইউনিয়নের ইনামতি, বিয়াবাইল, আজিগঞ্জ, মানিকপুর ইউপির বাল্লা, রঘুরচক, মানিকপুর সহ অন্তত ৩৫ টি গ্রামের শতাধিক স্পট সুরমা কুশিয়ারা নদীর প্রবল ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে।
কানাইঘাটের দিঘিরপার ইউনিয়নের দর্পনগর এলাকার গিয়ে দেখা গেছে, সুরমা নদীর ভাঙ্গনে বেঁড়ী বাঁধ নদীতেই বিলিন হয়ে এখন বসতবাড়ী ফসলি জমি গ্রাসের চেষ্ঠা করছে। নদীতে বিলিন হতে পারে বসতবাড়ী, ফসলী জমি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নদীর পানি বেড়ে বন্যা হওয়ার আশংকা রয়েছে। এতে এলাকার মানুষের মাঝে চরম আতংক দেখা দিয়েছে। আব্দুল কাদির নামের এক কৃষক বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি হচ্ছে দেখে মনে আতংক দেখা দিয়েছে। নদীর বেড়ী বাঁধ বিলিন হওয়ায় আমরা বিপাকে। বন্যা হলে ফসল যাবে। বাঁচবো কেমনে।
এ ব্যাপারে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কমকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, সীমান্ত নদী সুরমা-কুশিয়ারার ভাঙ্গন প্রতিরোধ অধিক জরুরী। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গন কবলিত কিছু এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সীমিত আকারে কিছু স্থানে মেরামতও করা হয়েছে। জকিগঞ্জের বেশ কয়েকটি গ্রামের ভয়াবহ ভাঙ্গনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : বেলাগাঁও, কন্টিনালা, রাবার ড্যাম ও পূর্ববেলাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এসব জায়গায় থামে নৌকা। এসবস্থানে বিভিন্ন বয়সী শতাধিক লোকজন জড়ো হয়ে আছে। এরমধ্যে নারী পুরুষ ও শিশু রয়েছে। যদি জানতে পারে কেউ ত্রাণ নিয়ে এসেছে তাহলে সবাই হুড়মুড়ি খেয়ে এগিয়ে আসে। সবার লক্ষ্য লাইনে আগে দাঁড়ানো। এমন দৃশ্য চোখে পড়ে হাকালুকি হাওরে যাবার পথে কন্টিনালা নদীর উভয় পাড়ে। এছাড়াও হাওর তীরের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল, তেঘরিঘাট, সাদিপুর এলাকায়ও একই দৃশ্য চোখে পড়ে।
সরেজমিন হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ও জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নে গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, শনিবার দুপুর পর্যন্ত হাওর এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হাজার হাজার পরিবার দিনাতিপাত করছে অনাহারে অর্ধাহারে। অকাল বন্যায় শতভাগ বোরো ফসল হারানো মানুষ প্রায় ৪ মাস যাবত পানির সাথে লড়াই করছে। যেনতেন পানি নয় অথৈই পানি। ভয়াবহ বন্যা। বন্যার এই রূপকে মানুষ ভাষায় প্রকাশ করতে পারছে না।
ভয়াবহ বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে হাওর পারে শুক্রবার মসজিদে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। বিশেষ মোনাজাত অব্যাহত থাকবে প্রাকৃতিক এ্ই দুর্যোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। শনিবার থেকে স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ঈদের ছুটির পর ক্লাস শুরু হলেও হাওরপাড়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা যায়নি। রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪-৫ ফুট পানির নিচে।
ভুকশিমইল গ্রামের কুমুদিনী বিশ^াস, নুর উদ্দিন, পাখি মিয়া, মনসুর, এমদাদ, জামাল, বিনয় ও হেকিম জানান, বাড়িঘরে ৩-৪ ফুট পানি। ঘরের চুলাও পানিতে ডুবে গেছে। তাই রান্না বান্না করতে পারছিনা। তাই অনেকটা না খেয়ে আছি। বাড়িঘরে পানি উঠায় তারা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। শনিবার পর্যন্ত কোন সরকারি ত্রাণ পাইনি। ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, বেসরকারিভাবে কে কিভাবে ত্রাণ দেয় তা আমাদের কেউ জানায়, কেউ জানায় না। সরকারি ত্রাণ বলতে ৮ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ পেয়েছি। আজ (শনিবার) সেগুলো উত্তোলন করবো। এতে পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে দিলে সর্বোচ্চ ৮শ পরিবারকে দেয়া যাবে। কিন্তু ভুকশিমইল ইউনিয়ন শতভাগ বন্যা কবলিত। এই ইউনিয়নের ২ হাজারেরও বেশি পরিবার রয়েছে। ফলে এই ত্রাণ চাহিদার অর্ধেকও মিটবে না।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌঃ মোঃ গোলাম রাব্বি জানান, প্রতিদিনই বন্যার নোট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। বন্যার জন্য বিশেষ বরাদ্দের কথাও উল্লেখ থাকে। সরকারি বরাদ্ধ না ফেলে কিছু বলার নেই।