বড়লেখা থেকে সংবাদদাতা :
বড়লেখায় ভারি বর্ষণে সৃষ্ট টানা বন্যায় শতাধিক গ্রাম পানিবন্দী রয়েছে। গত কয়েকদিনে বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হওয়ায় এসব এলাকার বন্যা দুর্গত প্রায় ২৫ হাজার মানুষের হাহাকার বেড়েই চলছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ না পাওয়ায় অসহায় মানুষের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে বড়লেখা উপজেলার নিম্নাঞ্চল। বন্যা স্থায়ী হওয়ায় শিশুসহ অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন নানা ধরণের পানিবাহিত রোগে। খাদ্যশূন্য গৃহপালিত পশু গরু, মহিষ, ছাগল মারা যাচ্ছে নির্বিচারে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের দশঘরি, ভোলারকান্দি, রাঙ্গিনগর, বাড্ডা, ঝগড়ি, কঠালপুর, চরকোণা, তেরাকুড়ি, কাছলিয়া, বাগেরকোণা, ব্রাষ্মণের চক, উত্তর বাঘমারা, পাটনা গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার মানুষকে অশ্র“সিক্ত দেখা যায়।
ইউপি চেয়ারম্যান নছিব আলী জানান, সুজানগর ইউনিয়নের প্রায় ৪ হাজার মানুষ বন্যা দুর্গত আছেন। আজিমগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ছিদ্দেক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৩৯টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ঈদের আগেরদিন হুইপ ও জেলা পরিষদ সদস্যের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ঈদ সামগ্রী দেয়া হয়। গতকাল (বৃহস্পতিবার) ত্রাণের চাল দেয়া হয়েছে কিন্ত তা খুবই সীমিত। পানির জন্য এখনো বিতরণ করা হয়নি। এ সময় চেয়ারম্যান অভিযোগের সাথে বলেন, পর্যাপ্ত ত্রাণ না আসলেও যা আসে তা স্থানীয় সরকারদলীয় নেতারা প্রভাবিত করেন, তাদের মনোনিত দুর্গত নয় এমন অনেককেই ত্রাণের চাল দিতে চাপ প্রয়োগ করেন।
উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস জানান, হাকালুকি, ইসলামপুর, আহমদপুর, খুটাউরা, গগড়া, দ্বিতীয়ার্ধী, মুর্শিদাবাদকুড়া, কলারতলি পার, তেলিতেলী গ্রামসহ বেশ কয়টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের প্রায় ৯০ ভাগ বাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। ২ টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩৮ টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় এমপি ও হুইপ মোঃ শাহাব উদ্দিন ও জেলা পরিষদ সদস্য শহীদুল আলম শিমুল তাদের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ঈদ সামগ্রী ও আর্থিক সাহায্য করেছেন। বর্তমানে ত্রাণের জন্য মানুষের আহাজরি শুনতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরকারি যে ত্রাণ এসেছে তা পর্যাপ্ত নয়।
এদিকে দাসের বাজার ইউনিয়নের বাগিরপার, দক্ষিণ বাগিরপার, মধ্য টুকা, মহারাণী টুকা, চানঁপুর, অহিরকুঞ্জি, পানিশাইল, ধর্মদেহী, তোলারকুড়ি, কোদালি, ধলিরপার, নেরাকান্দি, মাইজমঝুরি, মালিশ্রী গ্রাম সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউপি সদস্য কৌশিক বিশ্বাস ও মহিলা সদস্য সঞ্জিতা রাণী দাস জানান, বাগিরপার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেখানে কোন সরকারি বা বেসরকারি অনুদান কিছুই পৌছেনি। মধ্য টুকা ও মহারাণী টুকার প্রায় ১০ টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। পানির জন্য ঘর থেকে বের হতে পারছে না তারা। আশ্রয়কেন্দ্র খোলার কোন সরকারি উদ্দোগ নেয়া হচ্ছেনা। পানিতে ঘরগুলো নরম হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে এসব পরিবারের প্রায় শতাধিক মানুষ। এ সময় ত্রাণ ও আশ্রয়ের উদ্দ্যোগ নিতে সরকারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
এছাড়া বর্ণি ও দক্ষিণভাগ উত্তরের শেওরাডিগা গ্রামসহ আরো কয়েকটি গ্রাম প¬াবিত হয়েছে। বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথে এসব গ্রামের দুর্গতদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বন্যায় প¬াবিত গ্রামের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে আশংকা করা হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ছোট পরিসরে বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম বড়লেখা উপজেলা শাখার উদ্যোগে বন্যা দুর্গত ৮৫০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জামায়াত নেতা খিজির আহমেদ। কিন্তু অন্যতম রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) উপজেলার বন্যা দূর্গত কোথাও কোন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেনি বলে জানা যায়। উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ মুঠোফোনে জানান, বন্যা দুর্গত এলাকায় দলের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করার উদ্দ্যোগ নেয়া হচ্ছে।