স্টাফ রিপোর্টার :
৭ দফা দাবি বাস্থবায়নের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ১২ ঘণ্টার মাথায় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। বিকেলে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাদুল হাসানের সভাপতিত্বে চার জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ কর্মকর্তা ও পরিবহন শ্রমিক নেতাদের এক বৈঠকে শ্রমিকদের ৭ দফা দাবি বাস্থবায়নের আশ্বাস দেয়ায় সন্ধ্যায় তারা পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন।
১২ ঘণ্টার মাথায় সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত ॥ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দাবী বাস্তবায়নের আশ্বাস
রাবার শ্রমিক সংঘের সভাপতি কুর্মী এক দিনের রিমান্ডে
স্টাফ রিপোর্টার :
গ্রেফতার হওয়া মাসুক হত্যা মামলায় মালনীছড়া রাবার শ্রমিক সংঘের সভাপতি ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক জয় কুর্মী (৩২)কে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। রিমান্ডকৃত আসামী জয় কুর্মী এয়ারপোর্ট থানার মালনীছড়া মাঝলেনের মৃত নগেন কুর্মীর পুত্র।
টিলাগড়ে গ্রেফতার হওয়া ৩ ডাকাতের বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন
স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর শিবগঞ্জ সেনপাড়া ও সাদিপুরে দুই প্রবাসীর বাসায় ডাকাতির ঘটনায় টিলাগড়ে গ্রেফতার হওয়া ৩ ডাকাতকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। গত সোমবার তাদেরকে আদালতে হাজির করে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন- ফোকন, সোহেল ও জাহেদ মিয়া। গত রবিবার রাতে তাদেরকে টিলাগড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ডাকাতির সময় ব্যবহৃত হাফপ্যান্টও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তারাপুর চা বাগান এলাকায় ছিনতাইকারীর হামলায় আহত রিক্সাচালককে ঢাকায় প্রেরণ
স্টাফ রিপোর্টার :
শহরতলীর তারাপুর চা বাগান এলাকায় ছিনতাইকারীর হামলায় এক রিক্সা চালক গুরুতর আহত হয়েছে। প্রথমে তাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় গত সোমবার রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
লালদীঘিরপারে কম্পিউটার দোকানে হামলা ভাংচুর, ক্যাশ লুট
স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর লালদীঘিরপারের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুর করেছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় ৭৪১ নং একটিভ কম্পিউটার দোকানে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
দোকানের মালিক আবুল কালাম তাপাদার জানান, ঘটনার সময় তিনি বাইরে ছিলেন দোকানে কর্মচারী সুলতান আহমদকে মারধর করে সন্ত্রাসীরা দোকানের কম্পিউটার, স্ক্যানার, প্রিন্টার ভাংচুর করে নগদ ৭৩ হাজার ৩শ’ টাকা সন্ত্রাসীরা নিয়ে য়ায়। এ
দরগা গেইটে টাকা আত্মসাতের ঘটনা ॥ টাকা ফেরত দেবার লিখিত অঙ্গীকারে ছাড়া পেলেন নিপা
স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর দরগা গেইটস্থ রাজ ম্যানশনের দোতলায় সিলেট প্রফেশনাল টেকনিক্যাল ও কম্পিউটার ইন্সটিটিউটের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত সোমবার বিকেলে ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোছাঃ নিপাকে উদ্ধার করে পুলিশ থানায় নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ১০ ঘণ্টার মাথায় তাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মোচ্ছাঃ নিপা তাদের টাকা ফেরত দিয়ে দেবেন এমন লিখিত দিলে কোতোয়ালী থানা পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।
সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র পত্রিকার বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ ॥ নির্ধারিত নয় ইচ্ছেমাফিক ভাড়া আদায় করছে সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা
স্টাফ রিপোর্টার :
১১ নভেম্বর থেকে নির্ধারিত ভাড়ায় সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল করবে জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরও কোথাও নির্ধারিত ভাড়ায় অটোরিক্সা সিএনজি চলাচল করেনি।
গতকাল নগরীর কোর্ট পয়েন্ট, সুরমা মাকের্ট পয়েন্ট, বন্দরবাজার,
ফসলি জমি বালিতে ভরাট, মাছের বংশ ধ্বংস হচ্ছে এ-বিপর্যয় ঠেকাবে কে ?
॥ নেছার আহমদ নেছার ॥
সুনামগঞ্জ জেলার ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা সমূহের মধ্যে যেমন (হাওর, নদী, খাল, বিল) সেচ যন্ত্র, কারেন্টের জালের অবাধে ব্যবহার এবং কীটনাশক ঔষধের ব্যবহারজনিত কারণে মাছের বংশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ৮০% ভাগ মাছের এখন পাওয়া দুষ্কর।
অপরদিকে অতিবৃষ্টিতে ও পাহাড়ি ঢলের কারণে মারাত্মকভাবে বালি ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে এবং পলিমাটির দ্বারা কৃষি জমি ও হাওর খাল বিল ভরাটের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দিন দিন বেড়েই চলছে। ধান মাছের জন্যে একদিনের প্রসিদ্ধ এই অঞ্চলে এখন ধানের জমি তরিতরকারীর ফসলী জমি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ধানের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।
অপরদিকে কীটনাশকের অতি ব্যবহার ও অবাধে কারেন্টের জালের ব্যবহারে মাছের বংশ ধ্বংস হচ্ছে। মাছের বংশ ধ্বংস হওয়ার আরও একটি কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হচ্ছে যে বালি ও পলিতে দিন দিন হাওর, নদী, খাল, বিল, ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে মাছের আবাসন সংকট দেখা দিয়েছে। তাই মাছ আগের মত নেই। অনেক মাছের বংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। আরও অনেক প্রজাতির মাছ ধ্বংস হওয়ার পথে। মাছ খেয়ে অভ্যস্ত অনেক বয়স্ক লোক মাছ খেতে চাইলে-তাকে সেই মাছ খাওয়ানো সম্ভব হয় না। কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না অনেক মাছের অস্তিত্ব।
দিন দিন প্রাকৃতিক এই বিপর্যয় নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। অবাধে শুষ্ক মৌসুমে সেচ যন্ত্র চালিয়ে বিল, খাল শুকিয়ে মাছ ধরার ফলে সেখানে মাছ থাকে না। তাই মাছের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে না। সেচ যন্ত্র বন্ধ করতে কারো উদ্যোগ কখনই চোখে পড়ে না। অপর দিকে অবাধে কারেন্টের জাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোন ভূমিকা নেই বললেই চলে। প্রশাসন অবৈধ অর্থ লোভে এদের ব্যবহার অবাধ করে দিচ্ছে। ফলে কারেন্টের জালের অবাধ ব্যবহারে মাছের বংশ ধ্বংস হচ্ছে সেদিকে কারো খেয়াল নেই। সচেতন মানুষকে এ নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কথা বলতে শোনা যায়। কিন্তু প্রশাসন বা সচেতন মহলের দ্বারা এর কোন প্রতীকার ও পদক্ষেপ নিতে শুনা যায়নি। হাওরপারের সচেতন মানুষগুলো এক হলে এবং প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সেচ যন্ত্রের ব্যবহার ও কারেন্টের জালের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে ঢলের পানিতে আশংকাজনক ভাবে বালি ও পলি দ্বারা ভরাট প্রক্রিয়াটি বন্ধ করতে বা তার প্রতিকার করতে সচেতন নাগরিকের পাশাপাশি সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
যেমন যে সকল নালা খাল ও নদী দিয়ে ভারতের পাহাড় থেকে অবাধে বালি আসে সেই বালিগুলি যাতে করে ফসলি জমি ভরাট করে না দিতে পারে তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসাবে অর্থ খরচ করে বালি গুলি যাতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে জমায়েত হয়, সে ব্যবস্থা করতে পারে। জমায়েতকৃত বালি বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় স্থান ভেদে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে ফসলি জমির বালি ভরাট রোধ করতে পারে। পাহাড় থেকে অতি বৃষ্টিতে ঢলের সাথে বালি আসার খাল নদী গুলি চিহ্নিত করে কি ভাবে পদক্ষেপ নেয়া হলে সরকারের আয় হবে এবং কৃষকদের ফসলি জমি রক্ষা পাবে তার সময় উপযোগী বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া অতি আবশ্যক।
নতুবা দিন দিন সুনামগঞ্জ অঞ্চলের অধিকাংশ জমিই বালি দ্বারা ভরাট হয়ে যাবে। ধানের বা ফসলের উৎপাদন শক্তি হারিয়ে যাবে। কৃষকদের মধ্যে হাহাকার যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি জাতীয় উৎপাদন হ্রাস পাবে। জানা গেছে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার ধর্মপাশা, ছাতক থানার সীমান্ত পাহাড় থেকে ঢলের পানির সাথে বালি চলে আসার উৎস মুখগুলি চিহ্নিত করা প্রয়োজন। তারপর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তাহিরপুর উপজেলার প্রায় ২০টি ছড়ার মাধ্যমে বালি এসে ভরাট করছে ফসলি জমি। তেমনি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলারও প্রায় ১০/১২টি ছড়ার মাধ্যমে পাহাড় থেকে বালি ঢলের পানির সাথে অনাকাক্সিক্ষতভাবে চলে আসে। জিনারপুর ও ডলুড়া এলাকার নদী দিয়ে বেশী করে বালি এসে ফসলি জমি সহ বৃহৎ করছার হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে দিচ্ছে। সাথে করে পলি ও আসছে। পাহাড়ী ছড়ার সাথে সম্পৃক্ত সকল খাল বিল, হাওর গুলি বালিতে ভরাট হয় খুব বেশী। কেননা অতি বৃষ্টিতে পাহাড়ি পানি দ্রুত নেমে আসে বিরাট গর্জন করে ছড়া দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।
বালিগুলি প্রায়ই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফসলি জমিতে পড়ে থাকে। কিছু কিছু এলাকায় দেখা গেছে বালির চেয়ে পলি মাটির পরিমাণ বেশী হয়। সেখানে বালি ভরাট অনেক সময় ফসল উৎপাদনে ব্যঘাত সৃষ্টি করতে পারে না। ঠিকই ফসল জন্মে। যেখানে পাহাড়ি ঢলের ফলে শুধু বালির পরিমাণ বেশি এসে ফসলি জমিতে পড়ে, সেখানে ফসল হয়না। কাজেই সুনামগঞ্জে সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড় থেকে যে সকল ছড়া দিয়ে অবাধে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা গুলিতে বালি এসে ফসলি জমি নষ্ট করে দেয় তা চিহ্নিত করা জরুরী। এবং সময় উপযোগী বাস্তব পদক্ষেপ নিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এগিয়ে আসা অপরিহার্য। নতুবা একদিকে মাছের বংশ অপর দিকে বালি ভরাট কৃষকদের মধ্যে দিন দিন মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে। অনাগত কৃষি জীবন হবে ধ্বংস। হারিয়ে যাবে বিপুল পরিমাণ মাছের অস্তিত্ব, সংকটময় হবে কৃষকের জীবন।
মাদক সেবন ও পাচার : অন্ধকার জীবনে পথশিশু
আফতাব চৌধুরী
মাদকের বিষে ছেয়ে গেছে সিলেট নগরী। সর্বনাশা মাদকের ছোবলে যুবক, বয়স্কদের পাশাপাশি আসক্ত হয়ে পড়ছে নগরীর শত শত পথশিশু। এসব পথশিশু মাদক নির্ভর হয়ে চলে যাচ্ছে অন্ধকার জীবনে। এদের বেশিরভাগের বয়স ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে নেশার আসরে বয়স্কদের পাশাপাশি পথ শিশুরাও চলে আসছে এ লাইনে। গত কয়েকদিনে নগরীর বিভিন্ন বস্তি এবং রেললাইনসহ কয়েকটি এলাকায় সরজমিন এ চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে নগরীর রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় দিবা রাত্রির বেশির ভাগ সময় অসংখ্য পথশিশু নেশার আসরে ডুবে থাকে।
এদের থাকার কোনো জায়গা নাই। সারা দিন ষ্টেশনে থাকে। কাগজ কুড়িয়ে বা কোনখানে শ্রমবিক্রি করে পারিশ্রমিক হিসেবে যা পায় তা দিয়েই চলে এদের মাদক সেবন। আর এ সুযোগে এসব শিশুদের ব্যবহার করে গাঁজা, ফেনসিডিল, চোরাই মদসহ বিভিন্ন প্রকারের মাদক ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে মাদকের বিষ এসব শিশুদের জীবন কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে। অন্ধকার জগতে ঘুরপাক খাচ্ছে ভয়াবহ মাদকের ছোবলে আক্রান্ত ওইসব পথশিশুরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পথশিশুদের মধ্যে বেশিরভাগ প্রচলন রয়েছে মরণঘাতী নেশা ড্যান্ডি।
নগরীর বাসস্ট্যান্ড, রেলষ্টেশন ও বস্তিগুলোতে শিশুদের মাদক হিসেবে এটি নতুন সংযোজন। নগরীর ষ্টেশন রোডের পুরাতন রেলওয়ে ষ্টেশনের ফ্ল্যাটফর্ম ডিঙিয়ে ওয়াগনের পাশে নির্জন ঝোপের ধারে ড্যান্ডি আসক্ত একদল শিশুর সন্ধান পাওয়া যায়। জানা গেলো এখানে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী পথশিশুরা নেশা করে আসছে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠে পথশিশুদের ড্যান্টি টানার আসর। দেখা গেলো একদল শিশু বসে ঝিমোচ্ছে আর কেউ কেউ পলিথিনের ভেতর মুখ ঢুকিয়ে শ্বাস নিচ্ছে। নাম জিজ্ঞেস করতেই একে একে বলে উঠে-কাউসার, বিল্লাল, রাজু, আজমল, মনির, সেলিম, কবির।
তোমরা এখানে কি করছো ? প্রশ্ন শেষ না হতেই একজন চোখ বুজে জড়ানো গলায় বলে উঠে ড্যান্ডি বানাইয়া খাই, বুঝছেন? আর একজন বলে, বুঝে নাই মনে হয়। তাহলে আপনারে কই-এই বলে দলের একজন দেখাতে শুরু করলো ড্যান্ডি তৈরির কায়দা-কানুন।
ওদের কাছ থেকে জানা গেলো ড্যান্ডি খুব সহজলভ্য নেশা। জুতা জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহৃত বিশেষভাবে তৈরি আইকা গাম ড্যান্ডির প্রধান উপকরণ। কৌটা থেকে সামান্য আইকা গাম নিয়ে ছোট পলিথিন ব্যাগের ভেতরে লেপ্টে দেয়ার পর পলিথিনে ফুঁ দিয়ে ফুলিয়ে এর ভেতরে নাক মুখ ঢুকিয়ে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস নিলে মাথায় ঝিমুনি ধরে, নেশা হয়। পথশিশু সেলিম জানায়, এ নেশার খরচ কম, ড্যান্ডি খেলে ক্ষুধা লাগে না, মনে কোনো দুঃখ থাকে না। ছোট বেলা থেইক্যা বাপরে দেহি নাই, কয়দিন হয় মা আরেক জনের লগে বিয়া বইছে। নতুন বাপের লগে আমার বনে না।
এহন ষ্টেশনে থাকি। আরো কয়েকজন পথশিশুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ষ্টেশনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বস্তি ও নির্জন স্থানগুলোতে মদ, ফেনসিডিল গাঁজা, হেরোইন, এসব পাচার করে যে অর্থ পায় তা দিয়ে খাবার খায় আর বিভিন্ন মাদক কিনে নেশায় বুদ হয়ে থাকে এসব পথশিশু। একদিন খাবার না খেলে তাদের চলে, কিন্তু নেশা না করলে তাদের চলে না। ঘুম হয় না, বুক জ্বলে।
পরিণত বয়সের আসক্তদের মতো আধশোয়া অবস্থায় ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে কথাগুলো বলছিল আনুমানিক ১২-১৩ বছর বয়সী পথশিশু আলম। এ প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, মাদকের ভয়াবহ ছোবলে পথশিশুদের আসক্ত হওয়ার খবর অনেক আগে থেকেই শুনে আসছি। তবে এতে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও জেনেছি। এ ব্যাপারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে অধিকারভিত্তিক সেবা প্রদানকারী বেসরকারি সংস্থা অপরাজয়ের বাংলাদেশের হিসাবে সিলেট বিভাগে বর্তমানে পথশিশুর সংখ্যা ২৫ হাজার। এর মধ্যে সিলেট রেলওয়ে ষ্টেশনে, কোতোয়ালি এলাকা ছাড়াও নগরীরর বিভিন্ন স্থানে পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার।
এদের অধিকাংশই সামান্য অর্থের বিনিময়ে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। নিজেরাও হয়ে পড়ছে মাদকাসক্ত। এ প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক কর্মকর্তা জানান, পথশিশুদের নেশার কবল থেকে রক্ষা করতে আমাদের চাইল্ড টু চাইল্ড কন্ট্রাক্ট কার্যক্রম আরো জোরদার করেছি। নগরীতে পথশিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মাদক সেবনকারীর সংখ্যাও।
মাদক ব্যবসায়ীরা যাতে পথশিশুদের ব্যবহার করতে না পারে সে লক্ষ্যে আমরা পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছি।
এসব কোমলমতি পথশিশুদের থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই, যেখানেই রাত সেখানেই কাত। বিভিন্ন ফুটপাত, রাস্তা, কাঁচাবাজার ও শহরের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবনের নিচে তারা রাত কাটায়।
দরিদ্র ও সামাজিক অবক্ষয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবহেলা, এমনকি নগরীতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা মাদকের আস্তানা দিন দিন পথশিশুদের নিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে। একমাত্র অভাব আর বেকারত্বের সুযোগে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদকদ্রব্য বেচা-কেনা ও পাচারের কাজে পথশিশুদের ব্যবহার করে।
এর ফলেই আসক্ত হয়ে পড়েছে কোমলমতি পথ শিশুরা। সমাজ ও রাষ্ট্র যদি পথশিশুদের আশ্রয়, খাদ্য, শিক্ষাসহ মৌলিক চাহিদা পূরণে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে তারাও দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ ব্যাপারে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিশেষ ভূমিকা থাকা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সাংবাদিক-কলামিস্ট।