সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপের আহŸান

কাজির বাজার ডেস্ক

জুলাই-আগস্ট হত্যা মামলায় ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের নাম আসার বিষয়টি ‘পুরোনো আইন ও চর্চা’র ফলÑ বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। একইসঙ্গে বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কাঠামোগত সংস্কারের সাথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মুহাম্মদ ইউনূসকে আহŸান জানিয়েছে সংগঠনটি। আরএসএফ বলছে, ড. ইউনূসের এই বক্তব্য উৎসাহব্যঞ্জক আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, যা ইঙ্গিত দেয়Ñ যে ‘প্রতিশোধ গ্রহণের’ ধারায় গত সেপ্টেম্বর থেকে শতাধিক সাংবাদিক ভুক্তভোগী হয়েছেন, শিগগিরই সে অবস্থার অবসান ঘটতে পারে। আরএসএফ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গটি টেনেছে।
সেখানে তারা বলছেÑ সাক্ষাৎকারে ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের বিষয়েও কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এ কার্ড বাতিল করার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের কাজ করতে বাধা দেবে না। এর মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে তাদের প্রবেশাধিকার সীমিত হবে শুধু।

নবীগঞ্জে তাবলীগ জামায়াতের আমীর মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত

নবীগঞ্জ সংবাদদাতা

নবীগঞ্জ উপজেলার দাওয়াতে তাবলীগ জামায়াতের আমীর শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাদিকুর রহমান সাদিক (৪৫) বৃহস্পতিবার রাতে হবিগঞ্জের দৌলতপুর এলাকায় মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হলে স্থানীয় লোকজন সাথে সাথে জেলা সদর হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, শুক্রবার বেলা ২ টায় নবীগঞ্জ শহরতলীর চরগাও শাহী ঈদগাহ ময়দানে মরহুমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত জানাজার নামাজে জেলা আমীর, নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়রবৃন্দ, বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দসহ সামাজিক, রাজনৈতিক এবং নানা শ্রেনী পেশার বিপুল পরিমাণ লোকজন অংশ নেন। ঈদগাহ ময়দানে তীল ধারনের টাই ছিলনা।
আশপাশের এলাকা সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষের ঢল নামে। পরে ঈদগাহের পাশেই গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

পাঁচ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা

কাজির বাজার ডেস্ক

থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশি নাগরিকদের সতর্ক করেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, কিছু অসাধু ব্যক্তি এবং এসব দেশে গড়ে ওঠা বেশ কিছু স্ক্যাম প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার অপারেটর, টাইপিস্ট, কলসেন্টার অপারেটরসহ বিভিন্ন পদে আকর্ষণীয় বেতনের প্রলোভন দিয়ে নিয়োগের লক্ষ্যে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে (ভুয়া ওয়েবসাইট, ইমেইল, ফেসবুক, হোয়াটসএ্যাপ, টেলিগ্রাম ইত্যাদি) প্রচার কার্যক্রম ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করছে।
এসব ক্ষেত্রে স্ক্যাম সেন্টারগুলো বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সাথে বাংলাদেশিদেরও সুকৌশলে স্ক্যাম সেন্টারের ভিতরে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক জিম্মি করে স্ক্যামের কাজে নিয়োজিত করছে।
ব্যাংককস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস মিয়ানমার ও কম্বোডিয়ায় গড়ে ওঠা স্ক্যাম সেন্টারগুলো থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ও পালিয়ে আসা বেশ কিছু বাংলাদেশিকে ইতোমধ্যে দেশে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারসমূহকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া, এসব দেশগুলোতে সাইবার স্ক্যাম নিয়ে কাজ করছে এরূপ এনজিওসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।
বিদেশে চাকরির উদ্দেশ্যে গমনেচ্ছু বাংলাদেশিদের এসব দেশে কম্পিউটার পরিচালনা সংক্রান্ত চাকরির প্রস্তাব পেলে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা অথবা জনশক্তি, কর্মস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সংশ্লিষ্ট শাখার মাধ্যমে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহের সহযোগিতায় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য যাচাই করে নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়াও স্ক্যাম সেন্টার থেকে ফেসবুক ও হোয়াটসএ্যাপ আইডির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে-বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদেরকে টার্গেট করে আর্থিকভাবে প্রতারণা করা হচ্ছে। দেশে-বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে প্রতারকদের এ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করলে প্রতারক চক্রটি তাৎক্ষণিকভাবে এসব লেনদেনের এ্যাকাউন্ট বন্ধের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে। এ বিষয়ে দেশে-বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির সাথে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

কাজির বাজার ডেস্ক

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন তিন বাহিনীর প্রধানগণ। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান সন্ধ্যা ৭টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন জানান, ‘সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতিকে তাদের নিজ নিজ বাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন।’
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন দিবসটি উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সশস্ত্র বাহিনী আমাদের গর্বের প্রতীক উল্লেখ করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ভ‚মিকারও প্রশংসা করেন। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আশা করেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আগামীতেও দেশের উন্নয়নে আরও অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এসময় বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।

নবীগঞ্জে পরোয়ানাভুক্ত আসামী গ্রেফতার

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি

নবীগঞ্জে পুলিশের বিশেষ অভিযানে নারী ও শিশু নির্যাতন ও সি আর মামলার পরোয়ানাভুক্ত এক আসামীকে গ্রেফতার করেছে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। নারী শিশু মামলা নং-১৫২০/২০১৮, ধারা-৭/৯(১), ২০০০ সনের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী/২০০৩) এর এজাহার নামীয় আসামী হলো নবীগঞ্জ উপজেলা চরগাঁও গ্রামের কাচা মিয়ার পুত্র রায়হান মিয়া (২৬)। বৃহস্পতিবার রাতে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কামাল হোসেন, পিপিএম এর দিক নির্দেশনায় ও এস, আই সুমন মিয়ার নেতৃত্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা রাজাবাদ এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে নারী শিশু নির্যাতন মামলার ও সি আর পরোয়ানা ভুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেন, নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কালাম হোসেন পিপিএম। তিনি বলেন গ্রেফতারকৃত আসামীদের হবিগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

কুমারগাঁওয়ে টিলা কাটার দায়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা, একজন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার

নগরীর কুমারগাঁওয়ে টিলা কেটে ঘর নির্মাণের অভিযোগে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার সিলেট বিমানবন্দর থানায় মামলাটি করেন পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. মামুনুর রশিদ। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ৪৮ হাজার ৭২ ঘনফুট টিলার মাটি কাটা ও অপসারণের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- সুনামগঞ্জের তাহিরপুর বানিয়াগাঁও গ্রামের সুভাষ পাল (৪৭), আখালিয়া টিলারগাঁওয়ের সুহেল মিয়া (৩২), গোলাপগঞ্জ সুপাটেক গ্রামের প্রিয়তোষ দাস (৪৫), বিমানবন্দর থানার আখালিয়া টিলারগাঁও এলাকার রুহেল মিয়া (৪০), তার ভাই কয়েছ মিয়া (৪১), সুনামগঞ্জের দিরাই উদনপুর গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন (৫০), একই গ্রামের আহমদ আলী (৪৬), আখালিয়া টিলারগাঁওয়ের মো. জাহাঙ্গীর (২৭) ও একই এলাকার আবদুল্লাহ (২৫)। তাদের মধ্যে সুভাষ পালকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার দুপুরে সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) সিলেট মহানগর রাজস্ব সার্কেল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ আশিক কবিরের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে সুভাষ পালকে ঘর নির্মাণের জন্য টিলা কাটা অবস্থায় আটক করা হয়। এ সময় অন্যান্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালত স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে জানতে পারেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা টিলার মাটি কেটে নিচু জমি ভরাট করে ঘর নির্মাণ করছেন। পরে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দেওয়ার নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রিয়তোষ দাস ৪ হাজার ৮০০ ঘনফুট, সুভাষ পাল ২ হাজার ৯৭০ ঘনফুট, সুহেল মিয়া ১৭ হাজার ৮৫০ ঘনফুট, রুহেল মিয়া ও কয়েছ মিয়া দুই ভাই মিলে ৩ হাজার ৭৮০ ঘনফুট, মোফাজ্জল হোসেন ১৫ হাজার ৩৭৫ ঘনফুট, আহমদ আলী ১ হাজার ৪৭০ ঘনফুট এবং আবদুল্লাহ ৮৮২ ঘনফুট টিলার মাটি কেটেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, মামলার পর গ্রেফতার ব্যক্তিকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত অন্য আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান চালাচ্ছে।

বিআরটিএ ও ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের বিরোধে ভোগান্তিতে ৬ লাখের বেশি আবেদনকারী

কাজির বাজার ডেস্ক

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সরবরাহকারী ভারতীয় মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের (এমএসপি) মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধের কারণে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ডের জন্য আবেদনকারীদের অপেক্ষার সময় বেড়েই চলেছে। প্রয়োজনীয় এসব কার্ডের জন্য বর্তমানে ৬ লাখ ১০০ হাজার আবেদন জমা রয়েছে।
আবেদনকারীরা কখন তাদের কার্ড পাবেন তার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই।
বিআরটিএ’র রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাইয়ে ১২০ কোটি টাকার চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী ২০২৬ সালের জুলাইয়ের মধ্যে ৪০ লাখ স্মার্টকার্ড সরবরাহ করতে হবে। তবে সরবরাহকারী সংস্থাটি এখন পর্যন্ত এই সংখ্যার মাত্র অর্ধেক সরবরাহ করতে পেরেছে বলে জানা গেছে। সমস্যাটি আরও জটিল হয়ে উঠেছে, কারণ এমএসপি এখনও ৬ লাখের মতো আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেনি। কার্ড সরবরাহে এমএসপির দেরি কারণে বিআরটিএর কার্যক্রমে প্রভাব পড়ছে বলে জানান কর্মকর্তারা। অন্যদিকে এমএসপির দাবি, বিআরটিএ বিল পরিশোধ না করায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এদিকে, নতুন আবেদন, নবায়ন ও সংশোধনের জন্য আবেদন আসছে অব্যাহতভাবে। স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ডের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা আবেদনকারীদের জন্য নানা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। অনেকে রিপোর্ট করেছেন, বৈধ স্মার্টকার্ড ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাধাগ্রস্ত হয়। মোটরসাইকেল চালক মো. রায়হান দুই বছর আগে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইন্সের জন্য আবেদন করেছেন। ট্রাফিক পুলিশেরা প্রাথমিক কাগজপত্র গ্রহণ করতে রাজি হন না। এ কারণে হতাশা প্রকাশ করেন রায়হান।
এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আবেদনকারীদের ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কিউআর কোডসহ অস্থায়ী কাগজপত্র দেওয়ার সুযোগ দিয়ে ই-পেপার ড্রাইভিং লাইসেন্স সিস্টেম চালু করেছে বিআরটিএ।
বিআরটিএ’র নিরীক্ষা ও আইন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলামের মতে, এই ব্যবস্থা অন্তর্র্বর্তীকালীন সমাধান হিসেবে কাজ করে। এর ফলে লোকজন তাদের স্মার্টকার্ড না পাওয়া পর্যন্ত গাড়ি চালাতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিশ্রæতি পূরণের জন্য চেষ্টা করছে। তাই আমরা বিকল্প হিসেবে এই সিস্টেম চালু করেছি।’ বিআরটিএ স্মার্টকার্ড ইস্যুর জন্য সব সময় বিভিন্ন ঠিকাদারের উপর নির্ভর করে এসেছে। এমএসপির আগে, একটি ফরাসি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেড চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন করে। তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রায় ১৫ লাখ কার্ড সরবরাহ করেছে। চলমান সংকটের কারণে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার নীতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট সরকার ক্ষমতায় এসে ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ডের পরিবর্তে স্ট্যান্ডার্ড পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি) কার্ড চালু করে।
স্মার্টকার্ড ইস্যুতে বিলম্ব হয়েছে সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আমল থেকে। পক্ষপাতদূষ্ট চুক্তির কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। বিআরটিএ’র অভ্যন্তরে দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ২০২১ সালে তাদের এক প্রতিবেদনে বলে, ৮৩.১ শতাংশ পরিবার ড্রাইভিং লাইসেন্স চাওয়ার সময় কোনো না কোনো ধরনের দুর্নীতির শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৮৩.৭ শতাংশ পরিষেবা ত্বরান্বিত করার জন্য মধ্যস্থতাকারী বা ‘দালালদের’ উপর নির্ভর করতে হয়েছে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, নতুন আবেদনকারীরা পিভিসি কার্ড পাবেন এবং পুরাতন আবেদনকারীদের পূর্বের কার্ড জমা দিতে হবে। তবে কবে নাগাদ তা জারি করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো সময়সীমা নেই।

গুমের সঙ্গে জড়িতরা রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না

কাজির বাজার ডেস্ক
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না। বিশ্বের কোথাও গুমের সঙ্গে জড়িতরা পার পায়নি, বাংলাদেশেও পাবে না। দেশের মাটিতে সবার বিচার নিশ্চিত করব। দেশের দেয়ালে দেয়ালে তাদের কথা লেখা থাকবে। যারা গুমের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তারা লড়াই থামাবেন না।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে আয়োজিত ‘গুমের জবানবন্দি ও স্মৃতির প্রতিরোধ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
শফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনাকে সামনে রেখে যে যার মতো গুম-খুন করেছে। তার শাসনব্যবস্থা পুরোটা ছিল খুনের এন্টারপ্রাইজ। এর বিরুদ্ধে প্রথম লড়াইটা করে মায়ের ডাক। এই সাহসী কাজের জন্য তাদের স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আমরা সবার বিচার করব, সে জন্য কমিশন গঠন করেছি। সেই কমিশন ধারণা করছে, গুমের সংখ্যা তিন-সাড়ে তিন হাজার। গুমের মূল উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেন কথা না বলতে পারে, ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি। তার সহযোগীরা দেখল গুম করা যাচ্ছে, তখন তারা ব্যক্তি স্বার্থেও গুম করেছে। শুধু গুম করেনি, অনেককে ওপারেও পার করে দিয়েছে। দুজনকে ভারত থেকে উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গুমের বিচার ও গুম বিলুপ্ত করা আমাদের টপ প্রায়োরিটি। শুধু বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য না, সবার জন্য আমাদের মানবাধিকার যেন সমান হয়। আমি যাকে ঘৃণা করি, তার মানবাধিকার নিয়েও যেন আমরা কথা বলি। আপনারা সবার মানবাধিকার নিয়ে কথা বলবেন।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, গুমের শিকার পরিবারগুলো অনেক বড় মূল্য দিয়েছে। তাদের ঘটনাগুলো শেখ হাসিনার পতনের সঙ্গে জড়িত। শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি ঘৃণা অর্জন করেছেন গুমের মধ্য দিয়ে।
স্বামীর গুম হওয়া ও পরবর্তী সময়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির বলেন, ইলিয়াস আলীর গুমের পর পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করেনি। তার দল ও এলাকায় আন্দোলন করলে সেখানে গুলি চালিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়। তার এলাকার দুই উপজেলায় সবার নামে মামলা দিয়ে পুরুষশূন্য করে ফেলে। আমি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরবর্তী কার্যক্রমে বুঝলাম, এটি ছিল তার নাটক।
তিনি আরও বলেন, কেউ অপরাধ করলে তাকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেবে। কিন্তু কাউকে এভাবে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গুম করা কখনোই কাম্য হতে পারে না। আমরা এতদিন আশায় ছিলাম, কবে সরকারের পতন হবে। পাঁচ আগস্টের পর গুম কমিশন হলো। তারা বললেন, আয়নাঘর বন্ধ করে দিয়েছেন, আমাদের গুম হওয়া স্বজনদের সেখানে রাখা হয়নি। অনেকে বলছেন, আয়নাঘর নামে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। কিন্তু যে তিনজন ফিরে এলো তারা আয়নাঘরের বর্ণনা দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক গুম আইনের আদলে দেশের জন্য গুম আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এই গুমের সঙ্গে শুধু জিয়াউল আহসান নয়, এর সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত। সুষ্ঠু তদন্ত করে সবার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন, ১৯৯৬ সালে কল্পনা চাকমা গুম হওয়ার পর কোনো সরকার তার হদিস দিতে পারেনি। বরং কল্পনা চাকমা গুম হওয়ার পর, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল, তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. মোবাশ্বার হাসান গুমের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করেন। সভায় আরও ছিলেন মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম তুলি। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় অবস্থানরত চিকিৎসক ডা. শামারুহ মির্জা।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার জমিয়তের কাউন্সিল সম্পন্ন

সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ১২ দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কাউন্সিল এবং গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান ২২ নভেম্বর শুক্রবার বিকালে শান্তিগঞ্জ বাজারে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জমিয়তের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ সভাপতি মাওলানা শহীদুল ইসলাম আনসারী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জমিয়তের কেন্দ্রীয় সহ সভপতি শায়েখ মাওলানা আব্দুশ শহীদ জামলাবাদী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা রশীদ বিন ওয়াক্কাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন খান, সহকারী মহাসচিব ও জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ রশীদ আহমদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান জিহাদী।
মাওলানা হুসাইন আহমদ এর সভাপতিত্বে ও এম. আব্দুল হাফিজ এর পরিচালনায় শান্তিগঞ্জ উপজেলা জমিয়তের কাউন্সিল অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমিয়ত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী জননেতা সৈয়দ তালহা আলম।
অনুষ্ঠানে প্রায় সহস্রাধিক কর্মী এবং সমর্থকদের উপস্থিতিতে প্রধান অতিথি সহ অতিথিবৃন্দ সুনামগঞ্জ জেলায় জমিয়তের গণজাগরণে তালহা আলমকে ধন্যবাদ জানান এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তালহা আলমকে জমিয়তের প্রার্থী মনোনীত করেন। মুফতি জাকির হুসাইন খান বলেন, অতীতে বিএনপি জোট এই আসন জমিয়তকে দিয়েছে এবং আগামীতে জোট হলে বিএনপির কাছে এই আসন চাইবে জমিয়ত।
উল্লেখ্য তালহা আলম ১২ দলীয় জোটের মাধ্যমে বিএনপির সকল যুগপৎ আন্দোলনে সশরীরে ছিলেন এবং সুনামগঞ্জ-৩ আসনে জনতার চেয়ারম্যান নামে পরিচিত। তালহা আলম বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে জমিয়তের মুফতি ওয়াককাস অংশ জগন্নথপুর-শান্তিগঞ্জে আরো অনেক বেশী শক্তিশালী।
কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে মাওলানা হুসাইন আহমদকে সভাপতি এবং এম আব্দুল হাফিজকে সাধারণ সম্পাদক করে শান্তিগঞ্জ উপজেলা জমিয়তের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তি

আসামি চেনে না বাদীকে, বাদী চেনে না আসামিকে

 

কাজির বাজার ডেস্ক

অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ১০০ দিনে যে কয়েকটি ঘটনা আলোচনার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে, এর অন্যতম ‘ঢালাও মামলা’। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যাকাÐের ঘটনায় দেশ জুড়ে এ পর্যন্ত হওয়া ঢালাও মামলায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘটনা সম্পর্কে আসামিদের সিংহভাগ কিছুই জানেন না। বাদী চেনেন না আসামিকে, আসামিরাও চেনেন না বাদীকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাদী নিজেও ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এমনও অভিযোগ উঠেছে, শত শত মানুষকে আসামি করে মামলা দিতে বাদীকে বাধ্য করা হয়েছে, কখনো দেখানো হয়েছে টাকার প্রলোভনও।
পূর্বশত্রæতা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা এবং চাঁদাবাজি ও হয়রানি করতে অনেককে আসামি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। মামলায় কাদের আসামি করা হবে, সেক্ষেত্রে বাদীর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই; নিয়ন্ত্রণ থাকে অন্যদের হাতে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীসহ সরকারবিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা দিত পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতারা। এখন দেখা যাচ্ছে, হত্যা মামলায় ঢালাওভাবে আসামি করা হচ্ছে ‘ইচ্ছেমতো’।
সরকার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, এসব মামলায় নিরীহ কাউকে যেন হয়রানি না করা হয়, প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়া না গেলে কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অনেককেই এসব মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে বা এখনো করা হচ্ছে। আবার ঘটনার সঙ্গে দূরতম সম্পৃক্ততা না থাকলেও আসামি হয়ে নিরপরাধ অনেকে গ্রেফতারের ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম শনিবার বলেছেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দায়ের হওয়া মামলাগুলো যথাযথভাবে তদন্ত করতে হবে। কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না, কোনো পুলিশ সদস্যকেও অযথা ভিকটিমাইজ করা হবে না। নিরীহ কারো নামে মামলা হলেও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
অভিযোগ উঠেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মামলা করার আগেই টার্গেটকৃত ব্যক্তির কাছে চাঁদা হওয়া হয়েছে। চাঁদা না দিলে মামলায় আসামি করা হয়েছে, আর চাঁদা দিলে আসামি করা হয়নি। আবার মামলার পর আসামির তালিকা থেকে নাম কাটাতেও লাখ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে, কিংবা এখনো নেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার মামলা দেওয়ার পাশাপাশি অনেকের বাড়ি, জমি, প্লট, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও দখল করে নেওয়া হয়েছে। লুট করা হয়েছে মালামাল। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। যার প্রতিষ্ঠান লুট বা বেদখল করা হয়েছে, উলটো আবার তার বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম ইতিমধ্যে একাধিকবার বলেছেন, ঢালাও মামলা দিয়ে বাণিজ্য করার বহু অভিযোগ তারা পেয়েছেন। মামলা দিয়ে বাণিজ্য করা যাবে না বলেও তিনি সতর্ক করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) গত ১৯ নভেম্বর চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেছেন, ‘আগে ভুয়া মামলা করত পুলিশ। এখন করছে পাবলিক (জনগণ)। বেশির ভাগ মামলা ভুয়া। আগে পুলিশের করা ভুয়া মামলায় ১০টা নাম আর ৫০টা বেনামি আসামি থাকত। এখন পাবলিক (জনগণ) দিচ্ছে ১০টা নাম, ৫০টা ভুয়া নাম। মামলাগুলো পুলিশ, র‌্যাব কিংবা আনসার দেয়নি। জনগণই দিচ্ছে। তদন্তে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা।’
এক মামলায় ৫৩ সাবেক সচিব আসামি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা এক মামলায় ৫৩ জন সাবেক সচিবকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, সাবেক ওই সচিবেরা ‘ভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট’। সাবেক এই সচিবদের ‘ফ্যাসিবাদের সহযোগী, রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা’ হিসেবে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদ থেকে সম্প্রতি অবসরে যাওয়া মো. মাহবুব হোসেনও।
গত ২৯ অক্টোবর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলাটি করেছেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস মোহাম্মদ জামাল হোসেন খান (রিপন)। তার করা এই মামলায় মোট ১৯৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন মামলায় বিচ্ছিন্নভাবে সাবেক কয়েক জন সচিবকে আসামি করা হয়েছে। তবে একটি মামলায় একসঙ্গে ৫৩ জন সাবেক সচিবকে আসামি করার ঘটনা এটিই প্রথম।
মামলার এজাহারে বাদী রিপন উল্লেখ করেন, তার মেয়ে সামিয়া খান আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ বনশ্রী শাখার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যোগ দিতে সামিয়া আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যায়। সেখানে ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিল। ছাত্র-জনতার মিছিল চলার সময় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করতে থাকে। এ সময় সামিয়া গুলিবিদ্ধ হয়। তার পায়ে এখনো তিনটি গুলি রয়েছে।
বাদীর অভিযোগ, ঘটনার প্রায় তিন মাস পর তিনি প্রথমে বাড্ডা থানায় মামলা করতে যান। থানা থেকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর তিনি সিএমএম আদালতে মামলা করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) এ মামলা তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। এই মামলার এজাহারে উল্লেখ করা আসামিদের নাম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের নেতা ও বিগত সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের পাশাপাশি বনশ্রী-আফতাবনগর এলাকার ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের নামও রয়েছে। আসামির তালিকায় নাম থাকা কয়েকজন জানান, তারা বাদীকে চেনেন না, ঘটনা সম্পর্কেও কিছুই জানেন না। বাদী রিপন বলেন, ভুক্তভোগী হিসেবে তিনি মামলাটি করেছেন।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা, ছয় বছর পর মামলা : ছয় বছর আগে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার অভিযোগে ৬৫ জনকে আসামি করে সম্প্রতি রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান মো. বাবুল সরদার চাখারী। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে। আসামির তালিকায় জাপার শীর্ষ নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও রয়েছেন। এই মামলা নিয়েও বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে চাখারীর বিরুদ্ধে। পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে এক ভুক্তভোগীর করা মামলায় সেই চাখারী নিজেই এখন কারাগারে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম কয়েক দিন আগে সংবাদ ব্রিফিংয়ে ঢালাও মামলা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, মামলা দেওয়া ভুক্তভোগীর অধিকার। তবে যার বিরুদ্ধে কোনো এভিডেন্স নাই তার বিরুদ্ধে যাতে মামলা দেওয়া না হয়। পুলিশকে অর্ডার দেওয়া হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে কোনো এভিডেন্স নাই, দ্রæত তাদের নাম যেন বাতিল করা হয়।
ঢালাও মামলায় নিরপরাধ লোকজনকে আসামি করার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গত ১৯ নভেম্বর নিজ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, হয়রানিমূলক মামলা ঠেকাতে ডিসি, এসপি, জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে জেলা পর্যায়ে কোনো কমিটি করা যায় কি না, সেই চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এই কমিটি মামলার প্রাথমিক তথ্যবিবরণী (এফআইআর) করার আগে যাচাই করে দেবে। তিনি বলেন, ‘যারা হয়রানিমূলক, মিথ্যা ও বাণিজ্যমূলক মামলা করছেন, কাউকে কাউকে নাকি হুমকিও দেওয়া হচ্ছে যে টাকা না দিলে মামলা করা হবে। আপনারা (হয়রানিমূলক মামলাকারী) মনে রাখেন, আমি যদি এই মন্ত্রণালয়ে থাকি, আপনাদের কীভাবে শাস্তি দেওয়া যায়, সেটির আইন খুঁজে বের করব।