এনআইডি সংশোধনে ১৪ দিন সময় পাবেন আবেদনকারীরা

কাজির বাজার ডেস্ক

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনে ১৪ দিন সময় পাবেন আবেদনকারীরা। যেসব আবেদন দীর্ঘদিন ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে শুধু তারা শুনানিতে বক্তব্য দিতে এ সময় পাবেন। তবে যৌক্তিক বক্তব্য না দিলে আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরের কয়েক লাখ আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় ঝুলে আছে। এগুলোর মধ্যে অনেকের আবেদন কোনো কারণ ছাড়াই পড়ে আছে।
আবার কারো কারও আবেদনের সঙ্গে যথাযথ দলিলাদি নেই। আবার কারও আবেদন ক্যাটাগরি (আবেদনের ধরণ নির্ধারণ) করা হয়নি। বিষয়গুলো নিষ্পত্তির জন্য সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইসি সচিব শফিউল আজিম ইতোমধ্যে মাঠ কর্মকর্তাদের আবেদনগুলো দ্রæত নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
এক লিখিত নির্দেশনায় তিনি আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাদের বলেছেন, যে সব আবেদন দীর্ঘদিন যাবৎ তদন্ত প্রয়োজন, এ সব আবেদন নিষ্পন্ন করার জন্য ১৪ দিনের সময় দিয়ে ডাকযোগে তদন্তের নোটিশ প্রেরণ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্তে উপস্থিত না হলে আবেদন বাতিলের সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
এ ছাড়া, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সংক্রান্ত তদন্ত কার্যক্রমে সহকারী উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসারদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
এক্ষেত্রে সরেজমিনে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন আবেদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। আবেদনকারীদের জাতীয় পরিচয়পত্রে বিদ্যমান তথ্যে ভুল থাকার কারণ এবং চাহিত সংশোধিত তথ্য কোন উদ্দেশ্যে চাওয়া হচ্ছে তা তদন্ত প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
অন্যদিকে নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভোটারকে ছবি তোলার তারিখ, সময় এবং কী কী দলিলাদি প্রয়োজন হবে, তা সিস্টেমে জানাতে হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে ১০টি নির্বাচনী অঞ্চলে ছয় লাখ ৬৫ হাজার ৫১৬টি এনআইডি আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে দুই লাখ ৬৮ হাজার ২৯৪টি আবেদন। আর তথ্য কিংবা দলিলাদি জটিলতা সংক্রান্ত আবেদন ঝুলে আছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ২২২টি।
এ বিষয়ে ইসি সচিব শফিউল আজিম বলেন, আমরা কর্মকর্তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। এ ছাড়া, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম (এসওপি) যদি পরিবর্তন করতে হয়, আমরা সেটাও করব।
এখন এনআইডি আবেদন তো ফেলে রাখার সুযোগ নেই। আমরা অঞ্চলভেদে বৈঠক করেছি। ১০ অঞ্চলে সভা করে যে সুপারিশগুলো আসছে, সেখান থেকে ইতোমধ্যে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ তো বাবা-মার নামও পরিবর্তন করতে চায়। আমরা তো এটা কোনদিনও দেব না। আবার মেট্রিকের সার্টিফিকেট দিয়ে আগে অনেকের সব রেডি করেছি, এখন বলছে আমি তো এইট পাশ। এইটাও আরেকটা দুই নম্বরি। ফাঁক-ফোকরগুলো শেষ হয়ে গেলে এনআইডি সেবা উন্নত হবে।

মৌলভীবাজার সমিতির শিক্ষা বৃত্তি ও কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনার দরখাস্ত আহবান

 

সিলেটে বসবাসরত মৌলভীবাজার জেলাবাসীদের সংগঠন ‘মৌলভীবাজার সমিতি, সিলেট’ এর উদ্যোগে সমিতির জীবন সদস্যদের সন্তানদের মাঝে শিক্ষা বৃত্তি প্রদানের জন্য দরখাস্ত জমা দান ও কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনার জন্য নাম তালিকাভুক্ত করার সময় আগামী ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। সমিতির জীবন সদস্যদের সন্তান ছাড়াও মৌলভীবাজার জেলার অধিবাসীদের সন্তান যারা ২০২৪ সালে এসএসসি/ সমমান এবং এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে তাদেরকে সংবর্ধনা প্রদান ও তাদের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাদেরকে নগদ এককালীন বৃত্তি প্রদান করা হবে।
আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নাম, পিতা-মাতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, মোবাইল নাম্বার এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণের নম্বর ফর্দসহ সাদা কাগজে সমিতির সভাপতি/ সেক্রেটারি বরাবর আবেদনপত্র আগামী ১৮ নভেম্বর ২০২৪ তারিখের মধ্যে নিম্নের যেকোন ঠিকানায় জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ঠিকানাসমূহ হল: (১) জয়িতা ফার্মেসী, লামাবাজার পয়েন্ট, সিলেট (২) নিউ সেন্ট্রাল ফার্মা, হাউজিং এস্টেট গেইট, দর্শন দেউড়ি, আম্বরখানা, সিলেট (৩) উপশহর ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বে-লীফ চায়নিজ রেস্টুরেন্টের নীচে, বি- বøক মেইন রোড, শাহজালাল উপশহর, সিলেট (৪) কাবাব কটেজ, সেন্ট্রার পয়েন্ট (লিফট-১), টুয়েলভ্ এর বিপরীতে, কুমারপাড়া পয়েন্ট, সিলেট।
যেকোন তথ্যের জন্য মোবাইল নাম্বার ০১৭১১৩১১৫৭৪ বা ০১৭১৮৪০০৪২২- এ যোগাযোগ করার জন্য সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ডা.মৃগেন কুমার দাস চৌধুরী ও সেক্রেটারি আহমদ মাহবুব ফেরদৌস অনুরোধ জানিয়েছেন।

প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেক্টরে ঘাপটি মেরে বসে আছে ফ্যাসিস্টদের দোসর -তাহসিনা রুশদীর লুনা

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর সহধর্মীনি তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেছেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দেশ দুইভাগে বিভক্ত ছিল। একদল ছিল শোষক শ্রেণি, আর আমরা সাধারণ জনগণ ছিলাম শোষিত শ্রেণি। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের অত্যাচারে অতিষ্ট জনগণ একটি গণঅভ‚্যত্থান ঘটিয়ে তাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। যার ফলে স্বৈরাচারমুক্ত শোষণমুক্ত একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। কিন্তু এখনো পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। এখনো একটি চক্র বারবার দেশের উপর, মানুষের উপর ষড়যন্ত্র করছে। সেই স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেক্টরে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে। সুযোগ পেলেই উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করবে। এজন্য বাংলাদেশের জনগণকে সজাগ থাকতে হবে।’
রবিবার দুপুরে বিশ্বনাথ পৌর এলাকার অলংকারী গ্রামে মরহুম হাজী তেরা মিয়া ও সুফিয়া বেগম স্মরণে ফ্রি চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইলিয়াসপতœী লুনা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ফ্যাসিস্ট। গত ১৭ বছর বিএনপির নেতাকর্মীদের যে দমন-নিপীড়ন, গুম, হত্যা চালিয়েছে। এরপরও তাদের সাথে কি ভদ্রতা দেখাবেন। তাদের সাথেও সেরকম ব্যবহার করা উচিত ছিল। কিন্তু বিএনপি দল হিসেবে ভদ্র, তাই তাদের মতো বিএনপি এসব করবে না।’
তিনি বলেন, এখনো আমরা ইলিয়াস আলীর সন্ধান বের করতে পারি নাই। বারবার সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম। আমরা অপেক্ষায় ছিলাম যে ফ্যাসিস্ট সরকার পতন হলে আমরা ইলিয়াস আলীকে ফেরত পাবো। কিন্তু বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করেও এখনো ইলিয়াস আলীর কোন সন্ধান পাইনি। আমি অনুরোধ জানাবো একটি সুষ্ঠু তদন্ত করে ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া সকলকে বের করতে হবে এবং গুমের সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। গুমের সংস্কৃতি যাতে দেশে স্থায়ীভাবে বন্ধ করা যায়, বর্তমান সরকার সেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যেন গ্রহণ করে।’
যুক্তরাজ্যের ওল্ডহাম বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব জাকির হোসেন ইমনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর জ্যেষ্ঠ ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস অর্ণব, উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. গৌছ আলী, সাধারণ সম্পাদক মোঃ লিলু মিয়া।
নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর একান্ত সহকারী ও সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ ময়নুল হক, অলংকারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান লিটন, দশঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমাদ উদ্দিন খান, বিশ^নাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্টের সহসভাপতি মিছবাহ উদ্দিন ও সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মোঃ শামছুল ইসলাম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর একান্ত সহকারী ও সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাজী মুসলিম আলী, দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফেজ আরব খান, সাবেক চেয়ারম্যান আবারক আলী, অলংকারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেল, যুক্তরাজ্য প্রবাসী হোসেন মিয়া, অলংকারী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আলতাব আলী, সাধারণ সম্পাদক মছব্বির আহমদ, বিশ^নাথ পৌর যুবদলের আহŸায়ক শাহ আমির উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আশিকুর রহমান রানা, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমদ দুলাল, অলংকারী ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহŸায়ক জুবায়ের আহমদ সুমন, জিয়ামঞ্চ সিলেট জেলা শাখার যুগ্ম আহŸায়ক আমির আলী, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য আব্দুল কাইয়ুম, ছাত্রদল নেতা শাহ টিপু, আব্দুর রহমান, অলংকারী গ্রামের আব্দুল জব্বার, আপ্তাব আলী, ফুল মিয়া, আশিক মিয়া।
শুরুতে ক্বোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা আলাউদ্দিন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী গিয়াস উদ্দিন ও শেষে দোয়া পরিচালনা করেন কামালবাজার ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মালিক।
উল্লেখ্য, শনিবার দিনব্যাপী মরহুম হাজী তেরা মিয়া ও সুফিয়া বেগমের পরিবারের আয়োজনে ও অলংকারী ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সহযোগিতায় এবং ডা. মোঃ শামছুল ইসলামের তত্ত¡বধানে ফ্রি চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্পে এলাকার ৪ শতাধিক চক্ষু রোগিকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। বিজ্ঞপ্তি

মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

দালালচক্রের মিথ্যা আশ্বাসে প্রতিবছর বহু বাংলাদেশি তরুণ অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের পরিণতি হয় অত্যন্ত মর্মান্তিক। হয় সাগরে ডুবে মারা যায়, না হয় মরুভ‚মিতে অনাহারে বা তৃষ্ণায় জীবন যায়। কখনো কখনো ঠাঁই হয় গণকবরে।
অনেক সময় জিম্মি করে অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয় এবং তাদের পরিবারকে বাধ্য করা হয় আরো মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দিতে। তার পরও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে অনেক তরুণই দালালদের পাতা ফাঁদে পা দেয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে রাজধানীর অত্যন্ত কাছে থাকা নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার এমন হাজারো তরুণের মর্মান্তিক পরিণতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতারকচক্রের শতাধিক কর্মী গ্রামে গ্রামে ঘুরে উন্নত জীবন ও লোভনীয় বেতনের মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে তরুণদের ফাঁদে ফেলে।
কিন্তু বছরের পর বছর এই অবৈধ কারবার চললেও এবং বহু তরুণের জীবনাবসান হলেও প্রশাসন নির্বিকার।
প্রতিবেদনে অনেক ভুক্তভোগী পরিবারের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। আড়াইহাজারের মানিকপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান কখনো মাছ ধরে, কখনো কৃষিকাজ করে তিন সন্তানসহ পাঁচজনের সংসার চালাতেন। দালালদের প্রলোভনে পড়ে ২০১৩ সালের জুনে মালয়েশিয়ার পথে পা বাড়িয়েছিলেন।
দালাল ইব্রাহিম নকিবের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিন লাখ ২০ হাজার টাকা। বিমানে না নিয়ে তাঁকে নেওয়া হয় টেকনাফে, তুলে দেওয়া হয় গরুবাহী ট্রলারে। এরপর ১১ বছর কেটে গেছে। স্ত্রী আজও জানেন না, তাঁর স্বামী জীবিত আছেন কি না। আড়াইহাজার উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে এমন অনেক পরিবার, যারা পরিবারের কোনো না কোনো নিকটজনকে এভাবে হারিয়েছে।
কিন্তু ইব্রাহিম নকিব, ইসমাইল হোসেনসহ অন্য পাচারকারীরা দিব্যি আছেন, কোটিপতি হয়ে আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন। এক ইব্রাহিম নকিবেরই রয়েছে এলাকায় চারটি বহুতল বাড়ি, রয়েছে এক মৌজায়ই ১৫ একর জমি। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, তাঁর আরো অনেক সম্পদ রয়েছে।
২০১৫ সালে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বাংলাদেশিদের অনেক গণকবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। সমুদ্রপথে যাওয়ার সময় যারা মারা যায়, তাদের মৃতদেহ সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়। অনেক সময় তাদের আবার আন্তর্জাতিক মানব কারবারিদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। মায়ানমার কিংবা থাইল্যান্ডের জঙ্গলে রয়েছে টর্চার সেল। সেখানে নির্যাতন করে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়। সেই ভিডিও পরিবারকে দেখিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে আরো অর্থ আদায় করা হয়। শুধু আড়াইহাজার নয়, সারা দেশেই রয়েছে মানব পাচারকারীদের অনেক নেটওয়ার্ক। বেকার যুবকরাই সাধারণত তাদের শিকার হয়। বেসরকারি সংস্থা ওকাপ জানায়, দেশের ছয়টি জেলায় সবচেয়ে বেশি মানবপাচারের ঘটনা শনাক্ত করা গেছে। এগুলো হচ্ছেÑফরিদপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ। আর শুধু মালয়েশিয়া নয়, ইউরোপে নেওয়ার কথা বলে মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে লিবিয়ার মরুভ‚মিতে নিয়ে একইভাবে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। আর ইউরোপে যাওয়ার পথে ভ‚মধ্যসাগরে প্রতিবছর শত শত বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। সেসব দেশে গিয়েও পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেলে যেতে হয়।
আমাদের তরুণ-যুবাদের এমন মর্মান্তিক পরিণতি থেকে রক্ষা করতে হবে। তাদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

গুচ্ছ পদ্ধতি বাতিলসহ ৫ দাবি শাবি শিক্ষার্থীদের

শাবি প্রতিনিধি

৫ দফা দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শাবিপ্রবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এসব দাবি উত্থাপন করা হয়। সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পেশ করা দাবিগুলো হলো-
১. ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা এবং পোষ্য কোটা বাতিল করতে হবে।
২. সেশনজট কমিয়ে আনার জন্য আগামী ৩ সেমিস্টার ৪ মাস করে সময়ে শেষ করতে হবে।
৩.ছাত্র আন্দোলনে হামলায় জড়িত এবং হলে অস্ত্র-মাদকে জড়িত ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে দ্রæত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থেকে বের করে এনে স্বতন্ত্র ভাবে বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে হবে।
৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের উন্মুক্ত রিডিং রুমের ব্যবস্থা করতে হবে।
সম্মেলনে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সালেহ মো. নাসিম বলেন, “গুচ্ছ পদ্ধতির কারণে শাহজালল বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কমে গিয়েছে। একক ভর্তি পরীক্ষায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নের যে মান তা গুচ্ছে দেখা যাচ্ছে না। গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসার দাবি জানিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রণালয় বরাবর একটি চিঠিও পাঠিয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের তিনটি সেমিস্টার শেষ করার ব্যবস্থা করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহŸান জানাচ্ছি। কারণ, এরই মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। সেদিক থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলন চলাকালে সহিংসতায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দীর্ঘসূত্রিতা করা হয়েছে। প্রশাসন দ্রæত ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
সম্মেলনে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুবুল ইসলাম ও রিয়াজ হোসেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুস্মিতা ভট্টাচার্য, সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজাদ শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি উপাচার্য বরাবর পাঠানো হয়।

মুনতাহার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

 

কানাইঘাট প্রতিনিধি

সিলেটের কানাইঘাটে নিখোঁজ শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনের সন্ধান ও উদ্ধারের আশা যখন সারাদেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন তাকে ফিরে পেতে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাড়ির পাশ থেকেই সাড়ে ৫ বছরের ফুটফুটে শিশু মুনতাহার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
রবিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী খালে পুতে রাখা মুনতাহার লাশ উঠিয়ে প্রতিবেশির পুকুরে ফেলার চেষ্টাকালে গলায় রশি পেঁচানো মুনতাহার লাশ উদ্ধার সহ ঘটনার সাথে জড়িত আলিফজান বিবিকে আটক করা হয়।
মুনতাহার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে কানাইঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার সহ একই বাড়ির মৃত ময়না মিয়ার স্ত্রী আলিফজান বেগম (৫৪), বৃদ্ধ কুতুবজান বেগম (৭০) কে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন মুনতাহার লাশ পাওয়ার পর হত্যাকারী আলিফজান বিবি’র বসত ঘরটি ভেঙে ঘুড়িয়ে দেয়। এর আগে থানা পুলিশ শনিবার গভীর রাতে আলিফজান বিবি’র মেয়ে নিখোঁজ মুনতাহার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শামীমা বেগম মার্জিয়াকে আটক করে পুলিশ। মার্জিয়াকে থানা পুলিশের হেফাজতে নিয়ে আসার পর পুলিশের ভয়ে আলিফজান বিবি বসত ঘরের পাশে একটি নর্দমায় পুতে রাখা নিখোঁজ মুনতাহার লাশ তুলে রাত সাড়ে ৩টার দিকে পাশর্^বর্তী আব্দুল ওয়াহিদের পুকুরে ফেলার চেষ্টার সময় আব্দুল ওয়াহিদ সহ আরো কয়েকজন হাতে নাতে আলিফজান বিবিকে আটক করেন। কানাইঘাট থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শিশু মুনতাহার হত্যাকারী শামীমা বেগম মার্জিয়া (২৫), তার মা আলিফজান বিবি (৫৫), মৃত ছইদুর রহমানের পুত্র ইসলাম উদ্দিন (৪০) ও মামুনুর রশিদের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা সরাসরি প্রত্যক্ষ ভাবে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছেন বলে থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আওয়াল জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর দুপুরবেলা শিশু মুনতাহা জেরিন তার বাড়ি থেকে পাশর্^বর্তী আব্দুল ওয়াহিদের বাড়ির শিশুদের সাথে খেলতে যায়। ঐদিন বিকেল পর্যন্ত শিশু মুনতাহা বাড়িতে ফিরে না আসলে তাকে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে পিতা শামীম আহমদ কানাইঘাট থানায় মেয়ে নিখোঁজের জিডি করেন। মুনতাহা নিখোঁজের পর থেকে থানা পুলিশ সহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং তার আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার সবাই সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুজি করেও নিখোঁজ মুনতাহার কোন সন্ধান পাননি। ফুটফুটে সুন্দর শিশু মুনতাহা নিখোঁজের সংবাদ গণমাধ্যম সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সারাদেশের মানুষ নিখোঁজ মুনতাহাকে ফিরে পেতে ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট দেন এবং অনেকে স্বইচ্ছায় খোঁজাখুজি করতে থাকেন। সবার অপেক্ষা ছিলো নিখোঁজ মুনতাহার সন্ধান পাওয়া যাবে এবং সে জীবিত অবস্থায় তার বাবা-মা’র কোলে ফিরে আসবে। সেই সূত্র ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে ফিরে পেতে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের ডাটাবেজ ধরে প্রযুক্তির আশ্রয় নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিখোঁজের একসপ্তাহ পর নিজ বসত বাড়ির আলিফজান বিবি’র বসত ঘরের পাশে নর্দমায় পুতে রাখা মুনতাহার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
মুনতাহার পিতা শামীম আহমদ জানান, শিশু মুনতাহার এক সময়ের গৃহ শিক্ষিকা ছিল আলিফজান বিবির মেয়ে শামীমা আক্তার মার্জিয়া। কিন্তু মার্জিয়ার খারাপ আচরণের কারনে মুনতাহার পিতা শামীম আহমদ তার মেয়ে মুনতাহাকে পড়াতে নিষেধ করেন। এতে প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে উঠে মার্জিয়া। মুনতাহার বাবা-মা’র উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য গত ৩ নভেম্বর নিখোঁজের দিন মুনতাহাকে কৌশলে মার্জিয়া এবং তার মা আলিফজান বিবি তাদের বসত ঘরে নিয়ে যায়। নিয়ে যাওয়ার পর মুনতাহার মুখের মধ্যে ওড়না ঢুকিয়ে এবং গলায় রশি প্যাঁচিয়ে শ^াসরুদ্ধ করে হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দী করে ঘরের মধ্যে রাখে হত্যাকারীরা। এরপর গভীর রাতে হত্যাকারীরা মুনতাহার লাশ পলিথিনে মুড়িয়ে বসত ঘরের পাশে খালের নর্দমায় পুতে রাখে। একাধিকবার মুনতাহার পরিবারের লোকজন মার্জিয়া সহ তার পরিবারের কাছে মুনতাহা নিখোঁজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে একেক সময় একেক ধরনের কথা বলতে থাকে তারা। মার্জিয়ার পরিবারের লোকজনের চলাফেরা ও কথাবার্তায় সন্দেহ হলে গত শনিবার রাতে থানা পুলিশ মার্জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। মার্জিয়াকে থানায় নিয়ে আসার পর তার মা আলিফজান বিবি নিহত মুনতাহার পুতে রাখা লাশ তুলে নিয়ে পাশর্^বতী বাড়ির পুকরে ফেলার চেষ্টাকালে আলিফজান বিবিকে হাতেনাতে আটক করেন স্থানীয়রা। তাৎক্ষণিক থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আলিফজান বিবি তার মা কুতুবজান বিবিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। আটক আলিফজান বিবি ও তার মেয়ে শামিমা বেগম মার্জিয়ার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডের স্থানীয় বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামেরমৃত ছইদুর রহমানের ছেলে ইসলাম উদ্দিন (৪০) ও মামুন রশিদের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩০) কে গতকাল রবিবার দুপুরে পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ৪ জনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
শিশু মুনতাহাকে পৈচাশিক কায়দায় হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আলিফজান, মার্জিয়া, ইসলাম উদ্দিন ও নাজমা বেগমের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে থানার ওসি আব্দুল আউয়াল জানিয়েছেন।
এদিকে রবিবার বিকেল ২টার দিকে সিলেটের পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুবুর রহমান নিহত মুনতাহার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনকে শান্তনা প্রদান এবং হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি এলাকার অনেকের সাথে কথা বলেন। স্থানীয় লোকজন হত্যাকারীদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানান তার কাছে। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান জানান, শিশু মুনতাহাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল। মুনতাহার হত্যাকারী ৪ জনকে ইতিমধ্যে আমরা গ্রেফতার করেছি এবং এ হত্যাকান্ডের সাথে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের প্রত্যেককে দ্রæত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে পুলিশ সুপারের সাথে ছিলেন, সিলেট জেলার এডিশনাল পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম, কানাইঘাট সার্কেলের এএসপি অলক কান্তি শর্মা, থানার ওসি আব্দুল আউয়াল।
শিশু মুনতাহার লাশ ময়না তদন্তে শেষে বাড়িতে নিয়ে আসলে সেখানে আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। উপস্থিত এলাকার শত শত লোকজন মুনতাহা হত্যাকান্ডের ঘাতকদের ফাঁসির দাবী জানান। রবিবার বাদ আসর মুনতাহার লাশ বীরদল পুরানফৌদ জামে মসজিদে জানাজা শেষে গ্রামের পঞ্চায়েত কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

জগন্নাথপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ইজিবাইক চালকের মৃত্যু

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আলামিন মিয়া (২৫) নামের এক ইজিবাইক (টমটম) চালকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেলতলা গ্রামের আউয়াল মিয়ার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, ১০ নভেম্বর রোববার সকালে প্রতিদিনের মতো নিজ বাড়িতে থাকা গ্যারেজ থেকে চার্জে থাকা ইজিবাইক বের করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চালক আলামিন মিয়ার মৃত্যু হয়। জগন্নাথপুর উপজেলা আবাসিক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) আজিজুল ইসলাম আজাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

কুলাউড়ায় ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক

কমলগঞ্জ সংবাদদাতা

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্ত এলাকার শরীফপুর ইউনিয়নের আমতলা বাজার এলাকা থেকে ৩০ পিস ইয়াবা টেবলেটসহ দুই সহোদরকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ইয়াবা টেবলেটসহ বিজিবি তাদের আটক করে কুলাউড়া থানায় সোপর্দ করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাতলাপুর-শমশেরনগর সড়ক ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত ভারতীয় মাদক, ইয়াবা টেবলেটসহ মাদক ব্যবসায়ীদের রুট হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ওই সড়কে সন্দেহজনক ঘুরাঘুরি দেখে বিজিবি আমতলা বাজার ক্যাম্পের সদস্যরা আতাউর রহমানকে (৩৫) তল্লাশি করে ৩০ পিস ইয়াবা টেবলেট পায়। এসময় ইয়াবা টেবলেটসহ তাকে আটক করলে তার ছোট ভাই বিজিবি সদস্যদের উপর আক্রমনের চেষ্টা করলে সাইফুর রহমানকে (২৫) আটক করে বিজিবি। আটককৃত আতাউর রহমান ও সাইফুর রহমান খিদিরপুর গ্রামের মাহবুবুর রহমানের ছেলে। তাদের দু’জনকে কুলাউড়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম আফসার এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মাদক আইনে মামলায় তাদের দুইজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

আগামী দুই বছরে ৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে

কাজির বাজার ডেস্ক

আগামী দুই বছরে ৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভ‚ঁইয়া। শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় যুব দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা জানান তিনি।
এ সময় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা সাংবিধানিক ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে এমন একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই; যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত হবে, সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে, কেউ তার লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ এবং ভাষার কারণে নিগৃহীত ও বঞ্চিত হবে না। এক্ষেত্রে অগ্রপথিকের ভ‚মিকা পালন করবে আজকের ছাত্র-তরুণ-যুবসমাজ।
তিনি বলেন, জাতীয় যুব দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আমরা কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে যারা ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা, ট্রাফিক সবকিছুর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাদেরকে সরকারের সকল কার্যক্রমে যুক্ত করা আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। তারই অংশ হিসেবে ট্রাফিক কার্যক্রমের দায়িত্ব নেওয়া শিক্ষার্থীদের আরও উন্নত প্রশিক্ষণের আয়োজন করে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং সেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগানোর জন্য সহায়ক পুলিশ হিসেবে তাদের নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে ৬৪টি জেলায় ৬৪টি খাল ও জলাশয় পরিচ্ছন্নকরণ কর্মসূচি আমরা হাতে নিয়েছি। এর পাশাপাশি আমাদের আয়োজনের অংশ হিসেবে রয়েছে জাতীয় যুব মেলা। ২ নভেম্বর থেকে সাত দিনব্যাপী সেই যুব মেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ, শিক্ষা বা এ ধরনের কার্যক্রমে যারা যুক্ত নেই, এমন ৯ লাখ যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার একটি কার্যক্রম আমাদের আসছে। আমি আহŸান জানাবো, যুবক ও যুব নারীদের এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলার এবং তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, তরুণদের নিয়ে শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয় সমগ্র পৃথিবী নতুন করে ভাবছে, অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের তরুণরা এই জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে একটি নতুন পথ দেখিয়েছে।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, তারুণ্যের ভিতরে যে উদ্যম, স্পৃহা ও ইচ্ছাশক্তি রয়েছে এই সকল গুণাবলীকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ একটি ভালো জায়গায় যাবে। এই জুলাই অভ্যুত্থানের সকলেই রাস্তায় নেমে এসেছিল। একদিকে ছিল দেশমাতৃকা অপরদিকে ছিল মৃত্যু। মাতৃভ‚মি অথবা মৃত্যু কোনো একটাকে বেছে নিয়ে আমাদের লড়তে হয়েছিল। ফলে আমরা মনে করি আমাদের এই লড়াইটা চলমান এবং আমরা অবশ্যই আমাদের মাতৃভ‚মিকে রক্ষা করে নতুন করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়া করাবো।
এরপর উপদেষ্টাদ্বয় জাতীয় যুব দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত যুব মেলা পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে ১২ জন সফল আত্মকর্মী ও ৩ জন শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠককে জাতীয় যুব পুরস্কার ২০২৪ প্রদান করা হয়।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামানসহ মন্ত্রণালয় ও দপ্তর সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

হাসিনা-কাদেরসহ আ. লীগ নেতৃত্বের বিচার দাবি করলেন তাজকন্যা

কাজির বাজার ডেস্ক

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক তাজউদ্দীন আহমদের বড় মেয়ে শারমিন আহমদ হাসিনা-কাদেরসহ আ. লীগ নেতৃত্বের বিচার দাবি করেছেন। বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন। শারমিন আহমদ বলেন, মাফিয়াতন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের দল থেকে বহিষ্কার করে, পরিচ্ছন্ন কারোর হাতে নেতৃত্ব দিলে এক বা দুই যুগ পরে আওয়ামী লীগ আবার দেশে রাজনীতির মাঠে ফিরে আসতে পারে। তবে, আপাতত এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনার পর শারমিন আহমদের মা জোহরা তাজউদ্দীন আওয়ামী লীগের হাল ধরে বিলুপ্তির হাত থেকে দলটিকে রক্ষা করেন। এ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে শারমিন আহমদ বলেন, ‘আমার মা (১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর) দলের হাল ধরেছিলেন। কিন্তু পররবর্তীতে সে দলটি হাইজ্যাক হয়ে গেল এবং একটি পরিবারের হাতে বন্দি হয়ে গেল। এবারের প্রেক্ষাপটটি কিন্তু আরও ভিন্ন। কারণ, গণঅভ্যুত্থানের সময় এবার এ দলটির হাতে এত এত তরুণের মৃত্যু, জগণের মৃত্যু, মানুষের দেহে এখনও বুলেট। কাজেই আমরা কেন আওয়ামী লীগে যাব? এ আওয়ামী লীগতো একটি মাফিয়া লীগ। এমন আওয়ামী লীগ আমরা কেন করব, যাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই?’
শারমিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগের ভালো লোকগুলোকে একত্র করে, জনতার পাশে দাঁড়িয়ে মাফিয়া লীগের নেতৃত্বে যারা ছিল তাদের বহিষ্কারের দাবি জানাতে হবে। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের কারোরই আর দেশের রাজনীতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। আমি মনে করি শেখ হাসিনা বা শেখ পরিবারের কারোরই আর রাজনীতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই।