স্কুল ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা মামলার রায় মঙ্গলবার

31

স্টাফ রিপোর্টার :
স্কুল ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা মামলার রায় আগামী মঙ্গলবার ঘোষণা করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট Abu 7777-287x300নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে সর্বশেষ সাক্ষী দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মোশারফ হোসেন, কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তারেক মোঃ মাসুদ ও সাঈদের লাশ বহনকারী কোতোয়ালী থানার কনষ্টেবল দেলোয়ার হোসেন।
এ নিয়ে আলোচিত এ হত্যা মামলায় ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত মোট ২৮ জন সাক্ষীর মধ্যে দিয়ে শেষ হলো এ সাক্ষ্য গ্রহণ। ৪ আসামীদেও উপস্থিতিতে আগামী রবিবার মামলার যুক্তিতর্কের তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালতের বিচারক মো. আব্দুর রশিদ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে পুলিশ এ মামলায় অভিযুক্ত এসএমপির এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ কনস্টেবল (বরখাস্ত) এবাদুর রহমান পুতুল, র‌্যাবের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা, সিলেট জেলা ওলামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম রাকিব ও প্রচার সম্পাদক মাহিব হোসেন মাসুমকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। তাদের উপস্থিতিতে গতকাল ৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ফের তাদেরকে পুলিশ কারাগারে প্রেরণ করেছে।
আবু সাঈদকে যেভাবে হত্যা করা হয় : চলতি বছরের ১১ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর রায়নগর থেকে স্কুলছাত্র আবু সাঈদকে (৯) অপহরণ করা হয়। এরপর পুলিশ ১৩ মার্চ রাতে এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুলের কুমারপাড়াস্থ ঝর্ণারপাড় সবুজ-৩৭ নং বাসার ছাদের চিলেকোঠা থেকে সাঈদের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে। পরে এ ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানার কনস্টেবল এবাদুর, র‌্যাবের সোর্স গেদা ও ওলামা লীগ নেতা রাকিবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই তিনজনই আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। নিহত আবু সাঈদ রায়নগর হযরত শাহ মীর (র.) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ও একই এলাকার দর্জিবন্দ বসুন্ধরা ৭৪ নম্বর বাসার আব্দুল মতিনের পুত্র। তাদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার এড়ালিয়াবাজারের খশিলা এলাকায়। সর্বশেষ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ওলামালীগ নেতা মাসুম।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর এই মামলায় সিলেট মহানগর হাকিম ১ম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মহানগর পুলিশের সহকারি কমিশনার (প্রসিকিউশন) আবদুল আহাদ চৌধুরী। মামলাটি তদন্ত করেন কোতোয়ালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসাইন। ওই অভিযোগপত্রে এই ৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ৭ অক্টোবর অভিযোগপত্রের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ২৯ অক্টোবর সিলেটের মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক সাহেদুল করিম চার্জশিট আমলে নিয়ে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নথিপত্র স্থানান্তর করেন এবং ৮ নভেম্বর এই আদালত মাছুমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ও মালামাল ক্রোকের আদেশ দেন। আদেশের একদিনের মাথায় পলাতক আসামী মাছুম ৯ নভেম্বর সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এরপর  চার্জগঠনের কয়েকটি তারিখ পরিবর্তন হয়।
আদালতে যারা সাক্ষ্য দিলেন : ১৯ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন, সাঈদের পিতা মতিন মিয়া, মামা আশরাফুজ্জামান, প্রতিবেশী ফিরোজ আহমদ, ওলিউর রহমান ও শফিকুল ইসলাম। ২২ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন, সাঈদের মা সালেহা বেগম, সাঈদের আরেক মামা জয়নাল আবেদীন, তার শ্যালক সৈয়দ হিলাল, এয়ারপোর্ট থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) গৌছুল হোসেন, এসআই সমরাজ মিয়া ও কনেষ্টবল কাশেম। ২৩ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন, মোঃ সেলিম আহমদ, মোঃ আজির উদ্দিন, আবুল হোসেন, আব্দুস কুদ্দুস, মোক্তাদির আহমদ, দেলোয়ার হোসেন ও আব্দুল আহাদ তারেক। ২৪ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন, সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী-১) মোঃ সাহেদুল করিম, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট (আমলী-২) মোচ্ছা: ফারহানা ইয়াসমিন, সিলেট সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) শামিমুর রশিদ পীর ও আসামী এবাদুর রহমান পুতুলের সঠিক নাম-ঠিকানা যাচাইকারী এএসআই রতন লাল দেব। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) সর্বশেষ সাক্ষ্য দেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মোশারফ হোসেন, কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তারেক মোঃ মাসুদ ও সাঈদের লাশ বহনকারী কোতোয়ালী থানার কনষ্টেবল দেলোয়ার হোসেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পিপি এডভোকেট মোঃ আব্দুল মালেক বলেন, গতকাল আসামীদের উপস্থিতিতে মামলার আইওসহ ৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো সাঈদ হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ। এ মামলায় আদালতে মোট সাক্ষী ২৮ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। বাকীদের সাক্ষ্য নেয়া হয়নি। আগামী রবিবার এ আলোচিত মামলার যুক্তিতর্ক শেষে মঙ্গলবার রায় ঘোষণা হবার সম্ভবনা রয়েছে। তিনি বলেন, গতকাল ৩৪২ ধারা মোতাবেক আসামীদের দোষ স্বীকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এ সময় আসামীরা দোষ স্বীকারে অস্বীকার করেছেন।