ফকীহুল ইসলাম নওরোজ
‘সেরা দলের সেরা গুণ/কথায় কথায় মানুষ খুন’ যারা নিজেদের দলকে সেরা ভাবেন; শ্রেষ্ঠ ভাবেন; তাদের দলকে নিয়ে এখন জনগণের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে উল্লেখিত শ্লোক। যে শ্লোকের চেতনা ছড়িয়ে যাচ্ছে সবখানে; সে চেতনা নিয়ে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন জনগণ; এই জনগণের রাজনৈতিক কর্মসূচীর কোন প্রয়োজন হবে না; প্রয়োজন হবে না দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশনাও। তারা রাজনীতির নামে অপরাজনীতি বন্ধ করবে বাংলাদেশকে ভালোবেসে-শ্রদ্ধা জানিয়ে। কেননা, স্বাধীনতার পর থেকে এই দেশে ক্ষমতালিপ্সু দলগুলো যতবারই ক্ষমতায় এসেছে; ততবারই অন্ধকারের রাজনৈতিক কালোতে ঢেকে গেছে মানচিত্র। যার ধারাবাহিকতায় আজ স্বদেশীরাতো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেই; পাশাপাশি সমস্যার জালে আচ্ছন্ন হচ্ছে বিদেশী বন্ধুরাও; প্রাণ হারাচ্ছে তারা। চলছে একের পর এক হামলা-মামলা-খুন-গুমের রাজনৈতিক নাটক। যে নাটকের বলি আজ জনগণ। তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য নিবেদিত না থাকলেও সরকার নিবেদিত আছে গ্যাস-বিদ্যুৎ- তেলের দাম বাড়ানোর চরম চেষ্টা নিয়ে। বাড়ছে পরিবহন ভাড়া-বাড়ি ভাড়াসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল কিছুর দাম। নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে ছাত্র-যুব-জনতার। তাদের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-জাসদ-ওয়ার্কার্স পার্টিসহ মহাজোটের শরীক দলগুলোর সাথে সাথে যুদ্ধাপরাধী-জামায়াত-শিবির আর জঙ্গীচক্র। এরা রাজপথকে উত্তপ্ত করে দিতে তৈরি হচ্ছে যেই ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে; সেই একই ব্যাংক নির্বাচন এলে অর্থায়ন করে আওয়ামী লীগ-জামায়াত-বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলোকেও। যে কারণে অর্থনৈতিক উৎস হিসেবে বাংলাদেশে সহিংসতার রাজনীতির ধারক ও বাহক এই ব্যাংকটি। এই ব্যাংকের বিরুদ্ধে কোন অবস্থান না নেয়ায় ক্রমশ সহিংসতা বাড়ছে; বাড়ছে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা-অর্থনৈতিক কলুষতা। এমতবস্থায় সরকার জনগণকে ছেলে ভুলোনো গল্প বলার মত করে যতই নিরাপত্তা দেয়ার নাটক করুক না কেন, জনগণ জেনে গেছে যে, সরকারী দলের নেতাকর্মীদের আঁতাত ব্যতিত কোথাও কোন সহিংসতা তৈরি করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তার উপর আবার জামায়াত-শিবির-জঙ্গীদেরকে মদদে দেয়ার লক্ষ্যে গঠিত প্রজন্ম লীগের ১১ ভাগ, বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদের ৬ ভাগ এবং বঙ্গবন্ধু একাডেমীসহ দুই শতাধিক ভূঁইফোড় সংগঠন তো রয়েছেই। এই ভূঁইফোড় আওয়ামী লীগারদেরকে প্রতিরোধ না করে; সন্ত্রাসী-চাদাবাজদেরকে না থামিয়ে নাশকতার আশংকায় ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা যতই জোরদার করা হোক না কেন নির্মমতার রাজনৈতিক কৌশলে এগিয়ে আসবেই হায়েনারা। যা আমাদের কারোই কাম্য হতে পারে না। তাই বলছি, সবাই সচেতন হোন জেগে উঠুন নিজের প্রয়োজনে নয়; দেশ ও মানুষের প্রয়োজনে। তাতে করে দেশ ও মানুষের পাশাপাশি স্ব স্ব অবস্থান কিছুটা হলেও নিরাপদ হবে বলে আশা করছি।
পুলিশ অবশ্য এই বর্তমান নিয়ে আলাপকালে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, বিমানবন্দরে দর্শনার্থী কিংবা যাত্রীদের সঙ্গে আসা স্বজনদের এখন আগের মতো টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। রাজধানীজুড়েই এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন বিমানবন্দর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হওয়ার কারণেই এই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা কতদিন বলবৎ থাকবে সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। কয়েক সপ্তাহ আগে শাহজালাল বিমানবন্দরে বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইন্সের চট্টগ্রামগামী ফ্লাইটে বোর্ডিং পাস ছাড়াই একজন নারী উঠে পড়েন। বিমান উড্ডয়নের আগ মুহূর্তে বিষয়টি নজরে আসে এবং সেই নারীকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। ওই ঘটনার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। শুধু এখানেই শেষ নয়; আমাদেরকে বোকা বানানোর রাস্তায় এগিয়ে যেতে যেতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দরে সব ধরনের দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিমানবন্দর এলাকায় যাত্রী ও যাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনকেও সতর্ক দৃষ্টিতে রাখা হয়েছে। টার্মিনাল ভবনের গ্যালারি ও কনকর্ড হলে সব ধরনের দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। যাত্রীদের সঙ্গে থাকা দর্শনার্থীদের চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। হোসনি দালানে বোমা হামলা, বিদেশী নাগরিক হত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়সহ সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ নগরীর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে থানা ও ফাঁড়ি পুলিশকে। এত কিছুর পরও ঘটছে দুর্ঘটনা, চলছে একের পর এক অন্যায়ের মহড়া। এই সকল কর্মকান্ডের প্রতিবাদে, নাটকের বিরুদ্ধে জনগণ নীরবে নিভৃতে তৈরি হলেও তা সরকারের কানে পৌছাবে না। আর এভাবেই ইনশাআল্লাহ আসবে বাংলাদেশে স্বাধীনতা অর্জনের পর রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা নিয়ে নতুনেরধারা। যে ধারায় বায়ান্ন, যে ধারায় একাত্তর, সে ধারায় আবারো রাজপথ তৈরি হবে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের জন্য নিবেদিত থাকার প্রত্যয়ে। আর সেই সাহসী সময়ের অপেক্ষায় আছে ছাত্র-যুব-জনতা।
‘নিজে বাঁচুন বাঁচান দেশ/ঘুমিয়ে থাকার দিন শেষ।’ একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্মের এই শ্লোগানকে বুকে লালন করতে হবে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে। কেননা, বেড়ায় এখন ফসল খাওয়া শুরু করেছে। যেহেতু চারপাশে সমস্যার জাল বিছিয়ে আবার বলা হচ্ছে, চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর, সিলেটের ওসমানী ও রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দর রয়েছে। নিরাপত্তা কড়াকড়ির অংশ হিসেবে বিমানবন্দরগুলোতে দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এছাড়া যাত্রীদেরও ব্যাপক তল্লাশির পর ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। শাহজালালের নিরাপত্তা বিভাগসহ, সিলেট ও কয়েকটি বিমানবন্দরে কর্মরত সব ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে সব ধরনের সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ভেতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শাহজালালের ভেতরে অবস্থিত সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং ও কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের কাজে নিয়োজিত সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফদেরও বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে বিমানের অন্য বিভাগ থেকে কর্মী এনে কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের কাজে লাগিয়েছে। রবিবার রাত থেকে এই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পুলিশ বলছে, নাশকতার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিমানবন্দর থানা পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি দু’জন বিদেশী নাগরিক হত্যা এবং আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসনি দালানে বোমা হামলার প্রেক্ষাপটে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।’ সেহেতু নতুন প্রজন্মকে মেধা ও শ্রমের রাজনৈতিক কৌশলে এগিয়ে আসতে হবে। ঘরে ঘরে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সামনে একটি যুদ্ধ অপেক্ষা করছে; সেহেতু আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন থাকতে হবে সবসময়। যাতে করে যে কোন অন্যায় দেখলে আমরা সাথে সাথে প্রতিরোধ করতে না পারি; অন্তত যেন সচেতনতা তৈরি করতে পারি। আর এই সচেতনতাই এনে দেবে বাংলাদেশে সহিংসতামুক্ত পরিবশে; তথাকথিত রাজনীতিকদের সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজীমুক্ত পরিবেশ। যেখানে কোন তাবেলা সিজার তো খুন হবেই না বরং অক্ষুন্ন থাকবে বাংলাদেশের সেই স্বাধীনতা; যে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য লক্ষ লক্ষ প্রাণ দিয়েছিলেন আমাদের বীর সন্তানেরা…
অবশ্য স্বাধীনতার পক্ষের রাজনীতি সচেতন নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে বরাবরের মত এই সহিংসতার রাজনীতি নিয়েও আমার রয়েছে কিছু প্রস্তাবনা। সেই প্রস্তাবনা সরকারের কাছে, জনগণের কাছে, ছাত্র-যুব-নারীদের কাছে। প্রস্তাবনাটি হলো এই যে, যদি জনগণের কথা ভেবে বাংলাদেশকে গড়তে চান নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। নির্বাচন কমিশনকে করে তুলুন সর্বস্বীকৃত ও স্বাধীন। তা না হলে নিজের ক্ষতি করে যতই অন্যের রথযাত্রা ভঙ্গ করার ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, বিজয়ী তারাই হবে; যারা ফেরাউনের বিপরীতে বিজয়ী হয়েছিলো; যারা নমরুদের বিপরীতে বিজয়ী হয়েছিলো; যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক বাহিনী-নির্মমতার রাজাকারদের বিজয় অর্জন করেছিলো; তারাই আনবে বাংলাদেশে স্বাধীনতার মান-রাখবে স্বাধীনতার মান এবং গড়বে বাংলাদেশ। অবশ্য সেক্ষেত্রে সোনার দেশ শ্মশান হওয়ার আগে ঘরে ঘরে চাই আবারো সচেতনতা; চাই স্বনির্ভরতা; চাই আন্তরিকতা; মায়ের মত দেশের জন্য-স্বজনের মত দেশের মানুষের জন্য। যারা আজ পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে…।
লেখক-কলামিস্ট।