নরশিংটিলা থেকে লাশ উদ্ধারের ঘটনা ॥ ‘শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে নিজেই স্বামীর লাশ ফেলে ॥ ১৬৪ ধারায় ঘাতক স্ত্রীর জবানবন্দী

66

স্টাফ রিপোর্টার :
গালে চড় মারার কারণে স্বামীর সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে নিচে ফেলে তার বুকের উপর উঠে পরনের Rusna Photo-1ওড়না দিয়ে গলা ফাঁস দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করি। ফজরের পর মৃত স্বামীকে একাই টেনে নিয়ে বাসার গেইটের সামনে লাশটি ফেলে ঘরে চলে আসি।
গতকাল বুধবার বিকেলে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী-১) আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে এভাবে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছেন নিহত রাজমিস্ত্রি রুবেল আহমদের নববধূ স্ত্রী রুশনা বেগম। আদালতের বিচারক মো. সাহেদুল করিম তার খাসকামরায় রুশনা বেগমের প্রায় পৌনে এক ঘন্টার জবানবন্দী রেকর্ড করেন। ধৃত রুশনা বেগম (১৯) সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মন্ডলীভোগ গ্রামের মোস্তফা মিয়ার কন্যা। বিয়ের পর থেকে রুশনা স্বামী রুবেল আহমদের সাথে বাগবাড়ী নরশিংটিলার ১২৯ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন।
রুশনা বেগমের জবানবন্দীর বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজিম পটোয়ারী জানান, পারিবারিক কলহের কারনে ঘটনার দিন রাতে স্বামী রুবেল ও স্ত্রী রুশনার ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে রুবেল স্ত্রীর গালে একটি চড় মারেন। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে রুশনা স্বামী রুবেলকে নিচে ফেলে দিয়ে তার বুকের উপর উঠে পরনের ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন। তিনি বলেন, তখন রুশনা কোন উপায় না পেয়ে ফজরের পর স্বামীর লাশটি একা টেনে নিয়ে বাসার গেইটের সামনে ফেলে ঘরে চলে যায়।  সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে বাসার মালিকের মামা বাসার গেইটের সামনে শোয়া অবস্থায় রুবেল পড়ে থাকতে দেখে রুশানার ঘরে গিয়ে তাকে খাটে বসা দেখতে পান এবং বলেন স্বামী গেইটের সামনে শোয়ে আছে তাকে ঘরে নিয়ে আসো। এ কথা শুনে রুশনা বেগম স্বামী হত্যার নাটক সাজানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রুবেল আহমদের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ওসমানী হাসাপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। গতকাল রুশনা বেগমকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় রুশনা এমএম (আমলী-১) আদালতে প্রায় পৌনে এক ঘন্টা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। সন্ধ্যায় রুশনার জবানবন্দী শেষে তাকে আদালতের নির্দেশে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এসআই আজিম বলেন, গত মঙ্গলবার রুশনা বেগমকে তাদের নরশিংটিলার বাসা থেকে আটক করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও সে স্বামী হত্যার ঘটনাটি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় নিহত রুবেল আহমদের ভাই সেলিম মিয়া বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নং- ১৬ (১১-১১-১৫)। নিহত রুবেল আহমদ বালাগঞ্জ উপজেলার রশিদপুর গ্রামের আব্দুল খালিকের পুত্র।
উল্লেখ্য, বিয়ের চার দিনের মাথায় নগরীর নরশিংটিলার নিজ বাসার সামনে থেকে গত মঙ্গলবার সকালে রুবেল আহমদের (৩২) লাশ উদ্ধার করে লামাবাজার ফাঁড়ি পুলিশ। রুবেল রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গত শুক্রবার সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মন্ডলভোগ গ্রামের মোস্তফা মিয়ার কন্যা রুশনা বেগমকে বিয়ে করেন রুবেল আহমদ।