জগন্নাথপুরে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি, কৃষকের মাথায় হাত

29

potoমোঃ শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর থেকে :
জগন্নাথপুরে হাওর রক্ষা বেড়ি বাঁধ ভেঙে ৪টি হাওরে পানি ঢুকে পড়েছে। হাওরগুলোতে পানি ঢুকে একের পর এক জমি তলিয়ে যাচ্ছে। নিজের চোখের সামনে জমিতে উৎপাদিত পাকা বোরো ধান তলিয়ে যাচ্ছে দেখে কৃষক-কৃষাণীরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। যদিও এবার জগন্নাথপুরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল।
জানা গেছে, গত শনিবার রাতে রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেলতলা এলাকায় কাশেমের ভাঙা নামক স্থানে হাওর রক্ষা বেড়ি বাঁধ ভেঙে প্রথমে নারিকেলতলা গ্রামের হাওর তলিয়ে যায়। পরে নারিকেতলা গ্রামের হাওর তলিয়ে পার্শ্ববর্তী ইছগাঁও গ্রামের হাওরও পানির নিচে তলিয়ে যায়। হাওরগুলোতে উৎপাদিত পাকা ধান তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন কৃষক-কৃষাণীরা। স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করে জানান, এবার বেড়ি বাঁধে নামমাত্র কাজ করা হয়েছে। সময় মতো বাঁধে কাজ না হওয়ায় নদীতে পানি আসার সাথে সাথে বাঁধ ভেঙে হাওরগুলোতে উৎপাদিত প্রায় অর্ধেক পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তবে তলিয়ে যাওয়া হাওরগুলো আয়তনে ছোট ছিল। এদিকে গতকাল রবিবার ভোরে উপজেলার মইয়ার হাওর বেড়ি বাঁধের বড় ডহর নামক স্থানে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে পড়ে। খবর পেয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এদিকে হাওরে পানি ঢুকে একের পর এক জমির পাকা ধান তলিয়ে যাচ্ছে। তা দেখে কৃষকরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। শুধু তাই নয়, এ ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে মইয়ার হাওর তলিয়ে উপজেলার সর্ববৃহৎ নলুয়ার হাওরে পানি ঢুকে পড়েছে। ক্রমান্বয়ে নলুয়ার হাওরও পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া গত কয়েক দিনের একটানা বৃষ্টিপাতে হাওরে হাঁটু ও কোমর পানি জমে অনেক স্থানে পানির নিচে ফসল তলিয়ে গিয়েছিল। তার উপর বেড়ি বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় খুব সহজে হাওরগুলো প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে।
গতকাল রবিবার সরজমিনে দেখা যায়, মইয়ার হাওর রক্ষা বেড়িবাঁধের বড় ডহর নামক স্থানে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ফুট এরিয়া নিয়ে বাঁধ ভেঙে দ্রুত গতিতে হাওরে পানি ঢুকছে। যদিও বাঁধের আরো ৫/৬ টি স্থান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় এসব স্থান দিয়ে বাঁধ ভেঙে হাওরে ব্যাপক আকারে পানি ঢুকতে পারে। তবে যে দিকে পানি ঢুকেছে তা অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত। এখনো বাঁধের ৩ থেকে ৪ ফুট নিচে পানি রয়েছে। অথচ এদিকেই হাওরে পানি ঢুকছে। যে দিকে বাঁধ ভাঙার কথা সে দিকে ভাঙেনি। হাওরে পানি ঢুকে পড়ায় কৃষক ও শ্রমিকরা কোমর এবং পেট পানিতে নেমে তাড়াহুড়ো করে ধান কাটছেন। ধান কেটে অনেকে নৌকা দিয়ে আবার অনেকে মাথায় করে শুকনো স্থানে নিয়ে আসছেন। ভাঙনের প্রায় ১০০ গজ দূরে দেখা যায়, প্রায় ৫ শতাধিক শিকারি (উজাই মাউররা) মাছ ধরার জন্য পলো, সুলফি, ঝাটা, টেটাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওৎপেতে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ বাঁধটির মেরামত কাজে কেউ এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। বেলা আড়াইটার দিকে ভাঙনটি পুনরায় বাধার জন্য প্রথমে চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও পরে জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বেশ কিছু শ্রমিক মেরামত কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ সময় চিলাউড়া গ্রামের কৃষক সহিদ মিয়া অভিযোগ করে জানান, বাঁধের গভীর ভাঙনে বাঁশের গড় না দিয়ে নতুন বালি মাটি ফেলে নামমাত্র কাজ করায় নদীতে পানি আসামাত্র বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে পড়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এদিকে বাঁধ ভাঙার কথা নয়, কেউ বাঁধটি কেটে দিয়েছে। কৃষক আব্দুল মতিন কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, এ হাওরে আমার ১৫ কেদার জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যা দিয়ে আমার পরিবারের এক বছরের খাবার যোগান হতো। এখন আমি কিভাবে সংসার চালাবো বুঝতে পারছি না। এ সময় অন্যান্য কৃষকরা নাম প্রকাশ না করে জানান, হাওরে পানি ঢুকে মইয়ার হাওরের প্রায় অর্ধেক জমির পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ পানি গিয়ে নলুয়ার হাওরও ডুবিয়ে দিচ্ছে। যদি নলুয়ার হাওর তলিয়ে যায় তাহলে কৃষকদের পথে বসতে হবে। জগন্নাথপুর উপজেলা হাওর উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙে ও বৃষ্টির পানিতে এ পর্যন্ত নলুয়ার হাওর, মইয়ার হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে উৎপাদিত প্রায় ৫শ একর জমির পাকা ধান তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখনো হাওরগুলোতে অর্ধেক ধান কাটার বাকি রয়েছে। কৃষকরা তাদের কষ্টার্জিত সোনার ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। যদিও জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান দাবি করে জানান, এ পর্যন্ত মইয়ার হাওরের ৯৫ ভাগ ও নলুয়ার হাওরের ৬৫ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, বাঁধের ভাঙনটি পুনরায় বাধার জন্য মেরামত কাজ চলছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়ে যাবে। বাঁধটি বাঁধা হলে এখনো হাওরের বাকি ধান রক্ষা পাবে।