ছাতকে শিশু ইমন অপহরণকারী চক্রের হোতা ইউপি জামায়াত সেক্রেটারী গ্রেফতার ॥ পুলিশের কাছে হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা

41

Sujon--1 copyছাতক থেকে সংবাদদাতা :
ছাতকে শিশু ইমন অপহরণের মূল নায়ক ইমাম সুয়েবুর রহমান সুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘাতক মসজিদের ইমাম সুজন কুমিল্লা পালিয়ে যাবার সময় গতকাল বুধবার সকালে সিলেট কদমতলী বাসষ্ট্যান্ড থেকে ইমনের পরিবারের লোকজন তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। ঘাতক সুয়েবুর রহমান সুজন ছাতকের নোয়ারাই ইউনিয়নের বাতিরকান্দি গ্রামের একটি মসজিদের ইমাম ও নোয়ারাই ইউনিয়ন জামাতের সেক্রেটারী। সে ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের ব্রাহ্মনজুলিয়া গ্রামের মৃত মখলিছ মিয়ার পুত্র। তার স্বীকারোক্তি মতে ঘাতক সুজনকে সাথে নিয়ে পুলিশ অপহৃত ইমনের মৃতদেহ উদ্ধারে বুধবার দিনভর বাতিরকান্দি গ্রামের দু’টি খালসহ বিভিন্ন স্থানে তল্লাসী চালায়। খালের পানি নিষ্কাশন করে ব্যাপক তল্লাশী চালিয়ে ব্যর্থ হলেও মসজিদের সিঁড়ির পাশের একটি গর্ত থেকে রক্তমাখা কাপড়, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বিষের বোতল, একটি ছুরি ও সুজনের কাছ থেকে তার ব্যবহৃত বিভিন্ন কোম্পানীর ১৯টি সীম উদ্ধার করে পুলিশ। ইমনের মৃত দেহের কোন সন্ধান না পেয়ে সন্ধ্যায় তল্লাশী অভিযান আপাতত শেষ করে পুলিশ। তল্লাশী অভিযান চলাকালে শিশু ইমন অপহরণ ও হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে পুলিশের কাছে ঘাতক সুজন। তার বর্ণনা মতে ২৭ মার্চ বিকেলে নিজ বাড়ির পাশে ছাতক-দোয়ারা সড়ক থেকে শিশু ইমন অপহৃত করে ঘাতক সুজন ও তার সহযোগীরা। মুক্তিপণের দু’লক্ষ টাকা না পেয়ে অপহরণকারীরা বিভিন্ন স্থানে শিশু ইমনকে নিয়ে অবস্থান করতে থাকে। সোমবার রাতে ইমনের বাড়ী সংলগ্ন মসজিদের আঙ্গিনায় এনে ইমনকে হত্যা করার পরিকল্পনা নেয় তারা। এ সময় শিশু ইমন পানির পিপাসায় কাতরাতে থাকলে তাকে বিষ মেশানো পানি পান করতে দেয়া হয়। এ পানি পান করে বিষের জ্বালায় ছটফট ও বমি করতে থাকলে ধরা পড়ার আশংকায় ঘাতক সুজনসহ তার সহযোগীরা ধারালো ছুরি দিয়ে ইমনকে জবাই করে। পরে ইমনের লাশ বস্তায় ভর্তি করে পার্শ্ববর্তী একটি খালে তাকে মাটি চাপা দিয়ে রাখে বলে জানায়। ছুরি, বিষের বোতল ও রক্তমাখা কাপড় মসজিদের পার্শ্বে একটি গর্তে পুতে রাখে তারা।
এদিকে অপহরণের পর থেকে ঘাতক মসজিদের ইমাম সুজন এলাকায় থেকে ইমনের পরিবারের সাথে সখ্যতা বাড়িয়ে তাকে সন্দেহের বাইরে রাখার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ঘাতক সুজনের রহস্যজনক আচরণে ইমনের পরিবার তাকে সন্দেহের চোখে দেখলে সে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। ঘাতক সুজন ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করতে পুলিশ হন্য হয়ে খোঁজতে থাকে। মোবাইল ট্যাকিংয়ের মাধ্যমে তার অবস্থান জানতে পুলিশ বার-বার চেষ্টা করলে সুজনের অবস্থান সিলেট রেঞ্জের ভিতরে রয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়। ঘাতক সুজনের অবস্থান সম্পর্কে পুলিশ আশ্বস্থ করলে ইমনের পরিবারের লোকজন মঙ্গলবার থেকে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে তাকে খোঁজাখোঁজি করতে থাকে। কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে তার সন্ধান করার সময় সকালে কদমতলী বাসষ্ট্যান্ড থেকে কুমিল্লাগামী বাসে উঠার সময় তাকে ঝাপটে ধরে বাতিরকান্দি গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর পুত্র অপহৃত ইমনের মামাতো ভাই আব্দুল আহাদ। পরে সিলেট পুলিশের সহায়তায় তাকে ছাতক থানায় হস্তান্তর করা হয়। অপহৃত শিশু ইমন বাতিরকান্দি গ্রামের সৌদি প্রবাসী জহুর আলীর পুত্র ও লাফার্জের কমিউনিটি বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর ছাত্র। অপহরণের ঘটনায় মুল নায়ক মসজিদের ইমাম সুয়েবুর রহমান সুজনসহ এ পর্যন্ত জড়িত সন্দেহে আরো ৫জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ছাতক থানার ওসি হারুন-অর রশীদ চৌধুরী জানান, ঘাতক সুজনের স্বীকারোক্তি মতে বিভিন্ন স্থানে লাশ উদ্ধারের অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু সুজনের অগোচালো কথার ভিত্তিতে লাশ উদ্ধার করতে না পারলেও হত্যা কান্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।