মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ছাত্র খালেদ হত্যা মামলার ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট ॥ অপহরণের ১২ লক্ষ টাকার জন্য খুন

73

গোলাপগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
গোলাপগঞ্জের বহুল আলোচিত সিলেট-মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ছাত্র খালেদুজ্জামান অপহরণ ও খুনের ঘটনায় ৮ জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির চার্জশীট দিয়েছে বিয়ানীবাজার মডেল থানা পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এবিএম বদরুজ্জামান স্বাক্ষরিত চার্জশীটে মামলার এজাহার নামীয় প্রধান আসামী হুমায়ুর কবিরত, তার পিতা -মাতা ও ২ বোনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট প্রধান করা হয়েছে। উল্লেখ্যে গত রমজান মাসে গোলাপগঞ্জ উপজেলার নিমাদল গ্রামের ছালেহ আহমদ ছলকু মিয়ার পুত্র, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ছাত্র খালেদুজ্জামান খালেদ (২০) ও তার খালাতো ভাই জহিরুল ইসলাম তাদের পূর্ব পরিচিত হুমায়ুন কবির ও তার সহযোগীদের দ্বারা অপহৃত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র খালেদুজ্জামানের সাথে গোলাপগঞ্জ বাজারের নুর ম্যানশনের স্পাইডার এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স এর দোকানে পরিচয় হয় কবিরের। সেই সুবাদে মাঝে মধ্যে কম্পিউটার ও ল্যাপটপের এর কাজ করাতে খালেদ কবিরের দোকানে প্রায়ই আসত। গত ১৭ জুলাই ২০১৪ইং তারিখে খালেদের বন্ধু জহিরুল মোবাইল ফোনে কবিরকে জানায় সে একটি ল্যাপটপ বিক্রি করবে। ঠিক সেই মুহূর্তে কবির তার সহযোগীদের নিয়ে পরিকল্পনা করে যে জহিরুলকে আটকিয়ে মুক্তিপণের জন্য কিছু টাকা চাইবে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২০ জুলাই তারিখে কবিরের সাথে জহিরুলের কথা হয়। পরদিন সকালে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কবির সিলেট করিম উল্ল¬াহ মার্কেটের নিচতলায় দাঁড়িয়ে জহিরুল ইসলামকে ফোন করে তার ল্যাপটপ সঙ্গে করে নিয়ে আসতে বলে। তখন মার্কেটের ৫ম তলায় কাজে আসা জহিরুল ও খালেদুজ্জামান মার্কেটের নিচ তলায় এসে কবিরের সাথে দেখা করে ও জহিরুল তার ল্যাপটপ দেখায়। এ সময় কবির জানায় ল্যাপটপ ক্রয়ের কাষ্টমার তার এলাকায় আছে। তার সাথে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে খালেদুজ্জামান ও জহিরুল বিয়ানীবাজার থানাধীন রামধাস্থ উত্তর চন্দগ্রাম কবিরের বাড়িতে যায়। পরিকল্পনা মোতাবেক আগে থেকে কবিরের বাড়িতে সহযোগি মুকিত ও ফাহিম তার কক্ষে অবস্থান করছিল। জহিরুল ও খালেদ কবিরের ঘরে প্রবেশ করা মাত্রই ফাহিমের হাতে থাকা ডেকার দ্বারা জহিরুল ও খালেদকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে থাকে। অত:পর তাদের দুইজনকে ২টি চেয়ারে বসিয়ে রামদা ও খেলনা পিস্তল দ্বারা জীবননাশের ভয়ভীতি দেখায় মুকিত ও ফাহিম। এ সময় তারা কস্টেপ দ্বারা দুইজনের সারা শরীর পেঁচিয়ে বাঁধে। এক পর্যায়ে কবির মুক্তিপণের জন্য তাদের কাছে ১২ লক্ষ টাকা দাবি করে। জহিরুল ৩ লক্ষ টাকা দিতে সম্মত হয়। ৩ লক্ষ টাকা দিলে খালেদকে ছেড়ে দেবে বলে খালেদুজ্জামানকে আটক রেখে জহিরুল ইসলামকে ছেড়ে দেয়। জহিরুল গোলাপগঞ্জ থানাধীন হেতিমগঞ্জ তার মামা সবুজের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানায়। জহিরুল কবিরের বাড়ি থেকে যাওয়ার পর আটক থাকা খালেদুজ্জামানকে রুমের মধ্যে মুকিত ও ফাহিম দুই জনে দুই পাশে ধরে রাখে এবং খালেদকে কস্টেপ দিয়ে শক্তভাবে নাখ মুখ পেঁচিয়ে বেঁধে ফেলায় শ্বাসরোধ হয়ে কবির মারা যায়। তখন তার লাশ কবিরের পালং এর নিচে রাখা হয়। পরে কবির জহিরুল ইসলামকে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে আসার জন্য ফোন করলে জহিরের মামা সবুজ ফোন ধরে বলে যে তারা টাকা নিয়ে আসছে। এরপর ২১ জুলাই ২০১৪ইং কবির, মুকিত ও ফাহিম ইফতারের পর পর সড়ক ফাঁকা থাকায় লাশ প্রাইভেট কারে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। অপহৃত হওয়ার ৪ দিন পর ২৫ জুলাই সকালে ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীতে কষ্টেপ দিয়ে মোড়ানো হাত-পা বাঁধা অবস্থায় খালেদের লাশ পাওয়া যায়। খালেদ নিখোঁজ হওয়ার পর তার পিতা প্রথমে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় ও পরবর্তী পর্যায়ে বিয়ানীবাজার থানায় যোগাযোগ করেন। লাশ পাওয়া পর খালেদের পিতা ছলুছ মিয়া বিয়ানীবাজার থানায় ৮ জনকে অভিযুক্ত করে এজাহার নামীয় আসামীদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিয়ানীবাজার উপজেলার সাং- উত্তর চন্দ্র গ্রামের আসামী হুমায়ুন কবির (২৫), মৃত বশারত আলীর পুত্র কবিরের পিতা সাইব উদ্দিন (৫০), গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউপির উত্তর পাড়া গ্রামের আব্দুছ ছত্তারের পুত্র ফাহিম আহমদ (২৫) ১৬৪ ধারায় হত্যার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দেয়। চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামীরা হচ্ছে- বিয়ানীবাজার থানার সাং- উত্তর চন্দ্র গ্রামের হুমায়ুন কবির (২৫), মৃত বশারত আলীর পুত্র (ঘাতক)কবিরের পিতা সাইব উদ্দিন (৫০), জকিগঞ্জ উপজেলার বিলেরবন্দ গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের পুত্র মোহাম্মদ মুকিত আল মাহমুদ (২২), বিয়ানীবাজার থানার মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত হাজী যোয়াদ আলীর পুত্র মোহাম্মদ গৌছ উদ্দিন (৫০), গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউপির উত্তর পাড়া গ্রামের আব্দুছ ছত্তারের পুত্র ফাহিম আহমদ (২৫), বিয়ানীবাজার থানার সাং- উত্তর চন্দ্র গ্রামের কবিরের মা- রিনা বেগম (৪৫) স্বামী সাইব উদ্দিন, কবিরের বোন লাকী (২০) ও ফারজানা ডলি (১৯)। তাদের বিরুদ্ধে দঃ বিঃ আইনে ৩৮৭/৩৬৪/৩০২/২০১/৩৪ ধারার প্রাথমিক তদন্তে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় আদালতে বিচারের জন্য প্রেরণের অনুমোধন লাভ করলে গত ১২ মার্চ ২০১৫ ইং তারিখে আদালতে হাজির করা হলে নিহত খালেদের পিতা মামলার বাদী সালেহ আহমদ ছলুছ মিয়া পুত্র হত্যার বিচারের অপেক্ষায় আছেন। নিহত খালেদুজ্জামান (২২) গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের নিমাদল গ্রামের ছল¬ুছ মিয়ার বড় ছেলে। খালেদের বাবার মনে অনেক আসা ছিল ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করে বড় একটি চাকরী করাবেন। কিন্তু এর ভিতর ঘাতক কবির তার ছেলের প্রাণটা কেড়ে নিল।