স্বপ্নের ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

22

স্পোর্টস ডেস্ক :
during the 2015 Cricket World Cup Semi Final match between New Zealand and South Africa at Eden Park on March 24, 2015 in Auckland, New Zealand.জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে হেরে যাওয়াই যেন প্রোটিয়াদের ললাট লিখন। কখনও বৃষ্টি আইন, কখনও সমীকরণের হিসাবে ভুল, কখনও বা নেহাতই ভাগ্যের সহায় না হওয়ায় বারবার বিশ্বমঞ্চ থেকে কেঁদেই ফিরতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
বিশ্বকাপের একাদশ আসরেও সেই ‘অভিশাপ’ বয়ে বেড়ালো এবি ডি ভিলিয়ার্সের বাহিনী। অনেকটা স্নায়ুচাপে পড়েই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেটে হেরে এবারেও সেমিফাইনালের আসর থেকে বিদায় নিল প্রোটিয়ারা। এক বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় কিউইরা।
টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৮১ রান তোলে দ. আফ্রিকা। ফাফ ডু প্লেসিস, ডি ভিলিয়ার্স, ডেভিড মিলার আর রিলে রুশোর ব্যাটে ভর করে প্রোটিয়ারা এ রান সংগ্রহ করে।
বৃষ্টির কারণে ৫০ ওভারের ম্যাচটি কমিয়ে ৪৩ ওভারে নামিয়ে আনা হয়। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বমঞ্চের ফাইনালে উঠতে হলে কিউইদের টার্গেট দাঁড়ায় ৪৩ ওভার থেকে ২৯৮ রান (ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে)।
অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে টস জিতে ব্যাটিয়ের সিদ্ধান্ত নেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স। ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন হাশিম আমলা ও কুইন্টন ডি কক।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান হাশিম আমলার ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি কিইউ ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্ট। এরপর নিজের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে সেই আমালাকে সরাসরি বোল্ড করে সাজঘরে পাঠিয়ে দায় মেটান তিনি। আমলা আউট হওয়ার আগে করেন ১০ রান। ইনিংসের দ্বিতীয় ও ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম ওভারেও দুবার স্লিপে ক্যাচ মিস করেন নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডাররা।
দলীয় ৩১ রানের মাথায় আরেক ওপেনার কুইন্টন ডি কক ট্রেন্ট বোল্টের দ্বিতীয় শিকারে সাজঘরে ফেরেন। টিম সাউদির তালুবন্দি হওয়ার আগে ডি কক করেন ১৪ রান।
দলীয় ৩১ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ব্যাটিং ক্রিজে ফাফ ডু প্লেসিস এবং রিলে রুশো মিলে ৮৩ রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নেন। দলীয় ২৭তম ওভারে কোরি অ্যান্ডারসনের বলে গাপটিলের হাতে ধরা পড়েন ৩৯ রান করা রুশো। এক হাতে অসাধারণ ক্যাচটি লুফে নেন গাপটিল।
ম্যাচের ৩৮তম ওভারে বৃষ্টি হানা দিলে বন্ধ হয়ে যায় প্রথম সেমিফাইনালের ম্যাচ। বৃষ্টির পর আবারো মাঠে বল গড়ায়। তবে, ম্যাচ অফিসিয়ালদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ম্যাচটি কমিয়ে ৪৩ ওভার করা হয়।
ম্যাচের ৩৯তম ওভারে ভিলিয়ার্স আর ডু প্লেসিসের ৭৩ বলে ১০৩ রানের জুটি গড়ার পর সাজঘরে ফেরেন ডু প্লেসিস। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৫তম অর্ধশতক হাঁকিয়ে অ্যান্ডারসনের বলে উইকেটের পিছনে ধরা পড়ার আগে ১০৭ বলে ৭টি চার আর একটি ছয়ে ডু প্লেসিস ৮২ রান করেন।
প্রোটিয়াদের হয়ে দলপতি ডি ভিলিয়ার্স করেন অপরাজিত ৬৫ রান। ৪৫ বলের ইনিংসে ভিলিয়ার্স ৮টি চার আর একটি ছক্কা হাঁকান। আর শেষ দিকে ব্যাটিং ক্রিজে আসা ডেভিড মিলার মাত্র ১৮ বলে ৪৯ রান করে অ্যান্ডারসনের বলে উইকেটের পিছনে লুক রঞ্চির গ্লাভসবন্দি হন। তার ইনিংসে ছিল ৬টি চারের পাশাপাশি ৩টি ছয়।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন কোরি অ্যান্ডারসন। ৬ ওভারে ৭২ রানের বিনিময়ে তিনি এ উইকেট শিকার করেন। এছাড়া ৯ ওভারে ৫৩ রান খরচায় ট্রেন্ট বোল্ট নেন দুটি উইকেট।
৪৩ ওভার থেকে ২৯৮ রানের টার্গেট নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। বৃষ্টি আইনে কিউইদের সামনে এ টার্গেট দাঁড়ায়। স্বাগতিকদের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে আসেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম এবং মার্টিন গাপটিল। প্রথম দুই ওভার থেকেই কিউই ওপেনাররা তুলে নেন ২৬ রান। আর ৫ ওভার থেকেই দুই ওপেনার তুলে নেন ৭১ রান।
ওপেনিংয়ে নামা ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ব্যাটে ঝড় তুলে ২২ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩১তম অর্ধশতক হাঁকান। ইনিংসের সপ্তম ওভারে মরনে মরকেলের প্রথম বলে ডেল স্টেইনের তালুবন্দি হন তিনি। আউট হওয়ার আগে ম্যাককালাম ২৬ বল খেলে ৮টি চার ও ৪টি ছয়ে করেন ৫৯ রান।
দলীয় ৭১ রানের মাথায় কিউই ওপেনার ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ফেরার পর ইনিংসের নবম ওভারে মরনে মরকেল তার দ্বিতীয় শিকারে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান কেন উইলিয়ামসনকে। আউট হওয়ার আগে ১১ বলে ৬ রান করেন উইলিয়ামসন।
দলীয় ৮১ রানে দুই উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ড ফর্মের তুঙ্গে থাকা মার্টিন গাপটিলকে হারায় ১২৮ রানের মাথায়। ৩৮ বলে তিনটি চার আর একটি ছয়ে ব্যক্তিগত ৩৪ রান করে রানআউট হয়ে ফেরেন গত ম্যাচের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান গাপটিল। আউট হওয়ার আগে টেইলরকে নিয়ে ৪৭ রানের জুটি গড়েন গাপটিল।
টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারানো নিউজিল্যান্ডকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন রস টেইলর। তবে ইনিংসের ২২তম ওভারে ডুমিনির বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন টেইলর। আউট হওয়ার আগে তিনি ৩৯ বলে চারটি চারের সাহায্যে ৩০ রান করেন।
প্রথম সেমিফাইনালে টপঅর্ডারের চার ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরার পর কিউইদের রানের চাকা সচল রাখেন গ্রান্ট ইলিয়ট এবং কোরি অ্যান্ডারসন। এ দু’জন মিলে ১০৩ রানের জুটি গড়েন। তবে, ইনিংসের ৩৮তম ওভারে মরকেলের তৃতীয় শিকারে ফেরেন অ্যান্ডারসন। ডু প্লেসিসের তালুবন্দি হয়ে অ্যান্ডারসন আউট হওয়ার আগে ৫৭ বলে ৫৮ রান করে।
গ্রান্ট ইলিয়ট করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৮৪ রান। তার ৭৩ বলের ইনিংসে ছিল ৭টি চার আর ৩টি ছয়।