হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
লাখাইয়ে নির্বিঘেœ বাল্যবিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও প্রশাসন অবগত থাকা সত্ত্বেও এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। তবে এর সাথে স্থানীয় প্রভাবশালীরা জড়িত বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শওকত আলী। তিনি বলেন, কয়েকদিন পূর্বে এ বিয়ের আয়োজন হয়েছিল। তখন আমি তা ভেঙ্গে দিয়েছিলাম। কিন্তু এবার স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে এ বিয়েটি সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বয়স নির্ধারণের সার্টিফিকেটও (জন্ম নিবন্ধন) তারা এনেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বামৈ ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান জানান, আমরা বয়স নির্ধারণ করিনা। এ জন্য আমরা ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দিই। এ মেয়ের ক্ষেত্রে তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট বয়স নির্ধারণের জন্য লিখিত আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে তিনি মেডিকেল চেকআপ করার জন্য বলেন। পরে তারা লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে সিভিল সার্জনের কাছে পাঠানো হয়। পরে সদর হাসপাতাল থেকে তার বয়স ১৭ বছরের উপরে লিখে দেয়া হয়। এমন একটি কাগজ তারা দেখালে আমরা জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট দিই।
একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মেম্বার তোফাজ্জল জানান, মেয়েটির বয়স ১৪/১৫ বছর হবে। সে কার কাছ থেকে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট নিয়েছে তা আমার জানা নেই। বিয়ের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আমি অবহিত করেছিলাম। তিনি একবার বিয়ে বন্ধও করেছিলেন। এবারও পুলিশ গিয়েছিল। কিন্তু কিভাবে বিয়ে হয়েছে তা আমি জানিনা। এদিকে উক্ত বাল্য বিয়ে দ্রুত বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি করেন ওই ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মোঃ ইকবাল হোসেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ওই গ্রামের আলা উদ্দিনের ১৪ বছর বয়সী মেয়ে লিপন আক্তার ও একই গ্রামের জলিল মিয়ার ছেলে জামিল মিয়া মধ্যে বিয়ের আয়োজন করে তাদের পরিবার। প্রায় দুইমাস পূর্বে প্রথমে তাদের বিয়ের দিন ধার্য্য করা হয়। তখন বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করলে তিনি পুলিশ পাঠিয়ে উভয়পক্ষের অভিভাবককে নিয়ে আসেন। মেয়েটি প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেয়া হবেনা মর্মে তাদের নিকট থেকে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে গোপনে বিয়েটি সম্পন্ন করার জন্য উভয়পক্ষ মরিয়া হয়ে উঠে।
এ প্রেক্ষিতে তারা গতকাল শুক্রবার আবারও বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে। এর আগে বিয়ের ব্যাপারে আইনী জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কায় বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে তা ম্যানেজ করে। তিনি আবেদনে লিপন আক্তারের জন্ম তারিখ হিসেবে ২০ মে ১৯৯৯ইং তারিখ উল্লেখ করেছেন। সে হিসেবে গতকাল তার বয়স হয়েছিল ১৫ বছর ৯ মাস ২৪ দিন। বিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অনুযায়ী ২০০৬ সালের ৭ জানুয়ারী সে নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। এ অবস্থায় বিষয়টি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুর রউফ এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন।