কাজিরবাজার ডেস্ক :
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ধার্য তারিখে হাজির না হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ এজলাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদ্দার এ আদেশ দেন। মামলার অপর আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে ৪ মার্চ আদালতে হাজির করতে তার আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়েছেন বিশেষ আদালত। একই সঙ্গে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় সাক্ষীদের মধ্যে ১০ জনকে একই দিন হাজির করতে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
এদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তাৎক্ষণিক নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়াসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এরই মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের সামনে আরও পুলিশ বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনার। খালেদা জিয়াকে যে কোনো মুহূর্তে গ্রেফতার করা হতে পারে- এমন আশঙ্কা করছেন অনেকে। এরই মধ্যে গুলশান ও ক্যান্টনমেন্ট থানায় পৃথক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না।
জানা গেছে, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিচারক বিশেষ এজলাসে বসেন। এ সময় দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে আবার সময় চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। আদালত তা নাকচ করে সাক্ষ্য গ্রহণের আদেশ দেন। এর পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক হারুন অর রশিদের সাক্ষ্য প্রদান শেষ হয়। এর পরই খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
খালেদা জিয়র পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এজে মোহাম্মদ আলী, সানাউল্লাহ মিয়া, মহসীন মিয়া, জাকির হোসেন প্রমুখ। দুদকের পক্ষে ছিলেন এডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল। তাকে সহায়তা করেন দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আবদুস সালাম, কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
আদালতের আদেশে বলা হয়, ২৯ জানুয়ারি ধার্য দিনে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাকে অবশ্যই হাজির করবেন বলে জানিয়েছিলেন। জামিনদাররা সে কথা রাখেননি। এছাড়া নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, মামলা দুটিতে ৬৩টি ধার্য তারিখে খালেদা জিয়া মাত্র সাতবার আদালতে হাজির হয়েছেন। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে সাক্ষীকে জেরার জন্য আবেদনও করেননি আইনজীবীরা। তাই মামলার কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেয়া হলো।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের তহবিল সংগ্রহের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক। মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। অপর চার আসামি হলেন বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর একান্ত সহকারী সচিব জিয়াউল ইসলাম এবং সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
জিয়া চ্যারিটেবেল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়।