র‌্যাব গ্রেফতার করেছে মান্নাকে

22

1_125125কাজিরবাজার ডেস্ক :
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সাদা পোশাকের পুলিশ ‘আটক’ করেছে। গত সোমবার রাতে বনানীর এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়া যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন মান্নার স্ত্রী মেহের নিগার। মান্নাকে আটকের খবর পুলিশ স্বীকার না করায় বনানী থানায় জিডি করা হয়েছে। মান্নাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে মঙ্গলবার বিকালে হাইকোর্টে রিট করেন তার স্ত্রী। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, মান্নাকে আটক কিংবা গ্রেফতারের কোনো তথ্য তার কাছে নেই। পরিবারের অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় সংলাপের অন্যতম উদ্যোক্তা মান্নার সঙ্গে বিএনপির নেতা সাদেক হোসেন খোকার অডিও ক্লিপ ফাঁস হওয়ার পর মান্নাকে আটক করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সংগ্রহশালায় ভিপিদের নামফলকের তালিকা থেকে মঙ্গলবার মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম মুছে দিয়েছে ছাত্রলীগ। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইফতেখার আহমেদ বাবু জানান, মান্নাকে গ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করায় এর মধ্যে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র কাজ করছে কিনা, তা ভেবে দেখার বিষয়।
মান্নার স্ত্রী মেহের নিগার বলেন, সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে বনানীর ই ব্লকের ১৭/এ সড়কের ১২ নম্বর বাসা থেকে তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের পুলিশ। বাসাটি তার ভাতিজির। এ সময় তারা কোনো পরিচয়পত্র দেখায়নি। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা মান্নাকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন। মান্নার সন্ধান দাবিতে বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বনানীর ওই বাসার পাশের এক বাসিন্দা জানান, তিনি গভীর রাতে ওই বাসার সামনে বেশ কয়েকটি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। মান্নার ভাতিজি শাহনামা শারমিন বলেন, সোমবার রাত ১১টার দিকে মান্না তাদের বাসায় আসেন। তখন তিনি একটি মাইক্রোবাস দেখতে পেয়েছেন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে সাদা পোশাকের পাঁচ থেকে ছয়জন বাসার গেটে এসে নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয় দেয়। এ সময় বাসার লোকজন সকাল না হওয়া পর্যন্ত দরজা খুলতে অস্বীকার করে। পরে তারা দরজা ভেঙে ফেলার হুমকি দিলে দরজা খুলে দেয়া হয়। এর পরই ওই ব্যক্তিরা বাসায় ঢুকে মান্নাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। মান্নার ভাই মোবায়েদুর রহমান বলেন, তারা ভেবেছিলেন মান্নাকে ডিবি পুলিশ নিয়ে গেছে। তারা একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে। তাই তাদের শঙ্কা ছিল না। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে যখন তারা টেলিভিশনে দেখতে পেলেন পুলিশ বলছে, ডিবি মান্নাকে নেয়নি, তখন তারা থানায় জিডি করেন।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মান্নার অবস্থান জানতে চেয়ে তার ভাইয়ের স্ত্রী সুলতানা বাদী হয়ে বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ডিবি পরিচয়ে পাঁচ থেকে ছয় ব্যক্তি মান্নাকে বাসা থেকে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে গেছে। জিডির বিষয়ে বনানী থানার ওসি মাহবুব হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জিডি গ্রহণ করা হয়েছে। ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে মান্নাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে রিট : মান্নাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন তার স্ত্রী মেহের নিগার। মঙ্গলবার বিকালে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করা হয়। আজ রিট আবেদনটির শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে।
ভিপি তালিকা থেকে মান্নার নাম মুছে দিল ছাত্রলীগ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সংগ্রহশালার ভিপিদের নামফলকের তালিকা থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম মুছে দিয়েছে ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে সংগ্রহশালায় ভিপিদের টাঙানো ছবির সারি থেকে তার ছবি নামিয়ে বাইরে নিয়ে পুড়িয়ে দেয় সংগঠনটির ৮ থেকে ১০ নেতাকর্মী। মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জয়দেব নন্দীর নেতৃত্বে মান্নার নাম মুছে দিয়ে তার ছবি পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুর রহমান জীবন, সহ-সম্পাদক আসাদুজ্জামান নাদিম, ঢাবি ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্পাদক শেখ ফয়সল প্রমুখ। মাহমুদুর রহমান মান্না ১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালে দুই মেয়াদে ডাকসুর ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জয়দেব নন্দী বলেন, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন তাদের অভিভাবকরা স্বপ্ন দেখেন, তাদের সন্তান শিক্ষিত হয়ে জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে। মাহমুদুর রহমান মান্না লাশ ফেলার যে নীলনকশা একেঁছেন, তা হলো এসব অভিভাবকের বুক খালি করার নীলনকশা। শেখ ফয়সল বলেন, ঢাবিকে নিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো ব্যক্তিরা যাতে কোনো ধৃষ্টতা দেখাতে না পারে, সেজন্য এ কাজটি করেছে ছাত্রলীগ। ডাকসু সংগ্রহশালার সংরক্ষক গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, এ সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানান তিনি।
গ্রেফতার অস্বীকারের মধ্যে ষড়যন্ত্র কাজ করছে : নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইফতেখার আহমেদ বাবু বলেছেন, মান্নাকে গ্রেফতার ও অস্বীকার করার মধ্যে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র কাজ করছে কিনা, তা ভেবে দেখার বিষয়। আমরা অবিলম্বে মান্নার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ ও তার আটকের কারণ জানতে চাই। বৃহত্তর স্বার্থে তার মুক্তিও দাবি করছি। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন ইফতেখার আহমেদ বাবু।
তিনি বলেন, আজ সংবাদ সম্মেলনে মান্নার উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু রাতেই ‘আটক’ হওয়ায় তিনি থাকতে পারেননি। বাবু বলেন, আমাদের দেশে ছাত্ররা সব সময় আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত ও বিস্তৃত করা খুবই জরুরি। দেশের বর্তমান অবস্থায় এটা কীভাবে সম্ভব, তা নিয়েই মান্না কথা বলেছিলেন। কিন্তু ওই বক্তব্যকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করে তার বিরুদ্ধে লাশ চাওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনীর কোনো কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার প্রস্তাব নিয়েও পরিস্থিতি ঘোলা করা হচ্ছে। রাজনীতির প্রয়োজনে সবার সঙ্গে কথা বলা দরকার। এর সঙ্গে ১/১১ বা অন্য কোনো ষড়যন্ত্রের অবিষ্কার দুরভিসন্ধিমূলক। তিনি বলেন, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণের জন্য নাগরিক ঐক্য জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে শান্তির প্রস্তাব দিয়েছে। একই দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
মান্নার বক্তব্য একান্ত নিজস্ব : মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা এবং অজ্ঞাত এক ব্যক্তির সঙ্গে টেলিফোন কথোপকথনে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন বলে প্রচারিত হয়েছে, তা মান্নার একান্ত নিজস্ব বক্তব্য। মঙ্গলবার এক যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ এ কথা জানিয়েছেন। তারা আরও বলেন, সিপিবি এসব বক্তব্যকে অগ্রহণযোগ্য, ক্ষতিকর ও নিন্দনীয় বলে মনে করেন। তার এ বক্তব্যের সঙ্গে সিপিবির রাজনৈতিক অবস্থানের কোনো মিল নেই। এছাড়া মান্নার নেতৃত্বে পরিচালিত নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে তারা কোনো রাজনৈতিক জোটে শরিক নেই।
এদিকে গতকাল মধ্য রাতে মাহমুদুর রহমান মান্নার গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে র‌্যাব। র‌্যাব জানিয়েছে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।