কাজিরবাজার ডেস্ক :
মানবতাবিরোধী অপরাধে তিনটি অভিযোগে জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার নয়টি অভিযোগের মধ্যে ছয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে এক, চার ও সাত নম্বর অভিযোগ দোষি প্রমাণিত হওয়ার আদালত তাকে ফাঁসি দেয়।
নয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচ, আট ও নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়। এছাড়া দুই ও সাত নম্বর অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এছাড়া তিন নম্বর অভিযোগে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এর আগে বেলা এগারোটা ১৫ মিনিটে মুক্তিযুদ্ধে পাবনা জেলায় যুদ্ধাপরাধের হোতা সুবহানের মামলার রায় ঘোষণা শুরু হয়েছে। ১৬৫ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম।
এর আগে সকাল সাড়ে দশটার পরে ট্রাইব্যুনালে এসে বেলা এগারটা ৩ মিনিটে এজলাস কক্ষে আসন নেন বিচারপতিরা। শুরুতে সংক্ষিপ্ত ভূমিকা বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। বেলা ১০টা ৫৮ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানা থেকে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে সুবহানকে।
এদিকে রায়ের কিছুক্ষণ আগে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ট্রাইব্যুনালের দক্ষিণ গেটের সামনে পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে কিছু সময়ের জন্য ভেতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। পরক্ষণেই আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।
চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক জানান, বুধবার সকাল ৮টা ৫০ এ সুবহানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি মাইক্রোবাসে করে পুরাতন হাই কোর্ট এলাকায় ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যাওয়া হয়। ৮টা ৫৬মিনিটে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছানোর পর তাকে হাজতখানায় রাখা হয় বলে শাহবাগ পুলিশের পরিদর্শক (পেট্রোল) শহীদুল ইসলাম জানান। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ সকাল ১০টার পর এ মামলার রায় ঘোষণা করবে।
এমন এক দিনে এই রায় হচ্ছে যখন আগাম নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার অবরোধের মধ্যে হরতালও চলছে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের নায়েবে আমির আবদুস সুবহানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের নয়টি অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রেখে রায় দেন। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম ও আসামীপক্ষে মিজানুল ইসলাম সমাপনী যুক্তি উপস্থাপন করেন।
এ মামলার শুরু থেকেই এর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তি উপস্থাপন করে আসছিলেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, প্রসিকিউটর সুলতানা রেজিয়া চমন, প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন, প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল প্রমুখ। অপরদিকে সুবহানের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন আইনজীবী মিজানুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এহসান এবং এসএম শাহজাহান।
২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল থেকে আবদুস সুবহানকে আটক করেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এরপর তাকে ২০০৩ সালে পাবনা থানায় দায়ের করা এক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।