হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হবিগঞ্জ জেলা আদালতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর জামিন নামঞ্জুর হয়েছে। গতকাল রবিবার হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হকের আদালতে জামিনের প্রার্থনা করেন তার আইনজীবীরা। এ সময় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
আরিফুল হকের পক্ষে জামিন শুনানিতে অংশ নেন জেলা বার সভাপতি চৌধুরী আশরাফুল বারী নোমান, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর উদ্দিন আহমদ শাহীন ও এডভোকেট খালেকুজ্জামানসহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী। অপরদিকে, জামিনের বিরোধিতা করেন পিপি আকবর হোসেন জিতু, এডভোকেট আলমগীর ভূঁইয়া বাবুল, এডভোকেট মনোয়ার আলী, এডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটুসহ আরো কয়েকজন আইনজীবী।
৩৫ মিনিট শুনানি শেষে জেলা ও দায়রা জজ মাহবুবুল হক আদেশে বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার মতো ব্যক্তিত্বকে হত্যা ঘটনার মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এ ঘটনায় আরো ৪ জন নিহত এবং অনেক লোক আহত হয়েছেন। তাছাড়া চার্জশীটভূক্ত আসামী কিছুদিন আগে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাই তার জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করা হলো। আগামী ২৫ জানুয়ারি মামলার নির্ধারিত তারিখ রয়েছে।
রবিবার আদালতে শুনানিকালে মেয়র আরিফের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর বিএনপি নেতা সৈয়দ মঈন উদ্দিন সোহেল, মাহবুবুর হক চৌধুরী ও মনসুর আহমেদ। তারা জানান, আরিফুল হক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। তার রক্তচাপের সমস্যা এখনও রয়েছে। তারা উচ্চ আদালতে জামিনের চেষ্টা করবেন বলেও জানান।
গত ৩০ ডিসেম্বর শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ওইদিন বিচারক রোকেয়া আক্তার তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন। কারাগারে থাকাবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে ৩১ ডিসেম্বর রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। এদিকে, গত ৭ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে আরিফুল হক চৌধুরীকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
সোমবার একই আদালতে জামিন প্রার্থনা করবেন চার্জশীটভূক্ত আসামী হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌর মেয়র জি কে গউছ। তিনি গত ২৮ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারে আওয়ামী লীগের জনসভা শেষে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়া, তার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ছিদ্দিক আলী, আবদুর রহিম ও আবুল হোসেন। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান এমপি বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২১ ডিসেম্বর ৩য় দফা সংশোধিত সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি সিলেট অঞ্চলের সিনিয়র এএসপি মেহেরুন নেছা পারুল। চার্জশীটে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌর মেয়র জি কে গউছসহ ৩৫ জনকে আসামী করা হয়।