স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর উপকন্ঠে লাক্কাতুরা ১১নং সেকশনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত মন্ডপলেন ছড়ার পানিতে শেভরনের বিষাক্ত বর্জ্য পড়ে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে ওই এলাকার লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের গবাদি পশু মারা যাওয়াসহ লোকজনের মধ্যে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত আড়াই মাসে লাক্কাতুরা ১১নং সেকশনে শেভরনের নতুন গ্যাস কূপ খননের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের এ ধরনের চিত্র ধরা পড়ে। গতকাল রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, শীত মৌসুম থাকায় ছড়াটি প্রায় শুকিয়ে গেছে। ছড়া দিয়ে অল্প অল্প পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে শেভরন কোম্পানী অভিযোগকারীদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে শেভরনের পানির পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, বিশাল কর্মযজ্ঞের এই প্ল্যান্টে ক্যামিকেল বর্জ্য ধ্বংস করার নিজস্ব কোন ব্যবস্থা না থাকায় বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশ্রিত বর্জ্য ১১ নং সেকশনের একমাত্র মন্ডপলেন ছড়াটি দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এতে ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ে মুখে পড়েছেন।
জানা গেছে, ছড়ার মধ্যে এখন কুচকুচে কালো পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বিষাক্ত এই পানি প্রবাহ’র কারণে এ ছড়াতে আর কোন জলজ প্রাণী মাছ, শামুক, কাকড়া, ব্যাঙ এর দেখা পাওয়া যায়নি।
মন্ডপপাড়ার সন্ধ্যা রাণী জানান, এ ছড়ার পানি দিয়ে আমরা আগে আমাদের গৃহস্থালীর যাবতীয় কাজ করতাম। এছাড়া আমরা এই পানি দিয়েই গোসল করতাম। কিন্তু গত দু’মাস ধরে এ ছড়া দিয়ে শেভরন গ্যাস কূপের বিষাক্ত বর্জ্যরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আমাদের এখানে পানি সংকটের কারণে প্রথম প্রথম উপায়ান্তর না দেখে এ কালো পানি ব্যবহার করায় শরীরে চর্মরোগসহ নানা রকমের রোগব্যাধি দেখা দিয়েছে। তাছাড়া এটি পাহাড়ী এলাকা থাকায় গবাদি পশু এই ছড়ার পানি পান করে তৃষ্ণা মেটাতো। এতে গত কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েকটি গরু ও ছাগল মারা গেছে। এ পানি এখন আর কেউ ব্যবহার করছে না। পানি আনতে যেতে হয় লাক্কাতুরা গ্রামে।
লাক্কাতুরা এলাকার মিলন লোহাড় জানান, ১১ নং সেকশনে আমাদের পানি ব্যবহারের একমাত্র মন্ডপলেন ছড়াটি দিয়ে এখন গ্যাস কূপের বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশ্রিত কালো পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছড়ার উপর নির্ভরশীল কয়েকটি গ্রাম এখন মারাত্মক পানি সংকট আর পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। এ এলাকার বাতাসে এখন দুর্গন্ধ। কুচকুচে কলো পানি পান করে গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। এলাকার মানুষ প্রতিনিয়িত নানা পানিবাহিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া মন্ডপপাড়ার প্রদিপ দাস, লাক্কাতুরার পবিত্র দাস, মুসলিম পাড়ার মাহমুদ আলী এদের গরু ও ছাগল গত সপ্তাহে ছড়ার পারি পান করে মারা গেছে। আমরা পঞ্চায়েত কমিটি মিলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও শেভরন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টির নালিশ করেছি।
লাক্কাতুরা মন্ডপপাড়ার বাসিন্দা পঞ্চায়েত কমিটির সাবেক উপদেষ্টা উমেশ লোহাড় অভিযোগ করে বলেন, আমরা এ কূপ খননের পর থেকে দরিদ্র চা শ্রমিকদের পানি ব্যবহারের একমাত্র ছড়াটি এখন দূষিত হয়ে গেছে। চা শ্রমিকদের দরিদ্র পরিবারগুলো ছড়ার পানি ব্যবহার করতো। ছড়া থেকে মাছ ধরতো। কিন্তু ছড়ায় আর এখন কোন মাছ নেই।
বাগান কর্মচারী নিতাই জানান, আমাদের বাগানের কর্মচারী প্রতিদাস ও পবিত্র দাস’র দু’টি গরু, ৩টি ছাগল বিষাক্ত পানি পান করে মারা গেছে। পরে বাগানের লাইন চৌকিদার গভেশসহ বাগানের ৩০/৪০ জন কর্মচারীরা শেভরন অফিসে গেলে অফিস কর্তৃপক্ষ ২টা গরু ও ৩ ছাগল দিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, গতকাল রবিবার কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ সকাল ১০ টায় মন্ডপলেন ছড়া দিয়ে শেভরনের বিষাক্ত পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলেন জানান।
এ ব্যাপারে অফিস কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে শেভরন কোম্পানীর সিনিয়র অফিসার ফরিদ আহমদ জানান, এ ঘটনায় বাগান শ্রমিকদের কোন অভিযোগ নেই। এর পরেও যাদের গরু-ছাগল মারা গেছে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কোম্পানীর পক্ষ থেকে আর্থিকভাবে অনুদান দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
টুকেরবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদ আহমদ জানান, আমার কাছে এ এলাকার চা শ্রমিকরা অভিযোগ করেছে তাদের পানি ব্যবহারের একমাত্র মন্ডপলেন ছড়াটি শেভরনের গ্যাস কূপ থেকে নিগর্ত ক্যামিকেল বর্জ্যে দূষিত করে দিয়েছে। তাদের গবাদি পশুর মৃত্যু হচ্ছে। আমি সরেজমিন গিয়ে দেখেছি ছড়ার পানি কলো রং ধারণ করেছে। তিনি জানান, শেভরন কর্তৃপক্ষ বলছে পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যদি পানির মধ্যে কোন বিষাক্ত জীবাণু পাওয়া যায় তাহলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। তাছাড় মন্ডপলেন ছড়াটির প্রবাহিত পানি অন্য অন্য ছড়ার সাথে যুক্ত থাকায় এ পানি গিয়ে পড়ছে সুরমা নদীতে।