বাংলাদেশ নিয়ে বিরোধিতা ও উস্কানীমূলক বক্তব্য দেয়ায় ॥ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সিলেট ও সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা

79

Tarek_Rhaman_225489017স্টাফ রিপোর্টার :
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হয়েছে। সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদার বাদি হয়ে গতকাল রবিবার মহানগর হাকিম ১ম আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। আদালতের বিচারক শাহেদুল করিম মামলাটি আমলে নিয়ে সিলেট কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশকে রাষ্ট্রের অনুমতি নিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের ইস্ট লন্ডনস্থ অ্যাট্রিয়াম ব্যাংকোয়েট হলে যুক্তরাজ্য বিএনপির আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি তারেক রহমান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সৃষ্টির বিরোধিতা ও তার দলীয় লোকজনকে উস্কানী দিয়ে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, ‘একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনার ঠিক আগে ইয়াহইয়া খানকে প্রেসিডেন্ট মেনে তার সঙ্গে সমঝোতা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ মার্চ তিনি যদি সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসারদের নিয়ে যুদ্ধ শুরু করতেন তাহলে যে সামান্য সংখ্যক পাকিস্তানী সৈন্য ছিল তাদেরকে সহজেই পরাজিত করা যেত। প্রাণহানী ও অর্থনৈতিক ক্ষতি অনেকটা কম হতো। এজন্য আমরা এককভাবে দায়ি করতে পারি শেখ মুজিবকে। আমরা তাকে যেভাবে রাজাকার বলেছি, আমরা তথ্য প্রমাণ দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে তাকে বলেছি রাজাকার। আমরা সত্য ঘটনাবলীর ভিত্তিতে বলেছি তিনি ছিলেন পাকবন্ধু। এরপর তারেক বলেন- আজকে যদি আমরা বলি এই যে, লক্ষ লক্ষ মানুষ একাত্তর সনে স্বাধীনতা যুদ্ধে মারা গেল, এই যে হাজার হাজার মা বোনের সমভ্রমহানী হলো এর জন্য এককভাবে কী শেখ মুজিবকে দায়ি করা যায় না? তাহলে এতো মানুষের হত্যাকারীকে একবাক্যে কি বলা উচিত। যে মানুষ মারে তাকে কী বলা যায়? তখন উপস্থিত বিএনপি নেতাকর্মীরা চিৎকার করে বলে রাজাকার।’
এজহারে আরও উল্লে¬খ করা হয়- ‘তারেক তার বক্তব্যে বলেন- আওয়ামী লীগ দাবি করে তারা মুক্তিযুদ্ধের দল। তবে শেখ মুজিব কেন দলটি বিলুপ্ত করে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরও দাবি করেন তারেক। শেখ হাসিনা একের পর এক অপকর্ম করে চলছেন। যখন বিপদে পড়েন তখনই জনগণকে বিভ্রান্ত করতে মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দেন।’
মামলার এজহারে বলা হয়- ‘তারেকের এই বক্তব্য বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পায়। ওইসব পত্রিকা সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের কার্যালয়ে পৌঁছলে মামলার বাদি ও তার দলীয় মতাদর্শের লোকজন সংবাদটি পাঠ করে অনুধাবন করেন যে- বাংলাদেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করতে পারে এমন বিশেষকে প্রভাবিত করার অভিপ্রায়ে এবং প্রভাবিত করতে পারে জেনে শুনে তারেক রহমান এমন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্থপতি, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ ও ‘গণহত্যায়’ জড়িত মর্মে বক্তব্য দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টির নিন্দা ও সার্বভৌমত্ব বিলোপ সাধনের কুমানসে তীব্র সমালোচনাপূর্বক ও ষড়যন্ত্রমূলক এমন বক্তব্য দিয়েছেন তারেক। এর মাধ্যমে তিনি ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ১২৩ এ ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।’
মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী ও সিলেট জেলা জজ কোর্টের এডিশনাল পিপি শামসুল ইসলাম বলেন- তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে রাষ্ট্রের অনমুতি সাপেক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদিপক্ষে আদালতে আরও উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট মাসুম আহমদ, এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, এড. রেজাউল করিম খান।
এদিকে সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়ায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অভিযুক্ত করে সুনামগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইনের অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের এমপি এডভোকেট শাহানা রব্বানীর পুত্র ফজলে রাব্বী স্মরণ।
গতকাল রবিবার দুপুর ১টায় ম্যাজিস্ট্রেট শ্যাম কান্ত সিনহার আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ ডিসেম্বর লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার ও শখের বন্দী বলে আখ্যায়িত করেন এবং যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আতাত ছিলো বলে মিথ্যা বিবৃতি দেন। এসব অশালীন বক্তব্যের কারণে আদালতে মামলা করা হয়েছে বলে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মিজানুর রহমান, এডভোকেট আজাদুল ইসলাম রতন ও এডভোকেট শফিকুল ইসলাম। এদিকে মামলার সাক্ষীরা হলেন জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি সুব্রত সরকার, মোশারফ হোসেন ইমন, বিধান তালুকদার, মনিরুজ্জামান মনির, ফয়সল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক রফিক চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল আহমেদ, মিন্টু চৌধুরী, স্বপন আহমেদ, শিপু আহমেদ, মনির আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ সুজন, বরুণ কান্তি দে, কামরুল ইসলাম শিপন, খালেদ আহমদ, আলম, সাজন চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক রুমেন চৌধুরী, শামীম আহমেদ, তানজির রহমান, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুহেল আহমদ, অর্থ সম্পাদক মামুনুর রশিদ সালমান, আইন সম্পাদক শামীম আহমেদ, পাঠাগার সম্পাদক রাসেল মিয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বকুল দাস, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মাহফুজুর রহমান হিরু, বৃত্তি সম্পাদক রাহুল পুরকায়স্থ, সদর থানা ছাত্রলীগ নেতা সুহেল আহমদ বিপ্লব বাবু, ইউ এম নাবিল রহমান, সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের নেতা মির্জা রাকিব সুজন, আশরাফুল ইসলাম, প্রভাংশু তালুকদার বিপ্টু, ফয়সল আহমেদ, চপল, পৌর ছাত্রলীগ নেতা দুর্জয় দত্ত পুরকায়স্থ, আদিব মাহমুদ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ আহবায়ক বদরুল আলম টিপু, যুগ্ম আহবায়ক মোঃ রয়েল আহমেদ, আলামিন, শাহান আহমেদ, জাবেদ, নজরুল ইসলাম, এনামুল হক পাভেল, জেলা স্বেচ্ছাসবকলীগের সহ সভাপতি মাসুক আহমেদ, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আবুল হাসান, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম  আহবায়ক সুহেল রানা, কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
পরে দুপুর আড়াইটায় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় ট্রাফিক পয়েন্টে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন জেলা যুবলীগের সিনিয়র সদস্য এডভোকেট মনীষ কান্তি দে মিন্টু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফজলে রাব্বী স্মরণ, সিনিয়র সহ-সভাপতি সুব্রত সরকার, মনিরুজ্জামান মনির, মোশারফ হোসেন ইমন, সাধারণ সম্পাদক রফিক চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল আহমদ, সুনামগঞ্জ কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাংশু তালুকদার বাপ্টু প্রমুখ। বক্তারা অবিলম্বে লন্ডন থেকে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান। অন্যথায় আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচী প্রদানেরও ঘোষণা দেন তারা। পরে তারেক রহমানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন নেতাকর্মীরা।