দক্ষিণ সুরমায় হাওর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একজনের লাশ উদ্ধার ॥ হত্যার অভিযোগ পরিবারের

50

Untitled-1111111স্টাফ রিপোর্টার :
দক্ষিণ সুরমায় এক রাজমিস্ত্রিকে শ্বাসরুদ্ধ ও পানিতে চুবিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতের নাম-কুতুব উদ্দিন (২৫)। তিনি দক্ষিণ সুরমা থানার শুকলামপুর গ্রামের মৃত মোবশ্বির আলীর পুত্র। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে পুলিশ মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের শুকলামপুর গ্রামের একটি হাওরের মাঠ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কুতুব উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে। পরে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মঈন উদ্দিন বাদি হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে পরিবারের অভিযোগ,পূর্ব শক্রতার জের ধরে দুর্বৃত্তরা কুতুবকে খুন করে ঘটনাস্থানে তার লাশ ফেলে গেছে। এদিকে, পুলিশ জড়িত সন্দেহে মহিলাসহ ৪ জনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, গত সোমবার রাতে কুতুব উদ্দিন বাড়ি থেকে বের হন। ঐদিন কুতুব উদ্দিন আর বাড়ি ফিরে আসেননি। পরিবারের লোকজন বাড়ি ফিরতে না দেখে তারা তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টার দিকে স্থানীয় লোকজন কুতুব উদ্দিনের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শুকলামপুর গ্রামের একটি হাওরের মাঠে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। এ খবর পেয়ে ওই হাওরে গিয়ে কুতুব উদ্দিনের পরিবার তার লাশ শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে।
লাশের সুরতহাল প্রস্তুতকারী দক্ষিণ সুরমা থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মোঃ ফজলুর রহমান জানান, লাশ উদ্ধারের সময় তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে এ সময় তার নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছিল। তবে নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে এসআই ফজলুর জানান, নিহতের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে পূর্ব শক্রতা চলে আসছিল। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মঈন উদ্দিন থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। সে অভিযোগে কারা আসামী এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল জানান, গতকাল ময়না তদন্ত শেষে নিহতের লাশ তার স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা রাজমিস্ত্রি কুতুব উদ্দিনকে একাধিকবার পানিতে চুবিয়ে হাত-পা বেঁধে হত্যা করে শুকলামপুর গ্রামের একটি মাঠে ফেলে রেখে। এ ঘটনার সাথে কারা জড়িত বা কি কারণে কুতুব উদ্দিনকে এভাবে হত্যা করেছে তার ক্লু’উদঘাটনের জন্য অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে আটককের বিষয়টি ওসি অস্বীকার করেছেন।
এদিকে, নিহত কুতুব উদ্দিনের ভাই মঈন উদ্দিন তার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে গত ১৫ নভেম্বর একই এলাকার মৃত আখলু মিয়ার পুত্র আনা মিয়া (৬০) তার ভাই দুদু মিয়া (৫৫), তার পুত্র শাহিন (২৮), তার সহোদর বাচ্চু মিয়া (৩০) ও ফিরোজ আলী (২৫)কে আসামী করে দক্ষিণ সুরমায় একটি জিডি এন্ট্রি (নং-৭৪৫) করেন।
জিডিতে মঈন উদ্দিন তখন উল্লেখ করেন, তাদের স্বত্ব দখলীয় বাড়ি হতে বিভিন্ন প্রকার গাছ-গাছালি আসামীরা কেটে নেয়ার চেষ্টা করে। তখন মঈন উদ্দিনসহ তার পরিবার বাঁধা দিলে দুর্বৃত্তরা তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেয়। গত ১৪ নভেম্বর বেলা ১১ টার দিকে উক্ত আসামীরা তাদের বাঁশ ঝাড় হতে বাঁশ কেটে নিতে উদ্যত হলে তারা তাদেরকে বাধা দেন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে উক্ত আসামীরা দা, লাঠি-সোটা নিয়ে মঈন উদ্দিনের পরিবারের উপর আক্রমণ করে। তখন তাদের শোরচিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তাদের রক্ষা করেন। এ সময় শাহিন ও আনা মিয়া তাদের পরিবারের কোন সদস্যকে দুনিয়া থেকে তুলে দিবেন এমনকি মিথ্যা মামলা ও বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়ারও হুমকি দেন।