গুমের শিকার ৩৩০ জনের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ

7

কাজির বাজার ডেস্ক

দেশে গুমের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ থাকা ৩৩০ জনের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভাপতি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক মইনুল ইসলাম চৌধুরী। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর গুলশানে কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে কমিশনের অপর চার সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘দেশে গুমের শিকার হওয়ার পর এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি এমন ব্যক্তির সংখ্যা ৩৩০। তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির অবস্থান বা ভাগ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান চলমান আছে। তবে সাধারণভাবে বলা যায় তাদের ফিরে আসার আশা ক্ষীণ।’
গুমের দায় কোনো বাহিনীর নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যে সকল সদস্যরা গুমের সাথে জড়িত, তা তাদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়। কারণ অপরাধীরা অনেক সময় আইনের হাত থেকে বাঁচতে তার ধর্ম, কমিউনিটি, সামাজিক গ্রæপ, ইত্যাদির আড়ালে লুকাতে চেষ্টা করে। এই প্রবণতাকে বলা হয় আইডেনটিটি বেজড ডিফেন্স বা কমিউনিটি শিল্ডিং। কিন্তু বিচার কখনো ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে হয় না, তা হয় সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে। কারণ ফৌজদারি অপরাধ একটি ব্যক্তিগত দায়, এতে কমিউনিটিকে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নেই।’ ভারতের কারাগারে ১০৬৭ জন বাংলাদেশি বন্দী আছে জানিয়ে কমিশনের সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের কারাগারে বন্দী বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। ভারত ১০৬৭ জনের একটি তালিকা দিয়েছে, সেটি গুম সংক্রান্ত কমিশন মিলিয়ে দেখছে, সেই তালিকায় গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি আছে কিনা, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এই তালিকা ভারত আরও দেবে।
পুলিশ লাইনসেও গোপন বন্দিশালা পাওয়ার তথ্য জানিয়েছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। বগুড়া পুলিশ লাইনে এ বন্দিশালা পাওয়া গেছে, যেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে বন্দীদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হতো বলে জানিয়েছেন কমিশনের সদস্য নূর খান। তিনি বলেন, ‘পুলিশ লাইনের ভেতরে কারাগারের মতো গোপন বন্দীশালা তৈরি করে রাখা হয়েছিল। যেটি একেবারেই এবসার্ট একটা ব্যাপার। সেটি আমরা বগুড়ায় পেয়েছি। আমাদের ধারণা, অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের আরও পাব।’
এসব বন্দীশালা গত ১৫ বছরে করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে নূর খান বলেন, এগুলো গত ১৫ বছরের মধ্যেই বানানো হয়েছে। গত ১০-১২ বছরের মতো। এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে বন্দীদের এনে রাখা হতো, জিজ্ঞাসাবাদ এর নামে নির্যাতন করা হতো এবং এখান থেকেও অনেকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে।
এছাড়া গুম সংক্রান্ত কমিশনে ১৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সভাপতি বিচারপতি (অব.) মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘কমিশনে ১ হাজার ৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে ১ হাজারটি অভিযোগ ও তার সঙ্গে সংযুক্ত কাগজপত্রের যাচাই-বাছাই প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’