ছাতকের হলদিউরায় খিরা চাষে বাম্পার ফলন

4

আতিকুর রহমান, ছাতক

ছাতকের হলদিউরায় খিরা, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, আলু, ধনিয়া, বেগুন, টমেটো চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। চাহিদা বেশি এবং বাজার মূল্য ভাল থাকায় স্বল্প খরচে অল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় নদীর পাড় সংলগ্ন অনাবাদী পতিত জমিতে খিরা চাষ করা হচ্ছে। খিরা চাষে এখানকার কৃষকরা উৎসাহী হচ্ছেন।
সুনামগঞ্জের ছাতকের হলদিউরা গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘানুউড়া নদীর দক্ষিণ পাড়ে আমন মৌসুমের পর পতিত থাকা শতাধিক কেদার জমিতে ৩/৪ বছর ধরে আবাদের আওতায় এনেছেন স্থানীয় কয়েক জন যুবক। খিরা ও সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় ফসল উৎপাদনে ঝুঁকছেন অনেকেই। পতিত জমি কাজে লাগিয়ে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক চাষীরা।
এখানের জমিতে বিভিন্ন জাতের খিরা, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, আলু, ধনিয়া, বেগুন, টমেটো চাষ করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ বেশি।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ছাতক উপজেলার হলদিউরা গ্রামের উত্তরে ঘানুউড়া নদীর দক্ষিণ পাড় সংলগ্ন শতাধিক কেদার জমি আমন মৌসুমের পর বছরের পর বছর ধরে পতিত থাকতো এ জমি গুলো। এ জমিতে অগ্রহায়ণের ফসল উত্তোলনের পর গরু চারণ ছাড়া আর কোন ধরনের ফসল উৎপাদন করা হতো না। এলাকার কয়েক জন কৃষক এ জমিতে ৩/৪ বছর আগে প্রথমে খিরা চাষ শুরু করেন এবং ফলনও ভাল হয়। এর পর থেকে দিন দিন খিরার আবাদ বেড়েছে। পতিত জমিতে অল্প খরছে উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করে মুনাফা ভাল পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা খিরা চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। খিরা চাষ করে অনেকেই আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। খিরা যেন এখানের কৃষকদের স্বপ্ন। খিরা চাষের মধ্য দিয়ে প্রান্তিক অনেক চাষিদের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন হয়েছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের চৌকা পয়েন্টে প্রতিদিন সকালে জমজমাট অস্থায়ী খিরার হাট বসে। হাটে সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ, দিরাই, ছাতক, গোবিন্দগঞ্জ, পাগলা বাজার, জাউয়া বাজার, দোলারবাজার, গোবিন্দগঞ্জ বাজার, মানিকগঞ্জ বাজার,
সিলেট সদরের টুকের বাজার, বিশ্বনাথের লামাকাজিসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এ অস্থায়ী হাট থেকে খিরা ক্রয় করেন। এখানের উৎপাদিত খিরার সিংহ ভাগ সিলেটের টুকের বাজার আড়তে নিয়েও চাষিরা বিক্রি করে থাকেন।
কৃষক নুর উদ্দিন বলেন, তিনি এ বছর খিরা, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ চাষ করেছেন। ফলন ভাল হয়েছে। খরচ হয়েছে ৩০হাজার টাকা। লক্ষাধিক টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো জানান, এখানের জমি তরমুজ চাষের উপযোগী। কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগীতা করলে তরমুজ চাষ করা যেত। তরমুজ চাষের নিয়ম না জানায় চাষিরা চাষে আগ্রহী হচ্ছে না। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে সম্পূর্ণ অনাবাদী জমি আবাদের আওতায় আনা গেলে কৃষকরা স্বাবলম্বী হতো। নুর উদ্দিন ছাতক প্রেসক্লাবের সদস্য ও উপজেলার হলদিউরা গ্রামের বাসিন্দা।
কৃষক আনামুল হক জানান, ৬কেদার জমিতে খিরা এবং ৩কেদার জমিতে মিষ্টি কুমড়া আবাদ করতে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে। মিষ্টি কুমড়া ও খিরা বাজার জাত করন শুরু হয়েছে। কৃষক মনফর আলী জানান, মিষ্টি কুমড়া, আলু, মরিচ, খিরা চাষ করেছেন। খড়া ও বিভিন্ন রোগের করাণে মিষ্টি কুমড়ার ফলন তেমন ভাল হয়নি তবে খিরার ফলন ভাল হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শ ফেলে সবজি চাষ আরো লাভজনক হতো।
উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি অফিসার চন্দন দাস বলেন, চলতি বছরে খিরা গাছগুলো রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। রোগ-বালাই থেকে খেত বাঁচাতে করণীয় সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। অনেকেই খিরা বাজারজাত করতেছেন। ফলন কম হলেও দাম ভাল পাচ্ছেন।