মৌলভীবাজারে নিজ সন্তানকে পাষন্ড পিতা কর্তৃক হত্যা

5

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা

মৌলভীবাজারে বাবার হাতে মাহিদ নামে ৭ বছর বয়সী এক শিশুকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। ঘটনার পর শিশুর বাবা খোাকন মিয়া ও দাদি হাওয়া বেগম নিজ ঘরে মরদেহ রেখে গা ঢাকা দেন। পরে পুলিশ খোকনকে আটক করতে সক্ষম হয়। রবিবার রাতে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের জগন্নাথপুর গ্রামে এ লোহমর্ষক ঘটনাটি ঘটে। শিশু খুনের ঘটনায় পুরো গ্রামের মানুষ শোকাহত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খোকন মিয়া চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ব্যবসা করে আসছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। রবিবার বিকেলে খোকনের দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশু মাহিদ বিছানায় মলত্যাগ করায় বাবা খোকন ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের বাইরে এনে শিশুটিকে মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে শিশু মাহিদ সেখান থেকে পালিয়ে প্রতিবেশি জবেদা খাতুনের ঘরে আশ্রয় নিলে সেখান থেকে ফের ধরে এনে মাটিতে ছুড়ে ফেলেন। এরপর শিশু মাহিদের দুই পা ধরে কংক্রিটের পিলারে সঙ্গে আঘাত করতে থাকলে শিশু মাহিদের নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে। এ সময় প্রতিবেশি জবেদা বেগম শিশুটিকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। এমন পরিস্থিতিতে শিশুটির অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় খোকন মিয়া নিজেই শিশু মাহিদকে নিয়ে হাজির হন মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। পরে সেখানকার দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পরে শিশুটির মৃত্যুর কারণ নিয়েও চতুরতার আশ্রয় নেন ঘাতক বাবা খোকন মিয়া। মৃত্যুর কারণ হিসেবে সেখানে উল্লেখ ছিল গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। এরপর সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সদর মডেল থানা পুলিশ উপস্থিত হলেও সেখানে মরদেহ ও খোকন মিয়াকে পাওয়া যায়নি। কিছুক্ষণ পর মরদেহ নিয়ে খোকন নিজ ঘরে হাজির হয়ে সেখানে মরদেহ রেখেই পালিয়ে যান। তবে তার প্রথম স্ত্রী ও নিহত শিশু মাহিদের আরেক ভাইকে ঘরে পাওয়া যায়। আশপাশে তল্লাশি চালিয়েও পুলিশ সেখানে খোকন ও তার মা হাওয়া বেগমের কোনো খোঁজ না পেয়ে অভিযান চালিয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার জেলগেট এলাকা থেকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
প্রতিবেশি জবেদা বেগম বলেন, বাচ্চাটাকে দুই পা ধরে কংক্রিটের পিলারের সঙ্গে মাথা মারতে থাকে। তখন তার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল। মারধর করার সময় তাকে উদ্ধারে আমি এগিয়ে গেলে আমাকে অন্তত দশহাত দূরে টেনে নিয়ে যায়। তবে এসময় অন্য কেউ সেখানে ছিল না বলে জানান ওই নারী।
জানা যায়, ১৫ বছর আগে প্রথম স্ত্রী রেখে তানিয়া আক্তার নামে এক নারীকে বিয়ে করে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে তোলেন খোকন। ওই স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় কয়েক বছর আগে স্বামী খোকন মিয়াকে ছেড়ে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও মাহিদ ও রাফিদ নামে ৬ ও ৭ বছর বয়সী দুই শিশুকে রেখে দেন খোকন। এর পর থেকে মা ছাড়া বাবা খোকন মিয়ার কাছেই থাকত দুই শিশু। স্থানীয়রা বলছেন- অনেক দিন যাবৎ তুচ্ছ কারণে তাদের দুই ভাইয়ের প্রতি অমানবিক নির্যাতন চালাতেন মাদকাসক্ত বাবা খোকন মিয়া। নির্যাতনের নির্মম দৃশ্য প্রতিবেশির চোখে ধরা পড়লেও ভয়ে তাদের কেউ এগিয়ে আসার সাহস করেনি।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মাহবুবুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ওই ঘটনায় সদর উপজেলার জেলগেট এলাকা থেকে খোকন মিয়াকে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়।