নবীগঞ্জ প্রতিনিধি
কুশিয়ারা নদীতে বালু মহাল নিয়ে চলছে হরিলুট কান্ড। সরকারি নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও সেগুলো অমান্য করে যথোচ্ছা বালু তুলছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী মহল। ইজারা করা বালু মহালের সরকারি নির্দিষ্ট সীমারেখার বাইরে গিয়ে বালু তোলায় ক্ষতিগ্রস্ত নদী ও এর আশপাশের জনপদ। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে প্রতি বছর নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার একর জমি, বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন অংশ।
নিয়ম নীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করে যৌথবাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রকাশ্যে নদীর বিভিন্ন স্থানে ১৫/২০টি কাটার মেশিন দিয়ে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে বালু খেকোরা। এক মাসের বেশি সময় ধরে নির্বিচারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে একটি চক্র। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও থামছে না বালু উত্তোলন। ফলে নদী তীরবর্তী বাড়িঘর, ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন কেন্দ্র বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট, কয়েকটি স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা ও হাট-বাজারের বিভিন্ন স্থাপনা। অভিযোগ রয়েছে বেশিরভাগ এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে এসব বালু উত্তোলন হচ্ছে। যে কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত ও অতিষ্ট হলেও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
জানাগেছে। নবীগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর চরে বালু মহালে অবৈধ ভাবে বালু তোলা নিয়ে গত শুক্রবার বিকালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছে। ঢাকার ওয়াহিদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সংগঠন তারা প্রশাসনের প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে বলে এলাকায় প্রচার করে। তারা বালু উত্তোলন করার জন্য গতকাল লোকজন নিয়ে কুশিয়ারা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসানোর জন্য পাহাড়পুর ও বনগাও এর নিকট নদীর তীরে গেলে স্থানীয় লোকজন বাঁধা দেয়। এসময় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়। এনিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে ওয়াহিদ এন্টারপ্রাইজের সুপারভাইজার রাজিবুর রহমান বলেন, আমরা বিআইডবিøউএ এর অনুমতি পেয়ে বালু তোলার জন্য গেলে একটি পক্ষ বাঁধা দেয়।
এবিষয়ে অপরপক্ষের বালু উত্তোলনকারী পারকুল গ্রামের ছাত্রদল নেতা সাজু আহমদ জানান, সে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বালু উত্তোলন করছে, তাছাড়া আর কেউ বালু তোলার কথা নয়। কাগজ পত্র দেখানোর কথা বলা হলে তিনি বলেন এসব সময় মতো দেখানো হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অনুপম দাশ অনুপের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, াকানোভাবে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেয়া হবে না। তবে আমরা যেতে যেতে তারা খবর পেয়ে সেখান থেকে সটকে পড়ে। বালু তোলার মূলহোতাদের ধরার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। হবিগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক ড.মো.ফরিদুর রহমান বলেন, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন নবীগঞ্জ কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলনের কোন অনুমতি দেয়নি। অনুমতি ছাড়া কেউ বালু উত্তোলন করা কথা নয়। বিআইডবিøউএ কাউকে অনুমতি দিয়েছে কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের কোনো ছাড় নয় বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড.মো.ফরিদুর রহমান। তিনি বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে অনেক জায়গায় বাড়িঘর, ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। তাই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে।