সিলেটে ৫৯৩টি মন্ডপে প্রস্তুতি চলছে পূজার আয়োজন প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাজানো হচ্ছে নিরাপত্তার ছক

5

সিন্টু রঞ্জন চন্দ

শাশ্বত মুক্তি অর্জন ও বিশ্বব্যাপী মানবতার অমর বাণীকে পোঁছে দেয়ার চেতনায় প্রতিবারের মত এবারও আদ্যশক্তি সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শ্রীশ্রীদুর্গা পূজা আগামী ৯ অক্টোবর বুধবার থেকে ১৩ অক্টোবর রবিবার পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। শুভ ষষ্ঠী, মহা সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে ৫ দিন ব্যাপী এ দূর্গোৎসব শেষ হবে।
এবার দেবী “দোলায় আগমন ও দেবীর ঘোটকে গমন”। দোলা অর্থাৎ পালকিতে আগমন – ফল দোলায়াং মকরং ভবেৎ – অর্থাৎ মহামারী বা মরকতুল্য বিষয়ে ভোগার সম্ভাবনা আর ঘোটক – অর্থাৎ ঘোড়া। ঘোড়ায় গমনের ফল- ছত্রভংস্তুরঙ্গমে অর্থাৎ ছত্রভঙ্গ, ধ্বংস বা ছন্নছাড়া বা ধ্বংসাত্মক লীলার সম্ভাবনা।
এবার আসন্ন দুর্গাপূজায় সিলেট মহানগরী ও জেলা মিলিয়ে ৫৯৩টি মÐপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে মহানগরীতে ১৫৩টি ও জেলায় ৪৪০টি মÐপে পূজা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে পূজাকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যেমনি প্রস্তুতি চালাচ্ছেন, তেমনি করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার ছক সাজানো হচ্ছে।
এদিকে দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে সিলেট জেলা পুলিশের আয়োজনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কোনো দুষ্কৃতকারী সন্ত্রাসী কর্মকাÐ পরিচালনা করলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। ফেসবুকে গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রæত সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন- যে যার জায়গা থেকে কাজ করলে স্বাচ্ছন্দ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারবে। গত বৃহস্পতিবার সিলেটে এ সংক্রান্ত বৈঠকে এসপি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এ হুঁশিয়ারি দেন।
বৈঠকে জানানো হয়, সিলেট জেলার মধ্যে সর্বাধিক প্রতিমা বিসর্জন হয় সিলেট নগরীর চাঁদনী ঘাটের সুরমা নদীতে ও জকিগঞ্জের কাস্টম ঘাটের কুশিয়ারা নদীতে। পূজা উপলক্ষে ত্রæটিপূর্ণ সড়ক সংস্কার, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখা ও প্রতিমা বিসর্জন এলাকা ও প্রতিটা পূজামÐপসহ পূজারি চলাচল স্থানসমূহে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি কঠোর নজর রাখার আহŸান করা হয়। বৈঠকে পূজা উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে উপস্থিত সদস্যরা সমন্বয় করে হিন্দু-মুসলিমরা মিলেমিশে সম্প্রতির বন্ধন বজায় রেখে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। জুমার দিনে মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে মুসলমানদের সম্পৃক্ত করার কথা বলা হয়। তবে হিন্দু-মুসলিম ধর্মে নিষিদ্ধ আতশবাজি বা পটকা ব্যবহারে সবাইকে নিরুৎসাহিত করা হয়।
নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমন্বয় বৈঠকে সিলেট বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, সিলেট জেলা ও মহানগর ইমাম সমিতির নেতৃত্ব, সিলেট মহানগর ও কেন্দ্রীয় কমিটি এবং উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের পাশাপাশি সিভিল সার্জন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার, ফায়ার সার্ভিস ও পিডিবি’র প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, নগরীর মার্কেট ও বিপনী বিতানগুলোতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি দেবী দুর্গার মূর্তির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃতশিল্পীরা।