কাজির বাজার ডেস্ক
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৫৮৯ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া তাদের সংরক্ষিত ব্যক্তিগত তথ্য (ডাটা) জব্দ করা হয়েছে।
বাতিল পাসপোর্ট ব্যবহার করে তারা যাতে বাংলাদেশ ত্যাগ বা তৃতীয় কোনো দেশ ভ্রমণ করতে না পারেন সে বিষয়ে কঠোর নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পদক্ষেপের ফলে শেখ হাসিনাসহ ইতোমধ্যে যারা সীমান্ত অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছেন তাদের পক্ষে বিদেশের মাটিতে নির্বিঘেœ চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়বে। এছাড়া হাতে বৈধ পাসপোর্ট বা স্বীকৃত ভ্রমণ দলিল না থাকায় বন্ধ হবে রাজনৈতিক আশ্রয়ের পথ।
সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের পাসপোর্ট বাতিল ও অন্য কোনো দেশ ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপের বিষয়ে ৩ সেপ্টেম্বর চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হওয়ায় উ™‚¢ত পরিস্থিতিতে উক্ত সংসদের ক‚টনৈতিক পাসপোর্টের প্রাধিকারভুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ, প্রতিমন্ত্রীবর্গ, উপমন্ত্রী, চিফ হুইপ, সংসদ-সদস্য, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, উপনেতা, উপদেষ্টা পদমর্যাদার ব্যক্তিবর্গের অনুক‚লে ইস্যুকৃত ক‚টনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। উক্ত বাতিল পাসপোর্ট ব্যবহার করে যাতে কেউ বাংলাদেশ হতে বিদেশে বা বিদেশ হতে তৃতীয় কোনো দেশে ভ্রমণ করতে না পারেন সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সূত্র জানায়, সরকার পতনের পরপরই হাসিনার মন্ত্রী-এমপি ছাড়াও ১৪ দলীয় জোট নেতাদের পাসপোর্টও বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট সাবেক সচিব, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থা প্রধান ও পদত্যাগকারী ভিসিদের পাসপোর্ট নবায়নে এখন ব্যাপকভাবে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। এদের মধ্যে যারা লাল পাসপোর্ট জমা দিয়ে সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন করেছেন তাদের ক্ষেত্রে অন্তত দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ছাড়পত্র প্রয়োজন হবে। সূত্র জানায়, তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের পাসপোর্ট বাতিলের পর কম্পিউটার সিস্টেমে সংরক্ষিত তাদের ব্যক্তিগত তথ্যও (ডাটা) জব্দ করা হয়েছে। ফলে এদের মধ্যে কেউ পাসপোর্ট প্রতিস্থাপন বা নবায়নের চেষ্টা করলে আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যাখ্যান হচ্ছে। এতে দালাল চক্রের মাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে পেছন দরজা দিয়ে কেউ পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা করলে লাভ হবে না।
বাতিল পাসপোর্টের তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট রয়েছে। তার পাসপোর্ট নম্বর ডি০০০১০০১০। দেশে ই-পাসপোর্ট সেবা চালুর পরপরই তিনি তার পুরোনো এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) বদল করেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি ৬৪ পাতার একটি ই-পাসপোর্ট নেন তিনি। তবে ক‚টনৈতিক পাসপোর্ট ৫ বছর মেয়াদি হলেও নিয়ম ভেঙে হাসিনাকে ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাসপোর্ট কর্মকর্তা বলেন, শেখ হাসিনার হাতে বৈধ পাসপোর্ট না থাকায় ভারতের বাইরে অন্য কোনো দেশে যাওয়া তার পক্ষে কঠিন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে আগে তার অনুক‚লে বৈধ ট্রাভেল পাশ ইস্যু করতে হবে। অন্যথায় তিনি ভ্রমণের অযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবেন। এছাড়া পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় হাসিনার পক্ষে তৃতীয় কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া কঠিন।