কাজির বাজার ডেস্ক
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি, গত বুধবার ভাসানটেক থানায় একটি ও অন্য মামলাটি করা হয় গত বুধবার রাতে বগুড়ায়। এসব মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তার আমলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, পুলিশপ্রধান ও ২৫ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। ঢাকা: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর মিরপুরে মো. ফজলু নামে এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৬৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ২৫ জন সাংবাদিকও রয়েছেন। নিহতের বড় ভাই মো. সবুজ গত বুধবার ঢাকার ভাসানটেক থানায় মামলাটি করেন। বিষয়টি খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন ভাষানটেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল আহমেদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন ভাসানটেকের দিগন্ত ফিলিং স্টেশনের সামনে ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে গুলি চালানো হলে ৩১ বছর বয়সী ফজলু নিহত হন।
মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জুনায়েদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুবউল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছিম ও মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ, বিপ্লব কুমার সরকারকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।
বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার ছেলে ও গ্রæপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের নামও রয়েছে। সাংবাদিকদের মধ্যে নঈম নিজাম, মনজুরুল আহসান বুলবুল, শ্যামল দত্ত, ফরিদা ইয়াসমিন, ওমর ফারুক, মনজুরুল ইসলাম, মনজুরুল বারী নয়ন, সোহেল হায়দার চৌধুরী, কুদ্দুস আফ্রাদ, অরুণ কুমার দে, মো. নুরুল হক, জিহাদুর রহমান জিহাদ, আব্দুল মজিদ, সাজ্জাদ আলম খান তপু, সৈয়দ শুক্কুর আলী শুভ, হায়দার আলী, আশিকুর রহমান শ্রাবণ, আলমগীর হোসেন, শরিফুল ইসলাম, মাইনুল আলম, জায়েদুল আহসান পিন্টু, আবদুল্লাহ আল কাফি, কবির আহমেদ খান, নুরুল ইসলাম হাসিব ও শাহনাজ শারমিনের নাম রয়েছে আসামির তালিকায়।
এদিকে বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলমকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভুক্তভোগী নিজেই মামলাটির আবেদন করেন। আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করে অভিযোগটি সাভার মডেল থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। গতকাল এ আদেশ দেন আদালত।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ভোলা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, তৎকালীন আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, ঢাকা রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, তৎকালীন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান ও সাভার মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান।
এক যুগ আগের ঘটনায় করা এ মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের ডাকা গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে নাজিম উদ্দিন আলমসহ নেতা-কর্মীরা আমিনবাজার ব্রিজের ওপর অবস্থান করছিলেন। এ সময় পুলিশ নেতা-কর্মীদের ওপর চড়াও হয়ে গুলি চালায় ও লাঠিপেটা করে। তখন পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলিতে নাজিম উদ্দিন আলমসহ অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হন।
বগুড়া: ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বগুড়ায় আব্দুল মান্নান নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১২২ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে বগুড়া সদর থানায় মামলাটি করেন নিহতের ছেলে মো. রানা। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওয়ালিউল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি মো. মজিবুর রহমান মজনু এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও দলটির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৪ আগস্ট দুপুর ১টার দিকে আসামি মঞ্জুরুল আলম মোহন, রফি নেওয়াজ খান রবিন, আসাদুর রহমান দুলু, ওবায়দুল হাসান ববি, আমিনুল ইসলাম মÐল ও আওয়ামী লীগ নেতা বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাছুদুর রহমান মিলনের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপর পিস্তল ও কাটা রাইফেল দিয়ে গুলি করা হয়। এ সময় ককটেল ও পেট্রলবোমারও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। মামলার ২৩ নম্বর আসামি আব্দুল মতিন পিস্তল দিয়ে আব্দুল মান্নানকে গুলি করেন। পরে আব্দুল মান্নান মারা যান।