মো. আব্দুল হাছিব
সিলেট নগরীর বন্দরবাজার সিটি পয়েন্ট ও কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সাথে ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দু’পক্ষের ২৫ জন ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার ও লেগুনাসহ ৬১টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে বন্দরবাজারের সিটি মার্কেটের সম্মুখে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড করে রাখা নিয়ে তর্কবিতর্ক সৃষ্টি হয় সিএনজি অটোরিকশা চালক ও এক ব্যবসায়ীর মধ্যে।
সিএনজি অটোরিকশা চালকদের দাবি- এই জায়গায় সিএনজি অটোরিকশা গাড়িগুলো রাখার জন্য অনুমতি দিয়েছে সিসিক। তখন সিটি করপোরেশনের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ এই বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ের সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের কাছে গেলে কর্তৃপক্ষকে না পেয়ে তারা ফিরে আসেন। সিটি করপোরেশনের গেইট থেকে বের হওয়া মূহুর্তে সিএনজি অটোরিকশা চালকরা ব্যবসায়ীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় ব্যবসায়ীরা নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য তাদের নিজেদের মার্কেটে চলে আসলে সেখানেও মার্কেটের অভ্যন্তরে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের একটি অংশ হামলা করে। এই হামলার প্রতিরোধে সিটি মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও পাল্টা ধাওয়া করেন। এই ঘটনায় সিএনজি অটোরিকশা চালকদের বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন এবং ব্যবসায়ীদের ৭ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। দুপুর ২টার পরে একদল সিএনজি অটোরিকশা চালক হাসান মার্কেটের ভেতরে থাকা ব্যবসায়ীদের উপরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে তখন হাসান মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও তাদের ধাওয়া করেন। এর পর থেকে সিটি মার্কেটের ব্যবসায়ী ও সিএনজি অটোরিকশা চালকদের মধ্যে দফায় দফায় দিনভর সংঘর্ষ চলে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কোর্ট পয়েন্টে অবস্থান নিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। এ ঘটনায় সারাদিন নগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে ব্যবসায়ীদের সাথে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সংঘর্ষের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক কোর্ট পয়েন্টে ছুটে আসেন সাবেক সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সিলেট জেলার মহাসচিব আব্দুর রহমান রিপন, লালদিঘীরপার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামসুল ইসলাম, হাসান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ খান, ওরিয়েন্টাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পাভেল আহমদসহ পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসাযী নেতৃবৃন্দকে নিয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে বিষয়টি নিয়ে বসার জন্য আহবান জানান।
এর পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দক্ষিণ সুরমার গ্রীণ লাইন অফিসে এ বিষয় নিয়ে সমঝোতার লক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, মহানগর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী, চেম্বার নেতৃবৃন্দ, দোকান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (উত্তর) মো. মাহফুজুর রহমান, ট্রাফিক ডিসি এবিএম আশরাফুল্লাহ তাহের ও পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে সিটি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নুর আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক রজব আহমদ জানান, আমাদের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের বার বার অনুরোধ করা হয়েছে যাতে তারা মার্কেটের সামনে গাড়ি না রাখেন। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনার সূত্রপাত হলে আমরা সিটি করপোরেশনের সাথে যোগাযোগ করে আসার মূহুর্তে সিএনজি অটোরিকশা চালকরা অতর্কিতভাবে আমাদের উপর ও মার্কেটে হামলা করেন। এ সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং আমরা ব্যবসায়ীদের নিবৃত্ত রাখতে চেষ্টা করেছি। এ ঘটনায় আমাদের ৭ জন ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট জেলা শাখার সভাপতি জাকারিয়া আহমদ ও সাধারন সম্পাদক আজাদ মিয়া বলেন, আমাদের ১৮ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫ জন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে এবং আমাদের ৭৬টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে রেজিষ্ট্রারী মাঠে গিয়ে ভাংচুর হওয়া ৬১টি সিএনজি অটোরিকশা পাওয়া যায় এবং শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায় যে, এ ঘটনায় সিলেট সার্কিট হাউজে রাত ৯টার সময় রাজনীবিদ, প্রশাসন, ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সবাইকে নিয়ে সমঝোতার বৈঠক চলছে।
এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুনু মিয়া বলেন, এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ বা মামলা দায়ের করা হয়নি। শুনেছি বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।