লোডশেডিং জনজীবনে কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে লোডশেডিংকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতি ও দুর্ভোগের বিষয়টি আমলে নেওয়া জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, রাজধানীসহ সারাদেশে ফের বেড়েছে লোডশেডিংয়ের তীব্রতা। দিনে অন্তত কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকছে শহরের বিভিন্ন এলাকা। গ্রামের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যনুযায়ী- গত কয়েকদিন ধরে গড়ে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। তবে প্রকৃত লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
আমরা মনে করি, লোডশেডিং তীব্র হওয়ার যে বিষয়টি জানা যাচ্ছে তা আমলে নিতে হবে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশে লোডশেডিংয়ের তীব্রতা বাড়ার কারণ হলো মূলত জ্বালানি সংকটে উৎপাদন ঘাটতি। এ ছাড়া কমেছে আদানির বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ। বিশেষ করে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া ও সামিটের এলএনজি সরবরাহ হ্রাসে পরিস্থিতিতে অবনতি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে সংকট সমাধানে দুই সংস্থার সঙ্গেই আলোচনা চলছে এটিও খবরে উঠে এসেছে।
বলা দরকার, বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী রোববার সারাদেশে প্রায় ১৩০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। যা পিক আওয়ারে অর্থাৎ সন্ধ্যায় আরও বেড়ে যায়। সে হিসেবে গত কয়েকদিন ধরে দিনে ও রাতে গড়ে প্রায় ১৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। আর এই প্রবণতা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে বিপিডিবির ডাটা বলছে, দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট, এর বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের আশপাশে। ফলে, প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে ঢাকা অঞ্চলে। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি সংকট নিরসনে দ্রæত যথাযথ পদক্ষেপও নিশ্চিত করতে হবে।
লক্ষণীয়, এমনটি জানা গেছে, সামিটের এলএনজি টার্মিনালের গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উপাদন করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, আদানির ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা থাকলেও বিগত কয়েকদিন ধরে এর সরবরাহ কমে ১ হাজার মেগাওয়াটে নেমেছে। ফলে, এই পরিমাণ বিদ্যুৎ ঘাটতিও মেটানো যাচ্ছে না। বিপিডিবি’র উৎপাদন বিভাগের প্রধান বলেছেন, আদানি ও সামিট দুই সংস্থার সঙ্গেই কথা হচ্ছে। সামিট বারবার ডেট দিচ্ছে কিন্তু সে অনুযায়ী সরবরাহ বাড়াচ্ছে না। এছাড়া আদানির শতভাগ বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য আলোচনা চলছে। যদিও তাদের বিদ্যুৎ বাবদ বকেয়ার পরিশোধের চাপ রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রæত এ বিষয়ে একটা সমাধান আসবে, কিন্তু যদি তা না করা যায় তাহলে বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হতে পারে। ইতোমধ্যে সোমবার সন্ধ্যা থেকে তেলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। আমরা মনে করি, সার্বিকভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনের বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, ভারতের ঝাড়খন্ডের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের গড্ডা কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ আদানির কাছে বাংলাদেশের বকেয়া ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার হয়েছে। আর এ পরিস্থিতিকে আদানিগোষ্ঠী ‘টেকসই নয়’ বলে বর্ণনা করেছে। এছাড়া, এটাও আমলে নেওয়া দরকার যে, বিদ্যুৎ কেনা বাবদ এই বকেয়া মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে বলে ইকোনমিক টাইমস মনে করছে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, লোডশেডিং হলে যেমন কর্মযজ্ঞে স্থবিরতা নেমে আসে, তেমনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। আর হঠাৎ করেই বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়লে উৎপাদন খাতসহ সব ধরনের কর্মযজ্ঞে নতুন করে সংকট দেখা দেয়। ফলে, এই সংকটকে কীভাবে দ্রæত নিরসন করা যায় সেই পথ খুঁজতে হবে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখা দরকার, লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়ে সর্বত্রই। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।