পদত্যাগের হিড়িকে শাবি প্রশাসনে স্থবিরতা

7

মাহাবুবুর রহমান, শাবি প্রতিনিধি

গত পাঁচ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের অনেক সরকারী বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল অনেকেই পদত্যাগ করেছেন। বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল পদগুলোতে দেখা দিয়েছে পদশুন্যতা। ফলশ্রæতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে। গত দশ আগস্ট পদত্যাগ করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (শাবি) বহুল আলোচিত উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ। পরবর্তীতে বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর, হল প্রাধ্যক্ষ, দপ্তর প্রধান ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালকগণ পদত্যাগ করেন। এতে বিশ^বিদ্যালয়ে দেখা দিয়েছে নানা সংকট।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিম ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার ক্লাস পরীক্ষা। দীর্ঘদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় দেখা দিয়েছে সেশনজটের সঙ্কা। এদিকে উপাচার্য না থাকায় সিন্ডিকেট বৈঠক করে ক্লাস-পরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাচ্ছেনা। কোষাধ্যক্ষ না থাকায় বিশ^বিদ্যালয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না বলে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন বলে অনেক নিরাপত্তাকর্মী জানান।
অন্যদিকে প্রক্টর-প্রভোস্টবডি এর অনুপস্থিতিতে ক্যাম্পাস এবং আবাসিক হলগুলোতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেড়েছে বহিরাগতদের পদচারণা। এর মাঝে আবাসিক হলগুলোতে মোটরসাইকেলযোগে মহড়া দিতেও দেখা যায় বহিরাগত দুর্বৃত্তদের। এতে হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অনেক শিক্ষার্থী জানান। এছাড়া বিদেশে উচ্চ শিক্ষার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ উত্তোলন করতে পারছেন না বলেন অনেকে জানিয়েছেন।
বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাজ আহম্মেদ ত‚র্য বলেন, অনেকে দেশের বাহিরে যাওয়ার জন্য যে কাগজপত্রের বিষয়াদি ছিল সেগুলা করতে পারছে না বলে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছে। আর এই প্রতিযোগীতার যুগে একটি সুযোগ হাতছাড়া হওয়া মানে পুরোপুরি অনিশ্চয়তার দিকে পা দেয়া। আমাদের একটি টিম নতুন গবেষনার ক্ষেত্রে যে বরাদ্দ ছিল সেটা পাব কিনা অনেকটাই অনিশ্চিত। আমার আশা থাকবে যতদ্রæত সম্ভব প্রশাসন নিয়োগ করে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করা এবং সেশনজট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, দুই মাস যাবৎ বেতন না পাওয়ায় কষ্টে দিনাতিপাত করতেছি আমাদের দেখার কেউ নাই। ধার করে চলতেছি সেই টাকাও এখন শেষের পথে।
চলমান সংকটে নিরসনে দ্রæত সময়ের মাঝে উপাচার্য নিয়োগ করে বিশ^বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিশ^বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, দ্রæত ক্লাস-পরীক্ষা চালু করার জন্য প্রশাসন নিয়োগ দেয়া জরুরি। যারা দায়িত্বে আসবেন তারা সিন্ডিকেট মিটিং করে ক্লাস- পরীক্ষা চালু করার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন যে প্রভাব পড়েছিল তা শিক্ষার্থী-শিক্ষক সকলের প্রচেষ্টায় অনেকটা কমিয়ে আনা হয়েছে। আবারও বিশ^বিদ্যালয় চালু হলে সকলের প্রচেষ্টায় সেশনজট মোকাবিলা করা যাবে।