কমলগঞ্জে পাহাড়ি ঢলের বন্যা

4

পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ
কমলগঞ্জে লঘুচাপের প্রভাবে মুষলধারে বৃষ্টির কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দুপুর ১২টায় ভানুগাছ রেলওয়ে সেতু এলাকায় ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েকটি এলাকায় রাস্তার ওপর দিয়ে পানি উপছে পড়ে সড়ক যোগাযোগ বিঘিœত রয়েছে। নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি সহ মানুষ জন পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ৪-৫টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ফলে বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে মুষলধারে বৃষ্টির পানি ও উজান থেকে পাহাড়ি এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সকাল থেকে ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। মঙ্গলবার, সকালে নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের লাঘাটা ছড়ার পানি বৃদ্ধি পেয়ে পানির চাপে দমকলের ঝিলের ওপর স্থাপিত কালভার্টটি ভেঙ্গে যায়। ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করে সুনছড়া-চিৎলীয়া-কামারছড়া সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। এছাড়া উপজেলার গোলেরহাওড় এলাকায় ধলাই নদীর বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে ফসলী জমি সহ কমলগঞ্জ-আদমপুর এবং শমসেরনগর-কুলাউড়া সড়কের শমসেরনগর বিমানবন্দর এলাকায় সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ওপর দিকে কমলগঞ্জ পৌরসভার খুশালপুর, ইসলামপুর, মাধবপুর, আদমপুর, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, মুন্সিবাজার, পতনঊষার ও রহিমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নিন্মাঞ্চলের আউশ ধানের জমি তলিয়ে গেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার কামদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হারনুর রশীদ ও আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান রঞ্জু বলেন, স্কুলে সকাল থেকে পানি ডুকেছে। স্কুল আঙ্গীনায় ও ক্লাসরুমে পানি ডুকার ফলে স্কুল ছুটি দিতে হয়েছে। উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কামরুল মাহমুদ জানান, রাত থেকে আমাদের পুরো এলাকার মানুষ পানিবন্দী। গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী ও সবজীগুলো তলিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের প্রয়োজন আমাদের। খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি।
এছাড়া উপজেলার কমলগঞ্জ পৌরসভার কুমড়াকাপন, উজিরপুর, আলেপুর, নরেন্দ্রপুর ও রামপাশা, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ, নারায়নপুর, রামপুর, রানীরবাজার, আদমপুর ইউনিয়নের হকতিয়ারখোলা, ঘোড়ামারা, ইসলামপুর ইউনিয়নের গোলেরহাওড়, মোকাবিল, শ্রীপুর, মাধবপুর ইউনিয়নের হীরামতি, মাধবপুরবাজার, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সুরানন্দপুর, লক্ষিপুর, চৈত্রঘাট ও রহিমপুর ইউনিয়নের শ্যামেরকোনা ও ছয়কুট এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিব আহমেদ বলেন, ধলাই নদীর পানি মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ভানুগাছ রেলওয়ে সেতু এলাকায় ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমার ১৪ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২টায় ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ধলাই নদীর আকস্মিক পানি বেড়ে গেছে। কমলগঞ্জে কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন ধলাই নদীর পানি প্রবাহের দিকে নজরদারি করছেন বলেও জানান।