স্টাফ রিপোর্টার
নগরীর চৌহাট্টায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঠেকাতে মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে ছাত্রলীগ অবস্থান নিয়েছে। এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে বাঁশ, লাঠিসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র দেখা যায়।
এদিকে, বিকেল ৪টার দিকে নগরীর বন্দরবাজারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করলে খবর পেয়ে ছাত্রলীগ গিয়ে তাদের ধাওয়া করে। এসময় শিক্ষার্থীরা সরে যায়।
কোটা সংস্কারের দাবিতে দুই সপ্তাহ ধরে সারা দেশে চলছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। সে ঢেউ লেগেছে সিলেটেও। সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এর মধ্যে রয়েছে মিছিল, অবস্থান, সড়ক অবরোধ ও মশাল মিছিল। তবে সিলেটে চলমান শিক্ষার্থী আন্দোলনে ভাঙনের সুর উঠেছে। কোটা আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আখ্যা দিয়ে রবিবার রাতে নিজের দায়িত্ব ছেড়েছেন আন্দোলনের সিলেট অঞ্চলের সহ-সমন্বয়ক নূর মো.বায়েজীদ। তিনি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। সোমবার ১৫ জুলাই তিনি কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি। শাবিছাত্র নূর মো. বায়েজিদ এই আন্দোলনের প্রথম থেকে সক্রিয় ভ‚মিকায় থাকলেও রবিবার ১৪ জুলাই থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে সমন্বয়কের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।
জানা গেছে, বায়েজিদ তার পদ থেকে অব্যাহতি নেয়ার আগে কোটা আন্দোলনকারীদের একটি ভার্চ্যুয়াল গ্রæপে দুঃখ প্রকাশ করে তার মতামত প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেন, বাংলাদেশে মেধার মূল্য না কোনো দিন ছিল, না আছে, থাকবে কি না সেটাও জানি না। এই দেশ সারাজীবন টাকা-ক্ষমতা আর পা-চাটাদের হাতেই বন্দি ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। আমি এই বিশ্বাস নিয়ে আন্দোলনে এসেছিলাম যে, সকল প্রকার দলমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে বাংলাদেশের সকল সাধারণ ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে ন্যায়ের পক্ষে। কিন্তু, ইদানিং আমার সমন্বয়ক কমিটির কিছু বন্ধুসহ, শাবিপ্রবিতে আমার আন্দোলনের সাথে থাকা অনেক সহকর্মীদের কথাবার্তায় আমার কাছে মনে হচ্ছে- তারা এই আন্দোলনে এসেও তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা বজায় রেখে সরকারবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হতে যাচ্ছে। যা, এই আন্দোলনের মূল মোটিভকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই, আমি সজ্ঞানে, চিন্তাভাবনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে, আমি আর এই আন্দোলনের সাথে নেই। ১৯৫২ সালের ভাষাশহীদ এবং ১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ এবং গাজী হওয়া সকলকে স্মরণ করার মাধ্যমে আমি এই আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালাম। এই ঘোষণার পর সোমবার তিনি শিক্ষার্থীদের কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি।
অপরদিকে, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের যৌক্তিকতার প্রতি সিলেট ছাত্রলীগ প্রথমে সংহতি প্রকাশ করলেও আন্দোলনের নামে বাড়াবাড়ি না করে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহŸান জানিয়েছে সংগঠনটি। শিক্ষার্থীদের বর্তমান কর্মকাÐকে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে মহানগর ও শাবি ছাত্রলীগ ৪ দিন ধরে আন্দোলনবিরোধী নানা কর্মসূচি পালন করছে। সোমবার রাতেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সিলেট মহানগরীতে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার দুপুরের পর শাবিসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে কঠোরভাবে অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগ।
এদিকে, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আবারও সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় রাস্তায় বসে শিক্ষার্থীরা সেøাগান দেন ‘আমার ভাইয়ের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান, এক হও লড়াই করো’ ইত্যাদি। এর আগে ক্যাম্পাসে লাঠিসোঁটা হাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বেলা তিনটার দিকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকেন।