ফেঞ্চুগঞ্জ সংবাদদাতা
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে প্রায় চার শতাধিক দোকানে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়া উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় বসবাস করছেন। তবে বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেশ কয়েকদিন লাগবে। পার্শ্ববর্তী কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে এ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যবসায়ী খালেদ আহমদ জানান, বন্যার কারণে তার দোকানে পানি ঢুকে পড়ায় মেঝেতে কয়েক দফা ইট ফেলে কোনো রকমে দোকান ঘরে চলাফেরা করছেন। বেড়েছে সাপের উপদ্রবও। অন্য সময় দোকানে দৈনিক বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু বন্যা দেখা দেওয়ার পর থেকে গড়ে ২০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। শুধু ব্যবসায়ী খালেদ নয়, বন্যার কারণে এ উপজেলা সদরের বাজারে অবস্থিত প্রায় চার শতাধিক দোকানে পানি ঢুকে পড়েছে। এ অবস্থায় বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। যেসব দোকানে একটু কম পানি ঢুকেছে, কেবল সেখানেই কিছুটা বেচাকেনা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, দু’দিনে এ অবস্থা হবে, কেউ ভাবতে পারেন নি।
মুদি দোকানের ব্যবসায়ী ছলিম উদ্দিন বলেন, বন্যার পানিতে আমার দোকানের মালামাল নষ্ট হয়েছে। একদম বেচাকেনা নেই। প্যাকেট করা মালামাল যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য দোকান দিনে খোলা রাখি। ১০ টাকাও বিক্রি করতে পারি না। বন্যার কারণে ২০-২২ দিন ধরে এ উপজেলায় চারদিকে কেবল পানি আর পানি। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সবখানেই পানি। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমর অথবা বুকসমান পানি।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যার কারণে উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় বসবাস করছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলায় ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোলাম বারী বলেন, ভারতের আসামের বরাক উপত্যকায় সম্প্রতি ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই কুশিয়ারার পানি এখন উপচে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সাধন দেবনাথ নামের সদরের এক বাসিন্দা জানান, তার বাসায় হাঁটুসমান পানি। এ কারণে ঘরে কিছু ইট ফেলে, তার ওপর কয়েকটি চৌকি বিছিয়ে কোনো রকমে মাচা বেঁধে বসবাস করছেন। তবে ঘরে দুটি শিশু থাকায় তার চিন্তা বেশি হচ্ছে। কখন জানি তারা পানিতে পড়ে যায়, এ নিয়ে তার দুর্ভাবনা হচ্ছে। এ ছাড়া রান্নাবান্না করতেও তাদের সমস্যা হচ্ছে।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, উপজেলা সদরের পার্শ্ববর্তী কুশিয়ারা নদীর পানি মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় উপজেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে বন্যার্ত মানুষের প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে উপজেলা প্রশাসন আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা করছে।