তাহিরপুরে বন্যায় ৩৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ

21

বাবরুল হাসান বাবলু, তাহিরপুর
পাহাড়ি ঢলের পানি থোরে ও হাওরের ঢেউয়ে ভেঙেছে সড়ক, ভাঙাচোরা সড়কে যাতায়াত করতে গিয়ে বেড়েছে ভোগান্তি। ভোগান্তি নিয়ে পথ চলতে হবে আগামী শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত। এমনটাই জানালেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তাহিরপুর কর্তৃপক্ষ।
সাম্প্রতিক সময়ের তিন দফা বন্যায় সীমান্তের বিভিন্ন নদী ও নালা দিয়ে পাহাড়ি ঢল নামে সেই সাথে বিভিন্ন হাওরের ঢেউয়ে তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের এলজিইডির সংযোগ সড়কের মধ্যে ৩৬ কিলোমিটার সড়ক স্থানে স্থানে ভেঙে যায়। বর্তমানে ভেঙে যাওয়া ও খানাখন্দ হওয়া সড়কে পথ চলতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন যেমন ভোগান্তিতে পড়েছে তেমনি পায়ে হেঁটে চলাচল করতে গিয়েও অনেকেই পড়েছেন নানা ভোগান্তিতে।
সরজমিন তাহিরপুর উপজেলার একাধিক সড়কে গিয়ে দেখা যায় সড়কের বন্যার ক্ষতচিহ্ন লেগে আছে।
সীমান্ত সড়ক বারেকঠিলা হতে বীরেন্দ্র নগর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে চানপুরর, রজনী লাইন, লাকমা, লালঘাট, বাগলি চড়া দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি সড়ক উপছে পরে পানির থোরে সড়কের ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার সড়ক কোন কোন স্থানে ভেঙে গেছে। কোন কোন স্থানে সড়কের বিটোমিন উঠে গেছে। তাহিরপুর বাদাঘাট ১৫ কিলোমিটার সড়কে তাহিরপুর সদর সূর্যেরগাঁও থেকে পাতারগাঁও পর্যন্ত স্থান দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে ও মাটিয়ান হাওরের ঢেউয়ে ৬ কিলোমিটার সড়ক স্থান স্থানে ভেঙে গেছে। আনোয়ারপুর বালিজুরী সড়কে আনোয়ারপুর ব্রীজের পূর্ব পাশ থেকে বালিজুরী পর্যন্ত ৪ কিলোমিটর সড়কে বিভিন্ন স্থান দিয়ে জাদুকাটা নদীর পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে ১ কিলোমিটারের মত সড়কের বিটোমিন উঠে গেছে।
তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে তাহিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে গোবিন্দ্রশ্রী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে শনি ও মাটিয়ান হাওরের ঢেউয়ে ভাটি তাহিরপুর ও ঠাকুরহাটি গ্রামের সামনে ১ কিরোমিটারের মত পাকা সড়ক ভেঙ গেছে। কাউকান্দি বাজার থেকে বালিয়াঘাট নতুন বাজার হয়ে শ্রীপুর পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে কামাড়কান্দি গ্রামের সামনে, খলিসাজুড়ি গ্রাম থেকে বালিয়াঘাট নতুন হাটি পর্যন্ত ও বালিয়াঘাট গ্রামের পশ্চিম থেকে শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়ক একাধিক স্থানে পাহাড়ি ঢল ও মাটিয়ান হাওড়ের ঢেউয়ে ভেঙে গেছে। বর্তমানে এ ভাঙাচোরা সড়ক পথ দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী ও সর্ব সাধারণ পথ চলতে গিয়ে ভোগান্তিতে রয়েছেন।
কামাড়কান্দি গ্রামের কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী কারক মোস্তাক আহমেদ জানান, ব্যাবসার কাজে প্রায়ই তিনি সুনামগঞ্জ, বাড়ি এবং ট্যাকেরঘাট, বড়ছাড়া যাতায়াত করেন সড়ক পথে। কিন্তু বন্যার সময় পাহাড়ি ঢলের পানির স্্েরাতে একাধিক সড়ক পথ ভেঙ্গে যাওয়ার কারনে ইচ্ছে করলেই তিনি যে কোন সময় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে যাতায়াত করতে পারছেন না।
বাগলি বারেক টিলা ও ট্যাকেরঘাট এলাকায় ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালন ট্যাকেরঘাট গ্রামের আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, বর্ষা মৌসুমে হাওড় ঘুরতে এসে ট্যুরিস্টরা রাত্রি যাপন করেন ট্যাকেরঘাট। সেখান থেকে মোটর সাইকেল কিংবা ব্যাটারি চালিত অটোতে করে তারা লালঘাট চড়া, লাকমা চড়া, বারেকঠিলা, যাদুকাটা নদী ও শিমুল বাগান ঘুরতে যান। গত কয়েকদিন আগে বন্যার সময় মেঘালয় পাহাড়ের ঢলের পানি নেমে এ সড়ক পথে অনেক স্থান ভেঙে যাওয়ায় তাদের এ পথে বাইক চালাতে গিয়ে একদিকে যেমন কষ্ট হচ্ছে, অন্য দিকে সময়ও লাগছে দ্বিগুণ।
ঢাকা থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর ও ট্যাকেরঘাট ঘুরতে আসা পর্যটক আল আমীন বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে তাহিরপুরের সীমান্ত সড়কটি অনেক স্থানে ভেঙে যাওয়ায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের সীমান্ত এলাকার চড়া ও নালাগুলো দেখতে গিয়ে ভোগান্তি বেড়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আরিফ উল্ল্যা খান বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় উপজেলায় ৩৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলোর কিছু অংশ এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে, ই চ্ছে করলেও বর্ষাকালে সংস্কার করা সম্ভব না।