বন্যার পানি কমলেও বড়লেখায় ঘরে ফেরা নিয়েই যত দুশ্চিন্তা

1

বড়লেখা সংবাদদাতা

আপ্তাব উদ্দিনের পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আছে ২০ দিন ধরে। ঘরে এখনও ফেরার উপায় নেই। বাড়ির চারদিকে বন্যার পানি। ঢেউয়ে চারপাশের মাটি সরে গেছে। কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে ঘরটি। শনিবার আপ্তাবকে পাওয়া যায় ঘরের সামনে। তাঁর গ্রাম মুর্শিবাদকুরা পড়েছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের অনেক গ্রামই হাকালুকি হাওরপাড়ে। বন্যার পানি না নামায় তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ১৬ জুন থেকে বড়লেখায় ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল শুরু হয়। এতে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২৫২টি গ্রাম প্লাবিত হয়। তলিয়ে যায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলের মাঠ। লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ঘরে টিকতে না পেরে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যায়। কেউ আবার আশ্রয় নেয় আত্মীয়বাড়িতে।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে থাকায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বানভাসি মানুষ। কয়েকদিন ভারী বর্ষণ বন্ধ ছিল। উজানের ঢলও আসেনি। ফলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছিল। কিন্তু ১ জুলাই থেকে ফের ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়। বিশেষ করে উপজেলার তালিমপুর, বর্ণি, দাসেরবাজার, সুজানগর ও বড়লেখা সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে।
শনিবার তালিমপুর ইউনিয়নের হাল্লা, কুটাউড়া, মুর্শিবাদকুরা, পাবিজুরীর পাড় ঘুরে দেখা গেছে, বহু ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে আছে। কারও ঘরের চারপাশের মাটি সরে গেছে। কারও ঘর কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ আফালের (ঢেউ) বিরুদ্ধে লড়াই করে ঘর বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
মুর্শিবাদকুরার জেলে মস্তই মিয়ার ঘরের চারদিকেও পানি। তিনি বলেন, ‘কষ্ট করে ঘরে আছি। আশ্রয়কেন্দ্রে যাইনি। গেলে ঘর আফালে ভেঙে যাবে।’ তাই ঝুঁকি নিয়ে আফালের সঙ্গে লড়ে লড়াই ঘর টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন তিনি।
আপ্তাব উদ্দিনের বাড়িঘরে পানি ওঠে ১৭ জুন। সেদিনই পরিবার নিয়ে তিনি আশ্রয় নেন বড় ময়দান উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে। বন্যার পানি না কমায় তারা ঘরে ফিরতে পারেননি। তবে নৌকা নিয়ে নিয়মিত ঘরের অবস্থা দেখে যান আপ্তাব। শনিবার তিনি বলছিলেন, বন্যায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। ঘরের অবস্থা ভালো নয়। চারপাশের মাটি সরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। ভোগান্তির মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
বন্যার আগে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতেন আপ্তাব। এখন দিনে নৌকা চালান আর রাতে সুযোগ পেলে মাছ ধরেন। এভাবেই কোনোমতে কাটছে তাঁর আশ্রয়কেন্দ্রের দিনকাল।
আপ্তাবের মতোই দিন কাটছে এলাকার অধিকাংশ মানুষের। বন্যা যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, তাদের দুর্ভোগ তত বাড়ছে। তারা কীভাবে সংসার চালাবেন, এ নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর কীভাবে মেরামত করে বাসযোগ্য করবেন তারা- এমন দুশ্চিন্তা ঘিরে রাখছে সারাক্ষণ। তারা বলছেন, বন্যাকবলিত এলাকায় প্রশাসনের পাশাপাশি ব্যক্তি-সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছু কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, প্রথম দফার বন্যায় ৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। এতে প্রায় ৫০০ পরিবার আশ্রয় নেয়। পানি নামতে শুরু করার সময় চারটি আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে ফিরেছে কিছু পরিবার। রোববার পর্যন্ত ২৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৪৫০টি।
বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানান বড়লেখার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজরাতুন নাঈম। রোববার বিকেলে তিনি বলেন, বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ চলছে। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইনও দেওয়া হচ্ছে। তারা সার্বক্ষণিক বন্যাকবলিত মানুষের খোঁজখবর রাখছেন।