হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন হাওর বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি

3

কুদরত পাশা, সুনামগঞ্জ

উৎসবমুখর পরিবেশে কৃষকদের স্বার্থে গড়ে ওঠা ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ এর তৃতীয় কেন্দ্রীয় সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনে জেলা ও উপজেলার কাউন্সিলরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের তৃতীয় সম্মেলনে অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জমান চৌধুরী সভাপতি, অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার দাস রায় কার্যকরী সভাপতি ও বিজন সেন রায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। লতিফা কনফারেন্স সেন্টার এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার সকাল ১১টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়।
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার দাস রায়। সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়ের পরিচালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম।
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দৈনিক সুনামকণ্ঠ সম্পাদক ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়। তাছাড়া সম্মেলনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক একে কুদরত পাশা।
প্রথম অধিবেশনের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, হাওর বাঁচাও আন্দোলন আগামী দিনে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে লড়াই করে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করবে। আন্দোলনের মাধ্যমে হাওরের কৃষকদের অধিকার আদায় করা সাধারণ কৃষককে নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছিলাম বলেই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এসেছিলেন। কৃষকদের নিয়েই হাওরের স্বার্থরক্ষায় এই সংগঠনকে জাগিয়ে রাখতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, আমাদের আন্দোলনের আওয়াজ সরকারের কাছে গিয়েছে। আমাদের আন্দোলনের কারণেই মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সুনামগঞ্জ এসে হাওর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাছাড়া সরকার আমাদের আন্দোলনের কারণেই ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করেছে। নীতিমালা বদলিয়ে পিআইসির মাধ্যমে কাজ বাস্তবায়ন করছে। আমাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে হাওর এলাকার নদ-নদী খনন করছে সরকার।
বক্তারা আরো বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নই। আমরা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করব। আমরা আগামীতে এই কৃষকদের বোরো ধান ঘরে তুলতে দেখতে চাই। তাদের মুখের হাসি দেখতে চাই। আজ থেকে আমাদের একটাই শপথ আমরা হাওরের কোনো কাজে দুর্নীতির কাছে মাথা নত করব না। কৃষকদের স্বার্থেই আমরা নিরলস কাজ করব। অনিয়ম দুর্নীতি বা অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কৃষকদের নিয়ে সোচ্চার থাকব আমরা।
সিলেট সুনামগঞ্জের বন্যা প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, আমাদের সংগঠন প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনটি দাবি ছিল। তার মধ্যে অন্যমত দাবীছিল হাওর এলাকার সকল নদী ও খাল খনন করতে হবে। আজকের বন্যা হতো না সরকার যদি সকল নদী খনন করতো। বক্তারা বলেন, হাওরকে হাওরের মতো থাকতে দিতে হবে। উন্নয়নের নামে হাওরে যেসব রাস্তা তৈরী করা হয়েছে তা এখন হাওরবাসীর মরণফাঁদে পরিনত হচ্ছে। রাস্তার নাতে সকল খাল বন্ধকরা হয়েছে যার ফলে হাওরে মৎস্যসম্পদ বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে। আমরা দাবি করছি হাওর বিষয়ক মন্ত্রনালয় গঠন করতে হাওরের এ সব সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে সরকার। আমাদের আন্দেলন চলছে চলবে। যতক্ষণ পর্যন্ত কৃষকদের সমস্যা সমাধান না হচ্ছে।
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে মুক্ত আলোচনা সভায় অংশ নেন, সিলেট জেলা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক চিত্ত রঞ্জন তালুকদার, সুখেন্দু সেন, শাহদাৎ হোসেন, সদস্য মিজবাহুল বারী চৌধুরী লিটন, মিসবাহ উদ্দিন, অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস, সঞ্চিতা চৌধুরী, বজলুল হাসান চৌধুরী রুহেল। সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াক‚ব বখত বাহলুল, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক সামছুল ইসলাম সরদার খেজুর, সিলেট জেলা কমিটির যুগ্ম আহŸায়ক অ্যাডভোকেট সুব্রত দাস, নেত্রকোনার প্রতিনিধি মোনায়েম খান, সেলিম চৌধুরী, হবিগঞ্জের ফরহাদ চৌধুরী, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শহীদ নূর আহমেদ, জামালগঞ্জ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন পুরকায়স্থ, ছাতক উপজেলা সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরী, শান্তিগঞ্জ উপজেলা সভাপতি রাধিকা রঞ্জন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ, নজরুল ইসলাম প্রমূখ। বিভিন্ন জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ সাংগঠনিক নানা বিষয় তুলে ধরে আগামী কর্মপরিকল্পনা ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
দ্বিতীয় অধিবেশনে অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জমান চৌধুরী কে সভাপতি, অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার দাস রায় কে কার্যকরী সভাপতি ও বিজন সেন রায় কে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়।