পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুসহ ৮ জনের মৃত্যু

21

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটে পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিশু এবং স্কুলছাত্রীসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ২০ জুন ও গত বুধবার ১৯ জন সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি বগাইয়া হাওড়ে গ্রামের ক্লাব ঘরের সামনে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনে জড়িয়ে জুয়েল মিয়া (১৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। নিহত জুয়েল ওই গ্রামের মান্নান মিয়ার ছেলে ও পেশায় একজন দর্জি বলে জানিয়েছেন গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম। এর আগে, বুধবার দিনগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের কাপনা নদী থেকে নৌকা ডুবে নিখোঁজ যুবকের লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। মৃত মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন (২৬) ফতেহপুর প্রথম খ-গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে ওসি জানান, রাতে ফতেহপুরের বাংলাবাজার থেকে অন্যদের সঙ্গে নৌকায় বাড়ি ফিরছিলেন সাখাওয়াত। ফতেহপুরের লংপুর সড়ক এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ নৌকাটি ডুবে যায়। অন্যরা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও সাখাওয়াত নৌকাসহ স্রোতে তলিয়ে যান। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর রাত ১২টার দিকে ঘটনাস্থলের পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে, বুধবার সন্ধ্যার পর বিছনাকান্দির হাদারপার বাজার সংলগ্ন উপরগ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নাজমিন আক্তার (১০) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। অন্য শিশুদের সাথে লুকোচুরি খেলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই নাজমিন মারা যায়। সে বিছনাকান্দি ইউনিয়নের উপরঘাম গ্রামের আব্দুলাহ মিয়ার দ্বিতীয় মেয়ে।
বুধবার বিকেল ৫টার দিকে সিলেটের নগরীর দক্ষিণ সুরমার ঝালোপাড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মিনতি রানী (৪০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। মিনতি ঝালোপাড়ার নৃসিংহ জিউর আখড়ার পার্শ্ববর্তী বাসার বাসিন্দা। মন্দিরের পানির পাম্পে সুইচ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মিনতি রানী গুরুতর আহত হলে দ্রæত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দক্ষিণ সুরমা থানার কদমতলি ফাঁড়ির ইনচার্জ দেবাংশু পাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার বিকেলে জকিগঞ্জ উপজেলায় মাছ ধরতে গিয়ে স্রোতে ভেসে যাওয়া আব্দুল হালিম (৫৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি মুহিদপুর গ্রামের মৃত রনই মিয়ার ছেলে ও পেশায় পিকআপ চালক। ঘটনাটি বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর এলাকায় ঘটেছে।
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন জানান, আব্দুল হালিম ভেলা নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। সকাল থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে, বেলা ২টার দিকে শাহবাগ মুহিদপুর এলাকায় তার লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের শ্যামেরকোনা গ্রামে পানিতে ডুবে এক শিশু ও এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিশুরা হলো- উপজেলার পশ্চিম শ্যামেরকোনা গ্রামের পচন মিয়ার ছেলে ছাদি মিয়া (৮) এবং একই গ্রামের জমির মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (১৭)।
চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকতার উদ্দিন জানান, ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে শ্যামেরকোনা গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। দুপুরে পানিতে খেলতে নেমে সাঁতার না জানার কারণে দুজনই পানিতে ডুবে যায়। দুজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
বড়লেখাঃ মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বন্যার পানিতে ডুবে আয়শা বেগম (১২) নামে এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার ভাগাডহর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত আয়শা ওই গ্রামের মো. সমছ উদ্দিনের মেয়ে। সে স্থানীয় গল্লাসাঙ্গন উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তো। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে বড়লেখা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্কুলছাত্রী আয়শা বেগম বাড়ির পাশে বন্যার পানি দেখতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এক পর্যায়ে বন্যার পানিতে ডুবে সে মারা যায়। পরে স্বজনরা তার লাশ উদ্ধার করেন।
বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ফরিদ উদ্দিন জানান, শিশুর পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের জন্য স্বজনরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছেন। অনুমতি পাওয়ায় লাশ দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে।