সুবিধা বহাল থাকছে সরকারি চাকরিজীবীদের

22

কাজির বাজার ডেস্ক
আগামী অর্থবছরেও সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ৫ শতাংশ হারে সাধারণ ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি মূল বেতনের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ (ন্যূনতম ১ হাজার টাকা) প্রণোদনাও বহাল থাকছে। এ সুবিধা সরকারি চাকরিজীবীদের পাশাপাশি পেনশনভোগী ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও পাবেন। আগামী বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তারা চলতি বাজেটে দেওয়া সুবিধা আগামী অর্থবছরে স্থগিত রাখার প্রস্তাব করেন। তবে এ প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত সরকারের ওপরের মহলের নির্দেশে আমলে আনা হয়নি।
সাবেক তত্ত¡ধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মো. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার আর্থিক সংকটে রয়েছে। অনেক খাতের খরচ কাটছাঁট করা হচ্ছে। অর্থ সংগ্রহে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য এই চাকরিজীবীদের সুবিধা স্থগিত করলে ভালো হবে। তবে সরকার কোনো সুবিধা দিয়ে তা প্রত্যাহার করলে বা স্থগিত করলে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই ডলারসংকট দেখা দেয়। আর এতে বছর দুয়েক ধরে দেশের বাজারে পণ্যসংকট দেখা দেয়। বাজারে প্রায় সবকিছুর দাম বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে কিছুটা স্বস্তি দিতেই সরকারি চাকরিজীবীদের সুবিধা দেওয়া হয়।
রপ্তানি প্রণোদনাসহ বিভিন্ন খাতের প্রণোদনার হার প্রতিবছরের বাজেটে নতুন করে নির্ধারণ করা হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঘোষিত সরকারি চাকরিজীবীদের এই প্রণোদনা সরকার বাতিল না করা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ৫ শতাংশ হারে সাধারণ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রণোদনা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মূল বেতনের অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ থাকতে পারে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বেতন-ভাতায় বরাদ্দের তুলনায় প্রায় ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ বা ৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৭৭ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। বেতন-ভাতার পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত করপোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধা ও গ্রাচ্যুইটিতে বরাদ্দের অর্থ যোগ করলে আগামী অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ ছিল ৮০ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে ৭৭ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় প্রকৃত ব্যয় ছিল ৬৩ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) এ খাতে প্রকৃত ব্যয় ছিল ৬২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় প্রকৃত ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৬১ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা।
সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল।
এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছিল, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী চললেও চলতি বছর দ্রব্যমূল্য অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার সুবিধা বাড়ানো হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ। সরকারি চাকরিতে ২০টি ধাপ (গ্রেড) রয়েছে। প্রথম ধাপে বেতন-ভাতা পান সচিবরা।