সিলেটে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বজ্রপাত। ঋতু ভিত্তিক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের রূপ পরিগ্রহ করেছে এই প্রাণঘাতী বজ্রপাত। দু’একদিন পর পর সিলেটের কোথাও না কোথায় বজ্রাঘাতে প্রাণহানি ঘটছে। হাওড়-বাওড়, ক্ষেত-খামার কিংবা বাহিরে বের হলেই আতংকে থাকতে হচ্ছে মানুষজনকে। গত আড়াই মাসে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ৯৮ জনের। এদের অধিকাংশই কৃষক। এছাড়া সিলেটের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় সুনামগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বজ্রপাতের মতো ঘটনা বাড়ছে। যা অস্থির বায়ু¤øলের ইঙ্গিত। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বজ্রপাতের পরিমাণও বাড়ছে। অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে গবেষণায় বলেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৮৪ লাখ বজ্রপাত হচ্ছে। যার ৭০ শতাংশই হয় এপ্রিল থেকে জুন মাসে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশে বজ্রপাতের ঘটনা বছর বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকার পরিধিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের যেসব অঞ্চলে আগে খুব একটা বজ্রপাত হতো না, এখন সেসব অঞ্চলে বজ্রপাত বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি অপর্যাপ্ত আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা এবং বড় বৃক্ষের অনুপস্থিতিকে বজ্রপাতজনিত প্রাণহানির কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অবস্থান করছে। গরম বেশি হওয়ায় চলতি বছর বেশি বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন আবহাওয়াবিদরা। চলতি বছর গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে বেশি বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদ ও বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন- যেসব অঞ্চলে বজ্রপাত হবে এর মধ্যে রয়েছে সিলেট বিভাগ। এ আশঙ্কা সত্যি করে সিলেটে দু-একদিন পরপরই ঘটছে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা।
শুক্রবার ১৭ মে এক দিনেই মাত্র ১০ ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেটের দুটি উপজেলায় বজ্রপাতে এক শিশুসহ দুইজন নিহত হয়েছে। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়নে বজ্রপাতে খালেদ আহমদ (২০) নামে এক তরুণ এবং এর আগে ওইদিন দুপুরে জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রামে রেদোয়ান আহমদ (১২) নামে এক শিশু মারা যায়। নিহতদের মধ্যে খালেদ গোয়াইনঘাট উপজেলার কুতুবনগর গ্রামের মৃত ইসমাইল আলীর ছেলে। তিনি বাজারে একটি টেইলার্স পরিচালনা করতেন। আর রেদোয়ান নোয়াগ্রামের মাসুক আহমেদের ছেলে এবং স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
খালেদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় ডৌবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘ডৌবাড়ি বাজারে খালেদের টেইলার্স ব্যবসা আছে। সেখানে কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফেরার পথে জাইবলের পাশের রাস্তায় বজ্রপাতে তিনি নিহত হন।’ এর আগে শুক্রবার দুপুর ১ টার দিকে বাবার সঙ্গে শিশু রেদোয়ান ও তার ভাই বাড়ির পাশে মাছ ধরতে যায়। তখন হালকা বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বজ্রপাত হচ্ছিল। এসময় বজ্রপাত রেদোয়ানের শরীরে আঘাত করে। দ্রæত তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
৬ মে সিলেট বিভাগে একদিনে বজ্রপাতে ৩ জন মারা যান। সিলেটের গোয়াইনঘাটে বজ্রপাতে করম আলী (৬৭) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তি উপজেলার ছৈলাখেল এলাকার মৃত আফসর উদ্দিন মোল্লার ছেলে। ৬ মে দুপুরে উপজেলার ছৈলাখেল গ্রামে বাড়ির পাশেই খোলা ময়দানে পালিত গরু আনতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
একই দিন মৌলভীবাজারের সদর উপজেলায় বজ্রপাতে আব্দুল হাই নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার বিকালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবালা ইউনিয়নের পুদিনাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, কৃষক আব্দুল হাই হাওড়ে ধান কাটছিলেন। এসময় কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়। বজ্রপাতের আঘাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া ৬ মে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বজ্রপাতে হালিমা খাতুন (৪৪) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার সাটিয়াজুড়ি ইউনিয়নের দারাগাও গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী। রবিবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ির উঠানে বজ্রাঘাতে তার মৃত্যু হয়।