কাজির বাজার ডেস্ক
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুশিল্পী ফারজিনা আক্তারের পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণের কাজ আজ বুধবার থেকেই শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। মঙ্গলবার দুপুরে ফারজিনার বাবা মো. সায়েমকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দেখা করার পর সংশ্লিষ্টদের এই নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রæত ঘর না পেয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলো ফারজিনার পরিবার। গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
ফারজিনার বাবা মো. সায়েম জানান, সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তাঁকে ফোন করে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করার জন্য বলা হয়। এরপর তিনি সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ এসে দুপুরে দেখা করেন। জেলা প্রশাসক তখন তাঁর সার্বিক অবস্থার খোঁজ নেন। তাঁর সামনেই আজ বুধবার থেকে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। সেখানে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক সুচিত্রা রায়সহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক ফারজিনাদের পরিবারের ব্যয় নির্বাহের জন্য মো. সায়েমকে নগদ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন।
এর আগে গত সোমবার ১৩ মে সকালে সুনামগঞ্জ পৌর বাস টার্মিনালে থেকে বাবা মা ও এক ছোট ভাই ও বোনকে নিয়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জ চলে যায় দাদীর কাছে। সেই এলাকার একটি বাসা ভাড়াও নিয়েছেন। সাথে কয়েকটি বস্তায় প্রয়োজনীয় থালা বাসন, কাপড় ও কাগজ পত্র ছিল।
সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি উঠে আসলে বিষয়টি নজরে আসে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরীর। এরপর তিনি ফারজিনার বাবা সায়েমকে ফোনের মাধ্যমে মঙ্গলবার নিজ অফিসে এনে ফারজিনা আক্তারের লেখাপড়া ও ভরণ পোষণের জন্য ২৫ হাজার টাকা দেন। সেই সঙ্গে দ্রæত সরকারের দেওয়া জমিতে ফারজিনাদের জন্য ঘর নির্মাণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফারজিনার বাবা মোঃ সায়েম ভ‚মিহীন হতদরিদ্র। সামান্য জায়গার উপর বাড়ি ছিল সেই জায়গা টুকুও অনেক পূর্বেই অভাবের তারনায় বিক্রি করে। পরে অন্যের জায়গায় খুপরি ঘর করে কোনো রখমে জীবন যাপন করলেও গত ২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমায় অভিনয় করে শিশু শিল্পী শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে আলোচনায় আসে ফারজিনা। এরপর গত বছরের ১৪ নভেম্বর ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ফারজিনা পুরস্কার গ্রহণ করে। এর পর পুরষ্কারের টাকায় নিজ গ্রামে ঘর বানানোর ইচ্ছে প্রকাশ করে। পুরস্কার নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সুনামগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর সাথে দেখা করলে ফারজিনাকে মিষ্টি খাওয়ান ও পরিবারের আর্থিক অবস্থার খরব নেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একটি ঘর করার আশ্বাস দেন এবং তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফারজিনার পরিবারের খোঁজ খবর রাখার নির্দেশনাও দেন। এসময় লেখা পড়ার জন্য ২০ হাজার টাকা দেন এবং সব সময় পাশে থাকার কথাও জানান জেলা প্রশাসক।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি ঘরের জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ডিসেম্বর মাসে আশ্রয়ণ প্রকল্প ২ এর মাধ্যমে ফারজিনার পরিবারকে একটি ঘর দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সময়ে ফারজিনার বাবা ও মায়ের নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় ১০ লাখ টাকার একটি পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমান্তবর্তী বড়ছড়া মৌজায় ফারজিনার পরিবারকে ১৭ শতক জমি দেওয়া হয়। ওই জমিতে একটি ঘর করে দেওয়ার জন্য সমাজসেবা কার্যালয়ের অনুক‚লে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু সমাজসেবা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। সাত মাস পার হয়ে গেলেও ঘর আর হয়নি। ফলে জমিটিও বেদখল হয়ে যাচ্ছে তার জন্য উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কার্যালয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো সহযোগিতা পাননি ফারজিনার পিতা সায়েম। ৭ মাস ধরে প্রধানমন্ত্রী দেয়া সেই মাথা গোজার ঘর না পেয়ে ফারজিনার বাবা মোঃ সায়েম ক্ষোবে অভিমানে এলাকা ছেড়ে চলে যান।