দেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমছে

28

 

কাজির বাজার ডেস্ক
বাংলাদেশে প্রতি বছর বাড়ছে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা। কিন্তু কমছে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা। তবে দেশের শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়তে যাওয়ার হার বাড়ছে। দেশের মোট ৫৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৭টিতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী নেই। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে, সেগুলোতেও সংখ্যায় অপ্রতুল। দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে থাকলেও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আগ্রহী নয় বিদেশি শিক্ষার্থীরা। এমনকি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজনও বিদেশি শিক্ষার্থী নেই।
এর কারণ হিসাবে পুরোপুরি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তৈরি না হওয়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছে, শিক্ষার পরিবেশ ও মানের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বেড়েছে কিন্তু যোগ্য শিক্ষক তৈরি করা যাচ্ছে না। মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। আবার আগে যেসব দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসতেন, সেসব দেশ উচ্চ শিক্ষায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিযোগিতামূলক উন্নত বিশ্বের বহু বিশ্ববিদ্যালয় নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা যেমন অর্থায়ন, স্কলারশিপ দেওয়ার কারণে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ৪৯তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬টিতে বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ৬৭০ জন। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪ জন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ৭ জন, বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭২ জন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ জন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ জন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৪ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৯ জন, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১৭ জন, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১ জন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৩ জন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে ১২ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান?ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জে ১৯১ জন ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ জন।
বিদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের গত তিন বছরের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছরই বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। ২০২২ সালে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২৬টিতে ৬৭০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তেন। এর মধ্যে ছাত্র ৫০৪ জন ও ছাত্রী ১৬৬ জন। আগের বছর ২০২১ সালে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিল ৬৭৭ জন। ২০২০ সালে ছিলেন ৭৬৭ জন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার গুণগত মানে পিছিয়ে রয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থী পড়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশও নেই। এ ছাড়া আগে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসতেন। সেসব দেশেও নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে এবং উচ্চ শিক্ষার সুযোগ বেড়েছে। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। উলটো দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিদেশে পড়তে যাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। এ বছর আমাদের দেশ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে করতে গেছেন।
ইউজিসির তথ্য বলছে, ২০২০ সালে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিল ২ হাজার ৩১৭ জন। পরের বছর (২০২১) তা দাঁড়ায় ২ হাজার ২৮১ জন। ২০২২ সালে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৫৭ জনে।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১০ বছরে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কোনো বছরই এক হাজার ছাড়ায়নি। ১০ বছরের মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ২০১৮ সালে। ওই বছর ৮০৪ জন বিদেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
ইউজিসির তথ্য বলছে, দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। ২০২২ সালে দেশে ১০০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাক্রম চালু ছিল। তার মধ্যে ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন ৩৭টি দেশের ১ হাজার ২৮৭ জন বিদেশি শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ২৬০ জন ছিলেন ছাত্রী। আগের বছর ২০২১ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ১ হাজার ৬০৪ জন। এক বছরের ব্যবধানে ৩১৭ জন বিদেশি শিক্ষার্থী কমেছে।
এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বে) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, দেশের উচ্চশিক্ষায় গবেষণা, পরিবেশ ও শিক্ষার মানের ঘাটতি রয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের মান অনুযায়ী আমরা শিক্ষার মান উন্নত করতে পারিনি। এখানে যে ধরনের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়, তা দেখে বিদেশি শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না। তিনি বলেন, দেশে শিক্ষার মানের পাশাপাশি শিক্ষকদের মানও বাড়াতে হবে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের যে ধরনের সমর্থন সহযোগিতা দরকার সেগুলো বাড়াতে হবে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, তবে প্রাইভেট মেডিকেলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। কারণ আমাদের দেশ ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে উন্নত।