কাজির বাজার ডেস্ক
পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য ঘুরছেন প্রায় ২৫ লাখ তরুণ-যুবক। অথচ সরকারি দপ্তরগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৫ লাখের বেশি পদ খালি। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ধীরগতি ও জটিলতার কারণে এসব পদ পূরণ করা যাচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে এসব শূন্য পদে জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে পরিপত্র জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ১১ ফেব্রæয়ারির এ পরিপত্রের আলোকে ব্যবস্থা নিতে সব মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দাপ্তরিক কাজে গতিশীলতা আনতে সব মন্ত্রণালয় এবং আওতাধীন দপ্তর, অধিদপ্তর ও সংস্থার রাজস্ব খাতের শূন্য পদ জরুরি ভিত্তিতে পূরণ করতে হবে।
খাদ্য অধিদপ্তর ২০১৮ সালে খাদ্য উপপরিদর্শক ও সহকারী উপপরিদর্শকসহ ২৪ পর্যায়ে ১ হাজার ১৬৬টি পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। দীর্ঘ পাঁচ বছরেও শেষ করতে পারেনি সেই নিয়োগ। কিছু পদে নিয়োগ হলেও প্রশাসনিক জটিলতায় আটকে আছে বেশির ভাগ নিয়োগ। ওই সব পদসহ ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট আরও ১ হাজার ৩৭৭টি পদে নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি, যা এখনো চলমান বলে জানিয়েছেন খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. জামাল হোসেন।
শুধু খাদ্য অধিদপ্তরই নয়, অধিকাংশ সরকারি দপ্তরই সময়মতো জনবল নিয়োগ দিতে পারে না। নিয়োগের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয় চাকরিপ্রার্থীদের। এতে সরকারি দপ্তরে দিন দিনই বাড়ছেই শূন্য পদের সংখ্যা।
শূন্য পদ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ৭ ফেব্রæয়ারি জাতীয় সংসদকে জানান, সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদের বিপরীতে ৫ লাখ ৩ হাজার ৩৩৩টি শূন্য পদ আছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা এখন ২৪ লাখ ৩০ হাজার।
জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলা হয়েছে, নিজস্ব অনুমোদিত নিয়োগ বিধিমালা বা প্রবিধানমালা, এনাম কমিটি কর্তৃক তৈরিকৃত অর্গানোগ্রাম ও পদ সৃষ্টির আদেশ, শূন্য পদ পূরণসংক্রান্ত সরকারের অপরাপর যাবতীয় বিধিবিধান বা আদেশ এবং সব আনুষ্ঠানিকতা যথাযথ অনুসরণ করে শূন্য পদ পূরণ করতে হবে। শূন্য পদ পূরণের তথ্য ১৫ দিনের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১০ সালের ২৪ নভেম্বরের পরিপত্র অনুসরণ করে রাজস্ব খাতের সরাসরি নিয়োগযোগ্য শূন্য পদের ৯০ শতাংশ পদ পূরণের জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। অবশিষ্ট ১০ শতাংশ সংরক্ষিত শূন্য পদ পূরণের জন্য ২০১৫ সালের ২৮ মে তারিখের পরিপত্র মোতাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিতে হবে। সরকারের গত মেয়াদেও একাধিক সচিব সভায় দ্রæত শূন্য পদ পূরণের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ ৫ ফেব্রæয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় একই বিষয়ে নির্দেশনা দেন সরকারপ্রধান। তারপরও গতি ফেরেনি শূন্য পদ পূরণের কার্যক্রমে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও নিয়োগ প্রক্রিয়ার গতি খুবই কম। কোনো কোনো দপ্তর ও সংস্থার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের চার-পাঁচ বছরেও নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হচ্ছে না। এতে রাজস্ব খাতের শূন্য পদগুলো বছরের পর বছর শূন্যই থেকে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও বাড়ছে। নানা কারণে নিয়োগ বিলম্ব হতে পারে বলে জানিয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভ‚ইঞা। তাঁর মতে, পদের তুলনায় প্রার্থী অনেক বেশি হলে এবং নিয়োগবিধি-সংক্রান্ত জটিলতায় দেরি হতে পারে। আবার আদালতে মামলার কারণেও দেরি হতে পারে। এ ছাড়া কাক্সিক্ষত যোগ্য প্রার্থীর অভাবে, বিশেষ করে কারিগরি পদগুলোতে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায় না।
মোশাররাফ হোসাইন ভ‚ইঞা বলেন, স্বাভাবিকভাবে প্রশাসনে ১০-১২ শতাংশ পদ খালি থাকে। তবে ৫ লাখের বেশি খালি হলে সেটা অবশ্যই বেশি। সরকার যৌক্তিক কারণেই জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদ পূরণের নির্দেশ দিয়েছে। পদ খালি থাকলে জনগণ সেবাবঞ্চিত হয়।