সড়কে প্রাণহানির খবর প্রতিদিন গণমাধ্যমে আসছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে। ২০২৩ সালে ২ হাজার ৫৩২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৪৮৭ জন এবং আহত হয়েছেন ১ হাজার ৯৪৩ জন। নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ৯০৯ জনের বয়স ১৪ থেকে ৪৫ বছর। গত পাঁচ বছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৫৪ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে। গত শনিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ২০২৩ সালের সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও পর্যালোচনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে। দুর্ঘটনার এ পরিসংখ্যান খুবই উদ্বেগজনক। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিআরটিএতে নিবন্ধিত মোটরযানের মধ্যে ৭১ শতাংশই মোটরসাইকেল। বাকি ২৯ শতাংশ প্রাইভেট কার, বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা, হিউম্যান হলারসহ অন্যান্য যানবাহন। রাজধানীতেই ১৫ লাখের বেশি মোটরসাইকেল চলাচল করছে। এর বাইরে আরো ২০ লাখ মোটরসাইকেল দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও গ্রামীণ সড়কে চলছে। এ ছাড়া নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলছে সড়ক-মহাসড়কে। দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির নজিরও তেমন নেই। যার ফলে চালকরা ইচ্ছামতো গাড়ি চালান। হাই রিস্ক নিয়ে ওভারটেক করেন। এ ছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণ না থাকা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ফুটপাতের বেহাল দশার কারণে মানুষ বাধ্য হয়ে মূল রাস্তায় হাঁটছেন এবং দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে হেলমেট ব্যবহারে অসচেতনতায় ছোটখাটো দুর্ঘটনায়ও প্রাণহানি ঘটছে। মোবাইল ফোন কানে রেখে গাড়ি চালানো দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ। যদিও এ কাজ থেকে বিরত রাখতে আইন আছে। কিন্তু সে আইনের ব্যবহার নেই, আমাদের সচেতনতাও নেই। এসব কারণে দুর্ঘটনা ক্রমবর্ধমান। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর অনুমোদন দিয়েছেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাস হলেও এখনো তা পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। দীর্ঘ এ সময়ে ঢাকা মহানগরীতে ট্রাফিক পুলিশ সীমিত আকারে আইনের প্রয়োগ করলেও সারাদেশে অনেকটা স্থবির অবস্থা রয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অসাধ্য বিষয় নয়। এজন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের কঠোর নজরদারি জরুরি। মোট দুর্ঘটনার প্রায় অর্ধেকই যখন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, তখন এর রাশ টেনে ধরতেই হবে। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারী যেই হোক না কেন, তার জরিমানা ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও সজাগ থাকা দরকার। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কেবল মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা ও ট্রাফিক সপ্তাহ পালন যথেষ্ট নয়। দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যানবাহন-সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতাও কাম্য। প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স ছাড়া কেউ যেন মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামতে না পারে, তা কঠোর নজরদারির মধ্যে আনতে হবে। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল বিক্রি বন্ধ করতে হবে। মোট কথা, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং আইন পালনে জনসাধারণের সদিচ্ছা ও সচেতনতার বিকল্প নেই।