উপজেলা নির্বাচন হোক সর্বজনীন অংশগ্রহণমূলক

25

 

ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ উপজেলা পরিষদসহ সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীক ছাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন সর্বজনীন ও অংশগ্রহণমূলক করতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীক থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলা যায়। ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে ভোটের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। আর ২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবার তিন উপজেলায় দলীয় প্রতীকে ভোট হয়। তবে ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদ বাদে বাকি দুটি পদ উন্মুক্ত রাখে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়ায় রেকর্ডসংখ্যক ৬২ আসনে বিজয়ী হয়েছে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এরপর নির্বাচন কমিশন উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করায় বিভিন্ন মহল থেকে দলীয় প্রতীকবিহীন নির্বাচনের দাবি ওঠে। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সভায় সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রতীক ছাড়া করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দেশে ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ১০ মার্চ। পাঁচ ধাপের ওই ভোট শেষ হয় গত জুন মাসে। আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শুরু হয় প্রথম সভার দিন থেকে। পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচিত পরিষদ দায়িত্ব পালন করে। মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত ৫ ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেয়ার ঘোষণা দেয়ায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। কারণ এ সিদ্ধান্তের পর দলের মনোনয়ন না পেলেও যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। আর সর্বস্তরের নেতাকর্মী নিজ নিজ পছন্দ অনুসারে যাকে খুশি ভোট দিতে পারবেন এবং তার পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। এ কারণে নির্বাচন বেশি অংশগ্রহণমূলক হবে এবং তীব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে বলে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এমন নির্বাচনে তৃণমূলে নেতৃত্ব গড়ে ওঠার একটি সাঁকো তৈরি হবে। স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করে স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। তৃণমূলে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং একই দল থেকে নির্বাচনে একাধিক প্রার্থীর সুযোগ পাওয়ার দরুন তৃণমূলে সঠিক নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। তবে শঙ্কাও রয়েছে। নিজেদের গ্রæপিং, হানাহানি বেড়ে যেতে পারে। বিগত নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা আমরা দেখেছি। এ বিষয়ে সতর্কতা জরুরি। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যাশা রাখছি। এই ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যেমন সর্বোচ্চ মনোযোগ দেবে তেমনি ক্ষমতাসীন দলেরও উচিত কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা।