শাহ্ মাশুক নাঈম, দোয়ারাবাজার
শীতের সকালে খড়-কুটো দিয়ে আগুন পোহানো গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য। মাঘের শীতে সবাই গরমের পোশাকে জবুথবু। সূর্য ওঠার সঙ্গে-সঙ্গে বাড়ির আঙিনায় সকাল সন্ধ্যায় আগুন পোহানোর দৃশ্য দেখা যায়। প্রচÐ শীতে আগুন পোহানোর দৃশ্যটি সবার কাছে পরিচিত, সেটা হলো শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে আগুন পোহানো। এমন চিত্র শুধু গ্রামেই দৃশ্যমান।
সোমবার সকালে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের হাছনবাহার গ্রামে আতর মিয়ার বাড়ির সামনে খড়-কুটো দিয়ে আগুন ধরিয়ে চারপাশে ৭-৮ জন মিলে আগুন পোহাতে দেখতে পাওয়া যায়। কেউ দাঁড়িয়ে কেউ বসে, যে, যেভাবে পারছেন আগুনের তাপ পোহাচ্ছেন। শৈত্যপ্রবাহে নাজেহাল অবস্থা সবার। হাড়কাঁপানো ঠাÐায় সবাই জবুথবু- শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার একই হাল। শীত থেকে বাঁচার সাধ্য কারও নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রচÐ ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৃদ্ধ, নারী-শিশুরা। শীতবস্ত্র ও খাবারের সংকটে হাজার-হাজার দরিদ্র মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। জেলাজুড়ে এক সপ্তাহ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন তারা। শীতের তীব্রতা ও ঘন কুয়াশায় সকালে কৃষকরা পেঁয়াজ, রসুন ও বিভিন্ন সবজিখেতের জমিতে পরিচর্যা করতে যেতে পারছেন না। যার জন্য পেঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজি পরিচর্যার অভাবে জমিতে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় দিন পার করছেন তারা।
জানতে চাইলে তারা বলেন, আগুন তাপানোর আয়োজনটা সাধারণত করে থাকে বাচ্চারাই। যদিও সে আয়োজন উপভোগ করে সবাই। তবে আগুন পোহাতে গিয়ে গাঁয়ের মানুষের দুর্ভোগও কম না। প্রায়ই সংবাদপত্রে সে খবর উঠে আসে। পুড়ে দগ্ধ, পুড়ে মৃত্যু পর্যন্ত হয় মানুষের। তারপরও শীতের প্রকোপ সহ্য করতে না পেরে মানুষ আগুন পোহায়। আমরা জানি যতক্ষণ আগুনের পাশে থাকবো ততক্ষণ শীত থেকে বাঁচা যাবে। শীতের সকাল সন্ধ্যায় আগুন পোহাতে আমরা অনেক আনন্দ পাই। এটা নতুন কিছু নয়! আগুন পোহানো এটা পুরাতন প্রথা। অন্য বছরের তোলনায় এ বছর শীত একটু বেশি। তাই এমনিভাবে প্রতিদিনই গ্রামের ছেলেরা একত্রিত হয়ে আগুন পোহাই।
কলেজ শিক্ষার্থী শাহ্ তামিম আহমদ তারেক কাজির বাজারকে বলেন, দুই দিন ধরে সূর্যের চোখ দেখা যাচ্ছে না। প্রচÐ শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গ্রামের মানুষ! প্রতিদিন বেড়েই চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন ক্লিনিকগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগীদের ভিড়। কোথাও কোথাও সরকারি উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা, আবু সালেহীন খান কাজিরবাজারকে বলেন, শীতে আগুন পোহাতে বশি দেখা যায় গ্রামাঞ্চলে। এটা নতুন কিছু নয় পূর্বে থেকেই। তবে আগুন পোহানো থেকে বিরত থাকাই ভালো। তীব্র শীতে শিশু-বৃদ্ধরা নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস, জ্বর, সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তীব্র শীতে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে দিনদিন।
