এমএম ইলিয়াছ আলী, শান্তিগঞ্জ
শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের ঘোড়াডুম্বুর গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত জুনু মিয়া (৩২) চিকিৎসাধীন’ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারাগেছেন।
মৃতের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে হৃদয় বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয় গ্রামব্যাপী। পুত্রশোকে মা আর স্বামী হারা স্ত্রী বার বার কান্নায় মোর্চা যাচ্ছেন। বাবাকে হারিয়ে কাতর হয়ে পড়েছে অবুঝ দুই শিশু কন্যা। বৃদ্ধা মা মনোয়ারা বেগমসহ অন্যান্য আত্মীয়ের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে ঘোড়াডুম্বুর গ্রামের শান্ত পরিবেশ।
শুক্রবার সকাল ১০টায় ঘোড়াডুম্বুর হাফিজিয়া দাখিল মাদরাসার মাঠে জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় নিহত জুনু মিয়াকে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লোকে লোকারন্য নিহত জুনু মিয়ার সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িতেই দুই শিশু কন্যা, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে থাকতেন জুনু। পেশায় একজন ট্রলি চালক ছিলেন। তার মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি। কাঁন্নায় ভেঙে পড়েছে তার অবুঝ দুই শিশু মেয়ে তান্নি আক্তার (৮) ও তাসরিন আক্তার (৩)।
জানা যায়, সংঘর্ষের ঘটনায় ঘোড়াডুম্বুর গ্রামের মৃত চমক আলী মেম্বারে ছেলে আদনান হোসেন, আলী হোসেন, মৃত রজন আলীর ছেলে হারুন রশিদ ও আবদুল গফরের ছেলে রিমনসহ ৪৭ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতনাম ৩৫ / ৪০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দাযের করেন কাজি আহাদ মিয়ার ছেলে কাজি আবদুল ওয়াদুদ। মামলায় বন্দুক দিয়ে হামলা করার অভিযোগ করেন তারা। সংঘর্ষের দিন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন জুনু মিয়া। এই গুলির কারণেই তিনি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন জুনু মিয়ার আত্মীয়স্বজন। নিহত জুনু মিয়া ছাড়াও তাদের পক্ষের ৩০ থেকে ৩৫ জন লোক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতাল ভর্তি আছেন বলে দাবি করেছেন মো. নূর মিয়া। একজন নিহত হওয়ায় নতুন করে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
নিহত জুনু মিয়ার স্ত্রী মাজেদা বেগম কাতর কণ্ঠে দাবি করেন, গুলি করে আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে হাজিবাড়ির গোষ্ঠীর লোকজন। আমি প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার চাই। খুনের বদলে খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই বলে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন জুনি মিয়ার মা মনোয়ারা বেগম।
মো. নূর মিয়া, আকিক মিয়া, নবী হোসেন ও আরজদ আলী বলেন, আদনান, আলী ও হারুন রশিদসহ একটি গোষ্ঠী আছে যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে অস্ত্র নিয়ে মারামারি করে, মার্ডার ঘটায়। এর আগে আরো মার্ডার করেছে তারা। ঘটনার দিন তারা বন্দুক বের করে আমাদের লোকদের উপর গুলি ছোঁড়েছে। এই গুলিতেই জুনু মিয়া নিহত হয়েছে। তার কপালে, মাথার একপাশে একাধিক গুলি আছে। আমরা হত্যা মামলা করবো। তারা দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান।
এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজি মুক্তাদির হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে ঘোড়াডুম্বুর গ্রামে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আমরা আসামীদের ধরতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। যদি অস্ত্র থেকে থাকে তাহলে তা উদ্ধার করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবো।
উল্লেখ্য শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের ঘোড়াডুম্বুর গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। গুরুতর আহতদের মধ্যে জুনু মিয়ার আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। মঙ্গলবার উন্নত চিকিৎসার জুনু মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে ওসমানীর ডাক্তাররা। সেখানে ভর্তি করার পর গত বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন জুনু মিয়া।