সিলেটে আরেকটি কূপে মিলতে পারে দৈনিক ৬০০ ব্যারেল তেল

47

কাজির বাজার ডেস্ক
সিলেটে আরও একটি ক‚পে তেল গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান। তিনি জানান, সিলেট-১০ নম্বর ক‚পের পাশেই নতুন আরও একটি ক‚প থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ত্রিমাত্রিক জরিপের (থ্রিডি সিসমিক সার্ভে) মাধ্যমে সেরকম ‘পজিটিভ’ ইঙ্গিত পেয়েছে জালালাবাদ গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে এমন আশা জাগানিয়া সংবাদ জানান তিনি।
এরআগে রোববার (১০ ডিসেম্বর) সিলেটের হরিপুর এলাকায় ১০ নম্বর ক‚প থেকে চার স্তরের তেল গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। চার স্তরের মধ্যে একটি স্তরে সম্পূর্ণ তেলের খনি রয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভ‚তাত্তি¡ক কারণে সিলেট অঞ্চলে অনেক খনিজ সম্পদ রয়েছে। গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানের জন্য সিলেটের এক হাজার ৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক জরিপের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে ৯০০ বর্গমিটার এলাকায় জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এ জরিপের রিপোর্টে নতুন কিছু ইঙ্গিত কিছু পেয়েছি। নতুন কিছু ক‚প খনন করতে পারবো।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘ত্রিমাত্রিক জরিপের রিপোর্ট অনুযায়ী সিলেট-১০ এর কাছাকাছি টুপিটিলায় গ্যাস-তেল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টুপিটিলায় তেল ও গ্যাস দুটোই অনুসন্ধানের জন্য একটি ক‚প খনন করা হবে। সেখান থেকে তেল ও গ্যাস দুটিই পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে এ ক‚পের খনন কাজ শুরু হবে।’
২০২৪ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘বর্তমানে সিলেটের চারটি গ্যাসক‚প থেকে প্রতিদিন ৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে নতুন করে আরও ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া ২০২৪ সালের মধ্যে ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সে আলোকে কাজ করছে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কর্তৃপক্ষ।’
মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘গত ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশে ১৫৭টি প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরমধ্যে সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের সাতটি প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। সাতটি প্রকল্পের মধ্যে একটি ছিল কৈলাসটিলা-২ ক‚প। উদ্বোধনের পর গত ২৩ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে। এছাড়া বিয়ানীজার-১ ক‚প থেকে প্রতিদিন ৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে। ২০২৪ সালের ফেব্রæয়ারির মধ্যে মধ্যে রশিদপুর-২ ক‚পের কাজ শেষ হলে সেখান থেকে প্রতিদিন ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এবং মার্চ থেকে কৈলাসটিলা-৮ ক‚প থেকে ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালে নতুন আর পাঁচটি ক‚প খননের অনুমোদন দিয়েছেন। সেগুলো খনন হলে প্রতিদিন আরও ৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হবে বলে জানান মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, আমরা এখন যে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছি সে প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন উচ্চচাপযুক্ত ক‚প নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা রয়েছে। তারপরও ক‚প খননে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই কাজ করছি। সিলেট গ্যাস জোনের মধ্যে যে পরিমাণ গ্যাস রয়েছে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সিলেটের এ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে বলে মনে করছেন তিনি।
সিলেটে আরও একটি ক‚পে মিলতে পারে তেল-গ্যাস১০ নম্বর ক‚পে দৈনিক মিলতে পারে ৫০০-৬০০ ব্যারেল তেল
সিলেট-১০ নম্বর ক‚প প্রসঙ্গে মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ ক‚পে চার স্তরের গ্যাস ও তেলের মজুত রয়েছে। একটি স্তরে শুধু তেল রয়েছে। কী পরিমাণ তেল রয়েছে তা নিশ্চিত হতে আরও অন্তত ৬-৮ মাস সময় লাগবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে গ্যাস উত্তোলন করবো। এরপর তেল উত্তোলন শুরু হবে। আমাদের যে সক্ষমতা রয়েছে তার মাধ্যমে তেল-গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। তবে প্রয়োজন হলে বিদেশি কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হবে।’
দেশে ৩৭ বছর পর আবারও সিলেটের হরিপুরে ভ‚গর্ভে তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। রোববার (১০ ডিসেম্বর) বিজয়ের মাসে জাতিকে এ খবরটি জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এরআগে সবশেষ ১৯৮৬ সালে হরিপুর এলাকাতেই মিলেছিল তেলের সন্ধান।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখান থেকে দৈনিক ৫০০-৬০০ ব্যারেল হারে তেল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন এ ক‚পটিতে ৮-১০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ও প্রায় ২০০-৩০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্তত ২০ বছর এ সুফল মিলবে বলে জানান তারা।