কাজির বাজার ডেস্ক
করোনাকালে প্রবাস থেকে দেশে ফেরা দুই লাখ কর্মীকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে ২৭০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেবে সরকার। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় রিকভারি অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইনফরমাল সেক্টর এমপ্লয়মেন্ট (আরএআইএসই বা রেইজ) শীর্ষক এক প্রকল্পের মাধ্যমে এ প্রণোদনা দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ ভবনে প্রকল্পের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এ সভার আয়োজন করে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। তিনি বলেন, প্রতিবছর কতজন কর্মী প্রবাসে যান সেই হিসাব আমাদের আছে। কিন্তু কতজন ফেরত আসেন, সেই তথ্য আমাদের নেই। যাঁরা ফেরত আসেন, তাঁদের অনেকেই জানেন না, দেশে ফিরে কীভাবে কী করবেন। কেউ হয়তো পুনরায় প্রবাসে যেতে চান। কেউ আবার উদ্যোক্তা হতে চান। কারও আবার কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। সেসব বিষয়ে তাঁদের সহযোগিতা করাই রেইজ প্রকল্পের লক্ষ্য। মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘শুধু প্রণোদনা দেওয়া নয়, দক্ষতা উন্নয়নেও সহযোগিতা করবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রবাসফেরতদের কেউ ঋণ চাইলে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে দেব। কেউ উদ্যোক্তা হতে চাইলেও আমরা সহযোগিতা করব।’
সভায় জানানো হয়, করোনার কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে কাজ হারিয়ে ২০২০ সালে প্রায় ৫ লাখ কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। প্রত্যাগত অধিকাংশ কর্মী কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্থকষ্টসহ সমাজে নানা ধরনের প্রতিক‚ল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বিপুলসংখ্যক এসব কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হলে সমাজে অস্থিরতাসহ নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তাদের পুনঃএকত্রীকরণের (রি-ইন্টিগ্রেশন) লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় রেইজ প্রকল্পের আওতায় বিদেশফেরত কর্মীদের পুনর্বাসন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা হবে। সহযোগিতার মধ্যে দুই লাখ কর্মীকে এককালীন ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে প্রণোদনা দেওয়া হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই এ প্রণোদনা দেওয়া হবে।
সভায় জানানো হয়, যেসব কর্মী বিদেশে যাওয়ার পর দক্ষতা অর্জন করেছেন, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক সনদ নেই এসব কর্মীকে রিকগনিশন অব প্রিয়র লার্নিং (আরপিএল) এর আওতায় সনদ দেওয়া হবে, যা তাঁদের কর্মসংস্থানে সহায়ক হবে। কর্মীদের চাহিদা অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা পাওয়াতে সহযোগিতা করা হবে। যাতে তাঁরা সমাজে নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রশিক্ষণ/আর্থিক কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন। এ লক্ষ্যে রেইজ প্রকল্প বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো প্রত্যাগত কর্মীদের একটি তথ্য সমৃদ্ধ ডাটাবেজ তৈরি হবে। গত ৪ মাসে এই প্রকল্পে ৫৯ হাজার কর্মী নিবন্ধন করেছেন।
রেইজ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ৩০ জুলাই দেশের ৩০টি জেলায় ওয়েলফেয়ার সেন্টার উদ্বোধন করা হয়। যার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ৩০টি সেন্টারের মাধ্যমে সারা দেশে প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। সেন্টারের কার্যক্রম বাস্তবায়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইওএম বাংলাদেশ এবং সাব কনসালট্যান্ট হিসেবে আরও সাতটি বেসরকারি সংস্থা (রামরু, ওকাপ, ব্র্যাক, প্রত্যাশী, বিএসএসকে, ওয়্যারবি, কেএনইউএস) সহায়তা করছে।
সভায় প্রকল্প পরিচালক ও সরকারের যুগ্ম সচিব সৌমেন্দ্রনাথ সাহাসহ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।