দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী। গতবার পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। এবার গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪। পরীক্ষায় কৃতকার্য সব শিক্ষার্থীকে আমাদের অভিনন্দন। তাদের এ অনন্য কৃতিত্ব পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের জন্য অশেষ আনন্দ-উৎসবের কারণ হয়ে উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সঙ্গত কারণেই গর্বিত। সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের শ্রম ও সাধনা সুফল দিয়েছে। শিক্ষাজীবনের পরবর্তী ধাপগুলোতে ভালো ফলের এ ধারা বজায় রাখবে- এটাই কাম্য। কোভিড মহামারির পর প্রথমবারের মতো পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাসের হারেও এগিয়ে ছাত্রীরা, তাদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৫৭। অন্যদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৭৬। এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেয়া ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২ হাজার ৩৬৫ শিক্ষার্থী। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। সেই হিসাবে এ বছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৮৩ হাজার ৯১৭ জন। যদিও এ বছর গত বছরের তুলনায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ জন বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮৭ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৫৫ জন। এর আগে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষা কোভিড মহামারি আর বন্যার কারণে বিলম্বিত হয়েছিল। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া সেই পরীক্ষায় ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। এই হিসাবে ২০২৩ সালের পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। এরপরও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়টি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষাগুলোয় প্রতিযোগিতা তীব্রতর হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ফলে সবাই ভর্তি হতে পারবেন কিনা, সে প্রশ্ন উঠেছে। এ সমস্যার আংশিক সমাধান হতে পারে, যদি জিপিএ-৪ বা তার নিচে স্কোর পেয়ে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলো হতাশ না হয়ে কারিগরি শিক্ষার প্রতি ছেলেমেয়েদের উৎসাহিত করতে পারে। শিক্ষার্থীদের জীবনে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার ফলাফল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পাসের হার বাড়ানোর চেয়েও বেশি জরুরি শিক্ষার মান বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি কতটা হচ্ছে তার যথাযথ নিরীক্ষা হওয়া দরকার। কারণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের একটি বড় অংশ পরবর্তী ধাপে পৌঁছানোর আগেই ঝরে পড়ছে। তবে এটা স্বীকার করতে হবে, বর্তমানে পরীক্ষায় নকলের প্রবণতা কমে গেছে- এটা ঠিক। তবে এখনো দেশে নোট-গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য, কোচিং বাণিজ্য ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংস্কৃতি বন্ধ হয়নি। প্রশ্নপত্র ফাঁস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এগুলো শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ বিষয়গুলোতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আরো দৃষ্টির প্রয়োজন।